ছায়া নাটক হচ্ছে এক ধরনের লোককলা, যার জন্ম উত্তরপশ্চিম চীনের কানসু , শানসি ও নিংশিয়া প্রদেশের পল্লী অঞ্চলে। ১৪ ও ১৯ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে মিং ও ছিং রাজবংশের শাসনামলে চীনে এ শিল্প জনপ্রিয় হয়। নাটকে ব্যবহৃত ছায়ামূর্তিগুলো দৃষ্টিনন্দন ও মনোহর এবং এগুলো তৈরি করতে প্রয়োজন উচ্চ দক্ষতার।
ছায়া নাটকে ব্যবহৃত প্রতিমূর্তি তৈরি হয় ষাঁঢ়ের চামড়া দিয়ে। টেকসই পুরু নরম চামড়া বেছে নেয়া হয়। প্রথমে চামড়া পরিষ্কার করে শুকানো হয়। পরে চামড়ার ওপর সংশ্লিষ্ট প্রানীটির নকশা এঁকে কেটে নেওয়া হয়। তারপর পানিতে ডুবিয়ে এটিকে রঙিন করা হয়। এরপর সবচেয়ে কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ ধাপ --- পানি থেকে তুলে এটিকে ইস্ত্রি করতে হয়। সবশেষে এটিকে শুকিয়ে একসঙ্গে জোড়া দেয়া হয় এবং এর মাধ্যমে ছায়া নাটকে ব্যবহৃত প্রতিমূর্তি তৈরি সম্পন্ন হয়।
(ছবির প্রতির্মূতি দুটি , এদের একজন স্বর্গীয় সম্রাট , অন্যজন তাওধর্মের গুরু লাওসিয়াস তাওবাদের সবচেয়ে বড় দেবতা )
লাওসিয়াসের প্রতিমূর্তি তৈরি খুবই জটিল কাজ। প্রতিমূর্তিটি সাবলীলভাবে নড়াচড়া করতে পারে। এতে ব্যবহৃত প্রধান প্রধান রঙ হচ্ছে লাল, হলুদ, কালো এবং সবুজ। অবশ্য প্রতিমূর্তিটি আরো অনেক জটিল ধাঁচের অতিসূক্ষ্ম রঙ প্রদর্শন করতে পারে।
তাওবাদে সর্বপ্রধান দেবতার লম্বা ও চিকন চোখ, ছোট মুখ এবং খাড়া নাক রয়েছে। এসব তাকে মানুষের কাছে কোমল ও হৃদয়বান হিসাবে তুলে ধরে। তাওবাদীদের লাও জে’র গোল চোখ, খর্বনাসা ও সূচালো কপাল রয়েছে , যা তাকে করিত্কর্মা এবং জীবনীশক্তিসম্পন্নহিসাবে তুলে ধরে।
ছায়া নাটকে নৈপূন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সংগীতের তালেতালে গোটা শরীর সঞ্চালন করতে হয়। পুরো নাটকে প্রবল স্থানীয় বৈশিষ্ট্যের ছাপ প্রকাশিত হয়।কানসু প্রদেশে প্রচুর ছায়া নাটক তৈরি হয়েছে। ছবিতে , সুই ও থাং রাজবংশের একটি গল্প চিত্রায়িত হয়েছে। প্রতিমূর্তি এবং নাট্যমঞ্চের সাজসরঞ্জাম অত্যন্ত যত্নসহকারে তৈরি করা হয়। এ সব দেখেই একজন শ্রোতা বুঝে নেন নাটকটি চিত্তাকর্ষক না হয়ে পারে না। সাজসজ্জার জন্য উজ্জ্বল রঙ ব্যবহার করা হয় এবং দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় প্রদর্শনের জন্য শরীরের বিভিন্ন অংশ যথাযথভাবে সংগঠিত করা হয়।
|