লেইছিন

       লেইছিনের অন্য নাম হচ্ছে “লেইহু” । এটা হচ্ছে বিংশ শতাব্দির বিশের দশকে উদ্ভুত এক ধরণের তারা টানা বাদ্যযন্ত্র ।

   চীনের লোক শিল্পী ওয়াং তিয়ানইয়ু চুই হুর ভিতিতে লেইছিন আবিষ্কার করেন । ওয়াং তিয়ান ইয়ু শান তুং প্রদেশের হুন ছেন জেলায় জন্মগ্রহন করেন । তাঁর পরিবার গরীব ছিল । ছোটবেলায় বসন্তেআক্রন্ত হয়ে তিনি অন্ধ হয়ে যান । তিনি শিহ্মকদের কাছ থেকে চুই হু প্রভৃতিলোক বাদ্যযন্ত্র বাজাতে শিখেন । তাঁর মেধা আর কঠোর অধ্যয়ণের ফলে তিনি চুইহু দিয়ে কিছু লোক সংগীত আর স্থানীয় অপেরার অনুচ্ছেদ বাজাতে পারেন। বিংশ শতাব্দির বিশের দশকের শেষ দিকে ওয়াং তিয়ানইয়ু সাহসের সংগে চুইহুকে সংস্কার করেন । তিনি চুইহুর দণ্ডকে লমবা করে দেন , ক্যানিস্টারকে বড় করে দেন এবং ক্যানিস্টারে সাপের চামড়া ঢেকে রাখেন । এইভাবে চুইহুর চেয়ে বিরাট আওয়াজসম্পন্ন, প্রশস্ত আর শ্রোতিমধুর সুরসম্পনন নতুন বাদ্যযন্ত্র তাঁর হাতে আবিষ্কৃত হয় । ১৯৫৩ সালে এই বাদ্যযন্ত্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে নাম দেয়া হয় “লেইছিন” ।

       লেইছিন দন্ড , ক্যানিন্টার , মাথা , টানিং পেজ আর ধনুক নিয়ে গঠিত । দণ্ড, মাথা আর টানিং পেজ সবই কঠিন কাঠ দিয়ে তৈরি । লেইছিনের মাথা কোদালের মত । টানিং পেজে খোদাই আছে ছবি । টানিং পেজের শীর্ষদেশেহাড়ের সজ্জা আছে । লেইছিনের ক্যানিস্টার খাটো । তা পাতলা তামার পাত দিয়ে তৈরি । তার ধনুক আরহুর ধনুকের চেয়ে লম্বা এবং তার উপর বাঁধা ঘোড়ার লেজের লোমো প্রশস্ত। লেইছিন দুই ধনণের আছে । বড় লেইছিনের তারা ইস্পাত দিয়ে তৈরি এবং তার দৈর্ঘ্য ১১০ সেন্টিমিটার । ছোট লেইছিনের তারা রেশমের সুতা দিয়ে তৈরি এবং তার দৈঘ্য৯০ সেন্টিমিটার। সাধারণত লেইছিন ৪ বা ৫ মাত্রা দিয়ে সুর নির্ধারণ করে থাকে । বড় লেইছিনের সুর নির্ধারণ একক নয় । সাধারণত শিল্পীদের পছন্দ অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয় এবং সুরের হ্মেত্র সাড়ে ৩ অষ্টক ধ্বনিতে উন্নীত হতে পারে । ছোট লেইছিনের সুর নির্ধারণ এবং সুরের হ্মেত্র বড় লেইছিনের মতই । কেবল কণ্ঠ এক অষ্টক ধ্বনি বেশি ।

       অন্যান্য তারা টানা বাদ্যযন্ত্রের মত শিল্পীরা বসে বসে লেইছিন বাজান । তারা ক্যানিস্টারকে বাম পায় রাখেন , বাম হাত দিয়ে তারা চেপে ধরেন এবং ডান হাত দিয়ে ধনুক ধরে দুটো তারার মধ্যে তারা টানেন । লেইছিনের অংগুলি চাপার পদ্ধতি আর বাজানোর কলাকৌশলের বহু বৈশিষ্ট্য আছে । যেমন ধনুকের প্রতি শিল্পীদের নিয়ন্ত্রণ ক্রমে সবল হোয়া, ক্রমে দুর্বল হোয়া , দুর্বল থেকে হঠাত সবল হোয়া , সবল থেকে হঠাত দুর্বল হয়া এবং বিরাট মাত্রায় ধনুক ধরার পরিবর্তনহয়া ইত্যাদি । লেইছিনের অংগুলি চাপার পদ্ধতি আর হুর কাছাকাছি । তবে লেইছিন বাজানোর সময়ে অধিকাংশই তর্জনী আর অনামিকা দিয়ে তারা চেপে ধরেন ।

       লোইছিনের প্রকাশ-শক্তি অত্যন্ত সমৃদ্ধ । তার সুরের হ্মেত্র ব্যাপক , আওয়াজ বিরাট এবং সুর মসৃণ আর নমনীয় । লেইছিন একক বাজানো , সমবেত বাজানো এবং দ্বৈতবাজানোর ভূমিকা পালন করতে পারে । তা মানুষের আওয়াজ এবং বিভিন্ন অপেরার গান অনুকরণ করতে পারে এবং বিভিন্ন জন্তুর ডাক আর শেং, কুয়ান , সোওনা, চিংহু , আর হু ঢাক ও ঢোলের মত তারা টানা এবং মারানো বাদ্যযন্ত্রগুলোর আওয়াজ প্রকাশ করতে পারে ।

   [ সুরের উপভোগ ]《আফানথির গান 》