চীনে একটি প্রবাদ আছে: ‘ পাঁচটি নাম-করা পাহাড় দেখতে ফিরে আসার পর সাধারণ পাহাড় আর দেখার ইচ্ছা নেই, হুয়াংসেন পাহাড় দেখতে ফিরে আসার পর এ পাঁচটি নাম-করা পাহাড় আর দেখার ইচ্ছা নেই’। তার অর্থ এই যে, হুওয়াসেন পাহাড় দেখতে যাওয়ার আগে যারা চীনের পাঁচটি নাম-করা পাহাড়( থাইসেন পাহাড়,হুয়াসেন পাহাড় , সংসেন পাহাড়, হ্যানসেন পাহাড়, হানসেন পাহাড় ) দেখতে ফিরে এসেছেন তাদের ধারণা হল পৃথিবীতে অন্যান্য পাহাড় আর দেখার প্রয়োজন নেই। তবে যদি কেউ এর আগেহুওয়াসেন পাহাড় দেখেছেন তাহলে চীনের উল্লেখিত পাঁচটি নাম-করা পাহাড় না দেখেও কোনো ক্ষতি নেই। এই প্রবাদ থেকে বুঝা যায় হুওয়াসেন পাহাড়ের দৃশ্য অদ্বিতীয় আর চিত্তাকষর্ক।
হুওয়াংসেন পাহাড় চীনের মধ্য-দক্ষিণাংশের হুওয়াংসেন দশর্নীয়স্থানে অবস্থিত। তার আয়তন প্রায় ১২০০ বর্গকিলোমিটার।এই উচু পাহাড়ের উপত্যকা গভীর। ওখানের আবহাওয়া সহজেই পরিবতির্ত হয়। ঘন কুওয়াশা , আর্দ্রতাপূর্ণ আয়ু এবং বেশী বৃষ্টিপাত ওখানকার আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্য।
(
ছবিতে হুওয়াসেন পাহাড়ের অতিথি স্বাগত পাইন গাছ
)
চীনের বিভিন্ন নাম-করা পাহাড়ের সৌন্দর্য হুওয়াসেন পাহাড়ে দেখা যায়। পাহাড়ের ‘চারটি বৈশিষ্ট্য’ দেশ-বিদেশে বিখ্যাত। প্রথম হল, অদ্ভুত পাইন গাছ: পাইন গাছ হল হুওয়াংসেন পাহাড়ের সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক দৃশ্য। হুওয়াংসেন পাহাড়ে অজস্র শতাধিক বছরের পাইন গাছ আছে। এ সব পাইন গাছের শিকড় পাথরের মাঝখানে ছড়িয়েপড়ে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এ সব গাছ দেখে বুঝা যায় তাদের জীবনের শক্তি কত প্রবল। ইউয়েইয়ু শৃংগের নিচে অতিথি স্বাগত জানানো পাইন গাছ হুওয়াংসেন পাহাড়ের প্রতীক। দ্বিতীয় হল, অদভুত পাথর: হুওয়াংসেন পাহাড়ে সারি সারি শৃংগ আছে। পাহাড়ের যে কোনো জায়গায় অদ্ভুত পাথর দেখা যায়। তৃতীয় হল,মেঘের সাগর: পাহাড়ের আয়ু বৈচিত্রময় বলে উপত্যকা কুওয়াশায় আচ্ছন্ন। দিনে কুওয়াশা এক সময় দেখা দেয় এক সময় অদৃশ্য হয়ে যায়। এই দৃশ্য দেখে লোকেরা খুব মনোরম লাগে। চতুর্থ হল নাতিশীতোষ্ণ ঝরনা :
হুওয়াংসেন পাহাড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশের শর্ত জটিল , প্রাকৃতিক পরিবেশের ব্যবস্থা স্থিতিশীল আর ভারসাম্য। জলবায়ুর প্রভাবে উদ্ভিদের প্রজাতি অনেক। হুওয়াংসেন পাহাড়ে এখনও একটি জলাভূমি আর তৃণভূমি আছে। পাহাড়ের শতকরা ৫৬ ভাগ বনাচ্ছন্ন, শতকরা ৮৩ ভাগ ঘাসাচ্ছন্ন । হুওয়াসেন পাহাড়ে চাও চাষ করা হয় ‘ হুওয়াংসেন মাওচিয়েন’ খুব বিখ্যাত চা। ‘ হুওয়াংসেন লিনসি ‘ দেশ-বিদেশ বিখ্যাত । এটা চীনের এক ধরনের ঐতিহ্যিক ওষুধ।হুওয়াংসেন পাহড়ে অগণ্য মূল্যবান গাছ আছে। এ সব গাছের মধ্যে কোন কোন দুষ্প্রপ্য। হুওয়াংসেন পাইন গাছ এ সব গাছের মধ্যে বসচেয়ে বিখ্যাত। তা ছাড়া, এখানে অনেক দুষ্প্রাপ্য প্রাণী আছে। হুওয়াংসেন পাহাড় এ সব প্রাণীর থাকা আর প্রসবের আদর্শ জায়গা।
