বসন্ত উত্সবে চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে পেপার কাটিং বা কাগজের নকশা দেখা যায়। উত্সবের আমেজ সৃষ্টির জন্য লোকজন জানালা, দরজার চৌকাঠ এবং দেরাজে এসব কাগজের নকশা লাগায়।
ঠিক কখন এর উত্পত্তি হয়েছে তা বলা কঠিন। এমন মত প্রচলিত আছে যে, ধর্মীয় কিংবা বলিদানের অনুষ্ঠান থেকে এর উত্পত্তি। প্রাচীন মানুষেরা কাগজ কেটে জীবজন্তু কিংবা মানুষের আকৃতি তৈরি করতেন। তারা এগুলো মৃতের সঙ্গে সমাধিস্থ করতেন কিংবা পুড়িয়ে ফেলতেন। তারা আশা করতেন কাগজে খোদিত প্রাণীটি মৃতের সহযাত্রী হবে। হাজার বছর আগে কাগজের নকশা অলংকরণের জন্য ব্যবহৃত হতো। ইতিহাসের বই থেকে জানা যায়, থাং রাজবংশের আমলে মহিলারা মাথার সাজ হিসাবে কাগজের নকশা ব্যবহার করতেন। সোং রাজবংশের আমলে এটি উপহার অলংকরণে ব্যবহার করা হতো। লোকজন দরজা -জানালা কিংবা দেয়াল সজ্জায় কাগজের নকশা ব্যবহার করতো। কিছু মানুষ এর মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতো।
কাগজ কেটে নকশা তৈরির পুরোটাই হাতের কাজ। এর প্রাথমিক কলাকৌশল আয়ত্ত করা খুবই সহজ। একজন নবীসের জন্য শুধু ছুরি আর কাগজই যথেষ্ট। কিন্তু জটিল নকশা তৈরির জন্য একজন কারিগরের অনেকগুলো ছুরি ও বিভিন্ন ধরণের খোদাই করার সরঞ্জাম দরকার হয়। এক তা কিংবা বেশ কয়েক তা কাগজ ব্যবহার করা যেতে পারে। সরল নকশা একটি ছুরি দিয়েই তৈরি করা সম্ভব। জটিল নকশার ক্ষেত্রে কারিগর প্রথমে নকশাটি কাগজের ওপর সেঁটে নেন এবং বিভিন্ন ধরনের ছুরির সাহায্যে কেটে কেটে নকশাটি ফুটিয়ে তুলেন। কাগজে নকশা কাটার সময় কোনো ভুল করার সুযোগ নেই, এতে পুরো নকশাটি মাটি হয়ে যেতে পারে।
কাগজে প্রায় সবকিছুর নকশাই কাটা যায়। ফুল, পাখি, জীবজন্তু, কিংবদন্তীর মানুষ এবং ক্লাসিক উপন্যাসের চরিত্র থেকে শুরু করে পিকিং অপেরায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের মুখোশ পর্যন্ত তৈরি করা যায় কাগজের নকশায়। চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে কাগজে নকশা কাটার ভিন্ন ভিন্ন রীতি রয়েছে। অতীতে পল্লীঅঞ্চলের মহিলারা অবসরে সমবেত হয়ে কাগজে নকশা কাটতেন। এটা তাদের দক্ষতা নিরূপনের একটা মাধ্যম ছিল। সমাজের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে খুব কম মানুষই এখন কাগজে নকশা কাটা শিখছেন। অল্পকিছু মানুষ এখনো একে তাদের পেশা হিসাবে ধরে রেখেছেন।
বর্তমানে চীনে কাগজে নকশা কাটার কারখানা ও সমিতি রয়েছে। কাগজে নকশার প্রদর্শনী ও মত বিনিময় হচ্ছে এবং এ সম্পর্কে বইও প্রকাশিত হয়েছে। একই সঙ্গে কাগজের নকশা এখন কার্টুনে, মঞ্চে, ম্যাগাজিনে ও টিভি সিরিজে দেখা যাচ্ছে। কাগজে নকশা কাটা নিছক অলংকরণ থেকে এখন একটি শিল্প মাধ্যমে পরিণত হয়েছে।
|