লুংমেন শিখু
 

       ইয়েনগা গুহাচীনের উত্তরাঞ্চলের শানসি প্রদেশের তাডং শহরের পশ্চিম দিকে ১৬ কিলোমিটার দূরের উচো পাহাড়ের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত। উত্তর উয়েররাজবংশের শিংআন রাজা ক্ষমতাসীন হওয়ার দ্বিতীয় বছরে (৪৫৩ খৃষ্টাব্দ)গুহার খনন কাজ শুরু হয়, উত্তর উয়েনের রাজধানী লোইয়াংয়ে স্থনান্তরিত হওয়ার আগে (৪৯৪ খৃষ্টাব্দ) গুহার বেশীর ভাগ নিমার্ন কাজসম্পন্ন হয়। গুহার ভিতরের বৌদ্ধ মূতিগুলোর নির্মানের প্রকল্প জেনগুয়াং সম্রাটের শাসনকালে (৫২০ খৃস্টাব্দ থেকে ৫২৫ খৃষ্টাব্দ পযর্ন্ত)সম্পন্ন হয়।পাহাড়ের পাদদেশে এই গুহার খনন করা হয়।পূর্ব-পশ্চিম বিস্তীর্ণ এক কিলোমিটার দীর্ঘ এই এলাকায় রয়েছে৪৫টি প্রধান গুহা , ২৫২টি ছোট-বড়কুলুংগি , ৫১ হাজার পাথরেরতৈরী মূর্তি যাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ১৭ মিটার লম্ব, সবচেয়ে ছোট মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার।গুহাতে সংরক্ষিত সব বৌদ্ধ, উড়ায়ন এ্যাপসারসের ভাবমূর্তি দেখতে অত্যন্ত প্রাণবন্ত, পাথরের স্তম্ভলোতে যেসব ভাস্কর্য খোদাই করা হয়েছে সে সব ভাস্কর্য অত্যন্ত সুক্ষ্ম।ছিং আর হ্যান(খৃষ্টপূর্ব ২২১ সাল থেকে ২২০ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত) রাজবংশ সময়কালের বাস্তবতার কর্মশিল্পের শ্রেষ্ঠতা এবং সুই আরথাং (৫৮১ খৃষ্টাব্দ থেকে ৯০৭ খৃষ্টাব্দ পযর্ন্ত) রাজবংশ সময়কালের রোমেন্টিক আমেজএ সব ভাষ্কর্যে প্রতিফলিত হয়। গানসু প্রদেশের তুনহুয়াং মোকাও গুহা মন্দির , হোল্যান প্রদেশের লংমেন গুহা এবং ইয়েনগান গুহাকে “চীনের তিনটি গুহার সমাবেশ” বলেগণ্য করা হয়।তা ছাড়া, ইয়েনগান গুহা বিশ্ববিখ্যাত গুহার শিল্পকলার ধনভান্ডারগুলোর অন্যতম বলে আখ্যায়িত হয় । 

   ইয়েনগান গুহাতে খোদাই-করাবৌদ্ধ মূর্তিগুলো সুমহান। তা ছাড়া, গুহাতে সম্মৃদ্ধ আর বৈচিত্রময় বিষয়বস্তু রয়েছে। পঞ্চম শতাব্দীতে এই গুহাকেচীনেরশ্রেষ্ঠ পাথর ভাষ্কর্য বলে আখ্যায়িত হয় এবং চীনের প্রাচীন ভার্ষ্কয কর্মশিল্পের ধনভান্ডার বলে গণ্য করা হয়। এই গুহা বিভিন্ন আমলে খনন করা হয়।কিন্তু মোটামূটি তিনটি সময়পর্বেভাগ করা যায় । ভিন্ন সময়পর্বে গুহার মূর্তির তৈরী রীতিনীতি ভিন্ন রকমের ।প্রথম সময়পূর্বে সে সব গুহা খনন করা হয় সে সব গুহা আকারের দিক থেকে সুমহান এবং রীতিনীতির দিক থেকে পশ্চিম চীনের রসে পরিপূর্ণ্।মধ্য সময়পর্বে যে সবগুহা খনন করা হয় সে সব গুহার ভাষ্কর্য সূক্ষ্ম। 