(ছবিতে হুওয়াংসেন পাহাড়ের মেঘের সাগর)
প্রাকৃতিক দৃশ্য ছাড়া, হুওয়াংসেন পাহাড়ের সংস্কৃতি প্রগাঢ়। ইতিহাসে অনেক কবি , চিত্রশিল্পী আর অন্যান্য শিল্পী হুওয়াংসেন পাহাড়ের চিত্তাকর্ষক দৃশ্যের জন্য মুগ্ধ হয়ে অগণ্য শিল্পকাজ সৃষ্টি করেন। তাঁরা কবিতা আর চিত্রাঙ্কন দিয়েবিভিন্ন দিক থেকে হুওয়াংসেন পাহাড়রের সৌন্দর্যের প্রশংসা করেন। চীনের বিভিন্ন যুগের কবিরা তাঁদের কবিতায় হুওয়াংসেন পাহাড়রের প্রশংসা করেন। তাঁরা হলে লি বাই, চিয়াডাও, ফ্যান ছেন ডা, সি ঠাও, গন জি জেন প্রমুখ । এখন এ প্রসংগে ২০ হাজারেরও বেশী কবি পাওয়া যায়।
শিল্পকলা ক্ষেত্রে হুওয়াংসেন পাহাড় নিয়ে আঁকা চিত্র কম নয়। এটা হল হুওয়াংসেন পাহাড় সংস্কৃতির একটি চকচকে মুক্তা । চিত্রশিল্পীরা অনবরত হুওয়াংসেন পাহাড় থেকে নিজেদের শিল্পকলা ভান্ডাকে সম্মৃদ্ধ করেছেন।তাঁদের প্রকৌশল, চিত্রাঙ্কনের শৈলী চিত্র মঞ্চে অদ্বিতীয়। আধুনিক আলোকচিত্রশিল্পীরা হুওয়াংসেন পাহাড়কে তাদের কাজ সৃজনের অফুরন্ত উত্স হিসেবে মনে করেন। তা ছাড়া, কিংবদন্তীতে বলা হয়, চীনা জাতির পূর্বপরুষ চিয়েনইউয়েন সম্রাট একদা হুওয়াংসেন পাহাড়রে চর্চা করতেন( ম্যাডিট্যাশন করতেন)। ম্যাডিট্যাশন করতে করতে তিনি অবশেষে দেবতা হন। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে এই কিংবাদন্তী জনধারণের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এখনও এই কিংবদন্তীর সঙ্গে সম্পকীর্ত শৃংগ বেশ কয়েকটি আছে। যেমন শিয়েন ইউয়েন শৃংগ, হুছিও শৃংগ আর লিয়েদেন শৃংগ। সুতরাং চীনের দাও ধর্মের ইতিহাসে হুওয়াংসেন পাহাড়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে।
বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য আর সাংস্কৃতিক উতসের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯০ সালে হুওয়াংসেন পাহাড় বিশ্ব প্রাকৃতিক আর সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের তালিকায় অন্তভুর্ক্ত হয়। বিশ্ব উত্তরাধিকার কমিশনের বণর্নায় বলা হয়, চীনের সাহিত্য আর শিল্পকলা ইতিহাসে হুওয়াংসেন পাহাড় ব্যাপক প্রশংসা অজর্ন করেছে। দেশ-বিদেশী পযর্টক, কবি, চিত্রশিল্পী, চলচ্ছিত্রশিল্পীদের পক্ষে হুওয়াংসেন পাহাড়ের আকর্ষণ দীর্ঘস্থায়ী থাকবে।
|