চিয়াইয়ে ছিন হচ্ছে কোরিয় জাতির একটি প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র। উত্তর-পূর্ব চীনের চিলিন প্রদেশের ইয়ানপিয়ান কোরিয় জাতির স্বায়তশাসিত বিভাগে এর প্রচলন হয় । চিয়াইয়ে ছিনের আকার হান জাতির প্রাচীন চেংয়ের মত । এই দুটো বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে সুগভীর যোগসূত্র রয়েছে । এঐতিহাসিক পুস্তকে লিপিবদ্ধ রয়েছে যে , খৃষ্ট ৫০০ অব্দির কাছাকাছি সময়ে কোরিয়ার প্রাচীন রাজ্য চিয়াইয়ে রাজ্যের রাজা প্রাচীন চেং অনুসারে তারা টানার এক রকম বাদ্যযন্ত্র তৈরি করেন । কোরিয় জাতির জনগণ তাকে চিয়াইয়ে ছিন বলে অভিহিত করেন ।
চিয়াইয়ে ছিনের প্রচলন আজ পর্যন্ত দেড় হাজার বছর পুরনো । প্রাচীনকালে চিয়াইয়ে ছিনের গা আস্ত কাঠে খোদাই করা হয় । চিয়াইয়ে ছিনের লেজ ছাগলের শিংয়ের মত । মেঝে না থাকায় চিয়াইয়ে ছিনের আওয়াজ নীচু এবং প্রকাশ-শক্তি দুর্বল । কয়েক শতাব্দির প্রচলন আর সংস্কারের মাধ্যমে কোরিয় জাতির জনগণ অনান্য জাতির অনুরূপ বাদ্যযন্ত্রের উত্কর্ষ আহরণ করে শেষ পর্যন্ত উজ্জল জাতীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আর উত্কৃষ্ট চিয়াইয়ে ছিন তৈরি করতে পেরেছেন । আধুনিক চিয়াইয়ে ছিনের আওয়াজ উন্নত হয়েছে এবং সুরের মান আর সমৃদ্ধ হয়েছে । কোরিয় জাতির জনগণ চিয়াইয়ে ছিন তৈরির কাঁচামালের নির্বাচনের উপর বিশেষ নজর দেন এবং ছিনের বিভিন্ন অংশ অনুযায়ী ভিন্ন উত্কৃষ্ট কাঠ ব্যবহার করেন ।
নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর চিয়াইয়ে ছিনের নতুন সংস্কার সাধন করা হয় । বাদ্যযন্ত্রের নির্মাতারা পর পর গবেষণার ভিত্তিতে ১৮ তারার চিয়াইয়ে ছিন আর ২১ তারার চিয়াইয়ে ছিন তৈরি করেছেন । ২১ তারার চিয়ইয়ে ছিন তার অনুনাদী বাক্সকে বাড়িয়ে দিয়েছে । তাছাড়া কোরিয় জাতির বিশেষ নাইলনের তারা আর ইস্পাতের তারা ব্যবহার করা হয়েছে । এই ধরণের চিয়াইয়ে ছিনের আওয়াজ উদাত্ত আর সুর শ্রোতিমধুর ।
চিয়াইয়ে ছিনের আওয়াজ যেমন হৃদয়মাতানো , তেমনিবাজানোর ভাবভংগীও সুন্দর । চিয়াইয়ে ছিন বাজানোর সময়ে শিল্পীরা বাম হাত দিয়ে তারার উপর চাপ দেন এবং ডান হাত দিয়ে সুর নির্ধারণ করেন । চিয়াইয়ে ছিন দৈত সুর , সমবেত সুর এবং সহজ বহুমুখী সংগীত বাজাতে পারে । চিয়াইয়ে ছিনের প্রকাশ-শক্তি অত্যন্ত সমৃদ্ধ ।শিল্পীদের সুনিপুণ কৌশলের মাধ্যমে চিয়াইয়ে ছিন মানুষের আনন্দ , রোষ আর বেদনার মত ভিন্ন ভাব প্রকাশ করা যায় এবং মহিমাময় আর প্রাণবন্ত দৃশ্য বাজানো যায় । বিশেষ করে হাল্কা আর প্রাণচঞল সংগীত বাজানো যায় । অতীতে পুরুষেরা বেশি করে চিয়াইয়ে ছিন বাজাতেন । পরে এই বাদ্যযন্ত্র ক্রমে ক্রমে কোরিয় জাতির সবচেয়ে প্রধান বাদ্যযন্ত্রে পরিণত হয়। অধিক থেকে অধিকতর মেয়েও চিয়াইয়ে ছিন বাজাতে শুরু করেছেন ।
চিয়াইয়ে ছিন দিয়ে এককভাবে বাজানো যায় , আবার সমবেতভাবেও বাজানো যায় । প্রধনত সমবেতভাবে তা বাজানো হয় এবং জাতীয় বাদ্যযন্ত্র দলে ব্যবহার করা হয় । কোরিয় জাতির জনগণের মধ্যে রয়েছে এক রকম গান করার উপায় । তার নাম “চিয়াইয়ে ছিন দিয়ে গান করা । অভিনয়ের সময়ে দশ বার জন জাতীয় পোষাক পরা কোরিয় জাতির মেয়েরা মঞে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে চিয়াইয়ে ছিনের শেষাংশ মাটিতে রেখে ছিনের প্রথমাংশ ডানের পায় রেখে বাম হাত দিয়ে তারা চেপে এবং ডান হাত দিয়ে সুর নির্ধারণ করে চিয়াইয়ে ছিন বাজানোর সংগে সংগে শ্রোতিমধুর গান করেন ।
[চিয়াইয়ে ছিনের সুরের উপভোগ]: 《আলিলাং》
|