   ইয়েনগান গুহা হচ্ছে গুহারশিল্পকলা চীনের শৈলীর শিল্পকলার সুত্রপাত।মধ্য সময়পর্বে ইয়েনগান গুহাতে চীনের প্রাসাদের স্থাপত্য শৈলীর যে সব ভাষ্কর্য এবং এর ভিত্তিতে চীনের শৈলীর যে সব কুলুংগবিকশিত হয়েছেপবর্তীকালের গুহা মন্দির নির্মানে সে সবকে ব্যবপাকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে।পবর্তীকালের ইয়েনগান গুহার ভিতরে যে বিন্যাস আর সাজানো হয়তাতে চীনের প্রচুর শৈলীর স্থাপত্য প্রকাশ পায়।এ থেকে বুঝা যায়, বৌদ্ধ ধর্ম শিল্পকলা তখন থেকেই চীনের সংস্কৃতির সঙ্গ মিশে গেছে। 

( ম্যাপ:ইয়েনগানগুহা )

  গুহার ভিতরের আলঙ্কন সামগ্রী জাঁকজমকবলে উত্তর ভিয়ে রাজবংশ আমলেরশিল্পকলার রীতিনীতিপ্রতিফলিত হয়।শেষের সময়পূর্বের গুহাগুলো আকারের দিক থেকে ছোট হলেও মূর্তিগুলোর চেহারা পাতলা আর সুন্দর।গড়পড়তাও যথাযথ।এ সব মূর্তি ঠিকই উত্তর চীনের গুহার শিল্পকলার প্রতিনিধিত্ব করে। তা ছাড়া, গুহাতে যে সব নাচ এবং জিমন্যাস্টিক ছবির ভাষ্কর্য সংরক্ষিত হয়েছে সে সব ভাস্কর্য থেকে বুঝা যায় যে , তখনকার বৌদ্ধ ধর্মের মতাদর্শপ্রচলিত হয়এবং উত্তর ভিয়ে রাজবংশের সমাজের জীবন ঠিক এ রকম হত। 

  ১৯৯৭ সালে চীনের উত্তরাঞ্চলের শানসি প্রদেশের পিনয়াও প্রাচীন নগর ‘বিশ্ব উত্তরাধিকার’ তালিকাভুক্ত হয়। বিশ্ব উত্তরাধিকার কমিটির বনর্না হল: পিনয়াও প্রাচীন নগর হচ্ছে চীনে সবচেয়ে সুন্দরভাবে সংরক্ষিত প্রাচীন নগর। চীনের ইতিহাসের উন্নয়নে এই প্রাচীন নগর একটি অসাধারণ সংস্কৃতি, সমাজ , অর্থনীতি আর ধর্ম উন্নয়নের সম্পূর্ণ চিত্র সক্রোল প্রকাশ পেয়েছে।  

   পিনয়াও প্রাচীন নগরের দেওয়ালের মোট দৈর্ঘ্য ছ’হাজারাধিক মিটারের , তার উচ্চতা ১২ মিটার।দেওয়াল দেখতে কচ্ছপের মতো।মোট ছ’টি দেয়ালের দ্বার আছে। দক্ষিণ আর উত্তর দিকে যথাক্রমে একটি, পূর্ব আর পশ্চিম দিকে যথাক্রমে দুটো।দক্ষিণ দ্বার হল কচ্ছপের মাথা, দ্বারের সামনে দুটো কুয়া কচ্ছপের দুটো চোখের প্রতীক। 

  প্রাচীনকালের পিনয়াও বহিষ্ণু ছিল, আজকের পিনয়াও এখনও আকর্ষনপূর্ণ। একটি প্রাচীন দেয়াল নতুন যুগের পিনয়াও জেলা নগর বিভক্ত করেছে। মনে হয় দেয়ালের দু’পাশে দুটো তুনিয়া। দেয়ালের ভিতরের সড়ক, দোকানপাট এবং বাড়ীঘর ছ’শ বছর আগের আকার সংরক্ষিত আছে। কিন্তু দেয়ালের বাইরে ‘ নতুন নগর’ বলা হয়। এটা হল প্রাচীন আর আধুনিক স্থাপত্যের মিশ্র জায়গা। চিত্তাকর্ষনীয় জায়গাও বটে।