লিউছিন

       লিউছিন পিফার মত তারা টানার এক রকম বাদ্যযন্ত্র। লিউছিন উইলো গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি হয় এবং এর আকার উইলোর পাতার মত বলে তাকে লিউছিন বা “লিউইয়েছিন” বলে ডাকা হয়। লিউছিন আকার আর গঠনের দিক থেকে ফিফার খুবী কাছাকাছি। গোড়ার দিকের লিউছিনের গঠন অত্যন্ত সহজ। যেহেতু লিউছিনের আকার খুবী সাধারণ, সেহেতু চীনের জনসাধারণ স্নেহের সঙ্গে তাকে “দেশীয় পিফা” বলে অভিহিত করে থাকেন। এই দেশীয় পিফা দীর্ঘকাল ধরে চীনের শানতুং, আনহুয়ে আর চিয়াংসু প্রদেশের জনসাধারণের মধ্যে প্রচলিত হয়ে আসছে এবং স্থানীয় অপেরার জন্যে সহযোগী বাদ্যযন্ত্র হিসেবে বাজানো হয়।  

   আকার আর গঠনের দিক থেকে লিউছিন আর পিফার মধ্যে মিল আছে। তা ছাড়া এই দুটো বাদ্যযন্ত্র বাজানোর উপায়ও একই। দফাত হচ্ছে এই যে, লিউছিন বাজানোর সময়ে প্লেকট্রাম দিয়ে তারা টানতে হয়। লিউছিন বাজানোর সময়ে শিল্পীদের সোজায় বসতে হবে। তারপর তারা লিউছিনকে লম্বালম্বীভাবে বুকের সামনে রাখেন, বাম হাত দিয়ে লিউছিন তুলে ধরেন আর বাম হাতের অংগুলি দিয়ে তারা টানেন এবং ডান হাতের বৃদ্ধাংগুলি আর তর্জনী দিয়ে প্লেকট্রাম ধরে তারা টানেন। বাজানোর ভংগী অত্যন্ত মার্জিত।  

  ১৯৫৮ সালের শেষ দিকে ওয়াং হুয়ে রান বাদ্যযন্ত্র কারখানার ওসদাতদের সঙ্গে মিলে সাফল্যের সঙ্গে প্রথম যুগের নতুন লিউছিন-৩ তারার লিউছিন তৈরি করেন। এই ধরণের লিউছিনে আগেকার ২ তারা থেকে ৩ তারায় পরিণত হয়। আওয়াজের স্তম্ভও ৭ থেকে ২৪টিতে বেড়ে যায়। দেশীয় পিফার তুলনায় নতুন লিউছিনের আওয়াজের ক্ষেত্র আরো ব্যাপক , সুরের পরিবর্তনও সুবিধাজনক এবং আওয়াজের প্রকৃতি অস্পষ্টতা থেকে উদাত্ততায় রূপান্তরিত হয় । সত্তরের দশকে ওয়াং হুয়ে রান আবার দ্বিতীয় যুগের নতুন লিউলিন-৪ তারার উচ্চকন্ঠের লিউছিন তৈরি করেন। এই নতুন লিউছিনের তারা আর আওয়াজের স্তম্ভের সংখ্যা আরো বেড়েছে। তবে এর সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হচ্ছে এই যে, ভূট্টার দন্ডের বদলে বাঁশের দন্ড ব্যবহার করা হয় এবং রেশমের তারা বদলে ইস্তপাতের তারা ব্যবহার করা হয়। এই সব সংস্কার বিরাটভাবে লিউছিনের বিভিন্ন দিকের সামর্থ্য উন্নত করেছে এবং তার প্রকাশ শক্তি আরো সমৃদ্ধ করে তুলেছে। এই সংস্কারের ফলে সহযোগী বাদ্যযন্ত্র হিসেবে লিউছিনের ২ শোরও বেশি বছরের ইতিহাসের অবসান ঘটে এবং একক বাজানোর বাদ্যযন্ত্র উন্নয়নের পথ সুগম হয় ।  

  আজ লিউছিন চীনের সংগীত অভিনয়ের হ্মেত্রে নানা রকম ভূমিকা পালন করছে । চীনের জাতীয় বাদ্যযন্ত্র দলে লিউছিন হচ্ছে তারা টানা বাদ্যযন্ত্র গ্রুপের উচ্চকণ্ঠের বাদ্যযন্ত্র । এর বিশষ ধরণের আওয়াজ রয়েছে । লিউছিন দিয়ে প্রায় উচ্চকণ্ঠ এলাকার প্রধান সংগীত বাজানো হয় । যেহেতু তার আওয়াজ সহজে অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রের দ্বারা মুছে যায় না , সেহেতু লিউছিন উচ্চ নৈপুণ্যসম্পন্অ ন উজ্জল অনুচ্চদো বাজিয়ে থাকে । তাছাড়া লিউছিনের আওয়াজ অনেকটা পশ্চিমা বাদ্যযন্ত্র মান্দোলিনের মত বলে পশ্চিমা বাদ্যযন্ত্র দলের সংগে সহযোগিতা করলে এর অনন্য মজা থাকে ।  

  [ লিউছিনের সুর উপভোগ ]《শিমুল তুলা ফুল ফুলেছে 》