১৯৮৯ সালে চীনের সমাজ একাডেমির প্রত্নতত্ত্ব গবেষণালয়ের হান রাজবংশের ছাংআন -বিষয়ক কর্মদল সিনআন শহরের লিউছুনফু থানার একটি সব্জীর জমিতে প্রত্নতাত্ত্বিক জরীপের খননকাজ চালানোর সময়ে প্রায় ২১০০ বছর আগে পশ্চিম হান রাজবংশ আমলের একটি বিরাট আকারের সৈনিক ও ঘোড়া আকারের টেরাকোটা পোড়াবার ২১টি ভাঁটি আবিষ্কার করেছে এবং এতে কয়েক হাজার উন্নত মানের টেরাকোটা পাওয়া গেছে । এটা সম্রাট এবং সরকারের জন্য সমাধিতে ব্যবহার্য সৈনিক ও ঘোড়ার টেরাকোটা পোড়াবার সরকারী ভাঁটি। এই সব সরকারী ভাঁটির আকার খুবই বড়, উত্পাদন খুব বেশী ছিল । এগুলোর দুটি ভাঁটিতে ভরা ছিল পোড়ানোর আগে মাটির সৈনিক ( যেগুলো পোড়ানো হলেই টেরাকোটা হবে) ,প্রত্যেক ভাঁটিতে ছিল ৩৫০ থেকে ৪০০টি । মোট ২১টি ভাঁটিতে পোড়ানোর মাধ্যমে প্রত্যেক বার ৭৩৫০ থেকে ৮৪০০টি বিরাট আকারের টেরাকোটা তৈরী করা যায়। তাই একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, ছিন আর হান রাজবংশের আমলে সৈনিক ও ঘোড়ার টেরাকোটা উত্পাদনের পরিমাণ খুবই বিরাট ।
এই খননকাজ থেকে জানা গেছে সৈনিক ও ঘোড়ার টেরাকাটার শরীরের বিভিন্ন অংশ (কাদামাটি দিয়ে তৈরী) ছাঁচে গড়া হয়, তবে মুখের অংশ পোড়াবার আগে ভাস্কর্য কর্মের মতো খোদাই করতে হয়। এই সব নরম মাটির মূর্তি পোড়াবার আগে যথাযথভাবে রঙ্ লাগানো হয় না, বরং সাধারনত মাটি পোড়াবার পরই-কেবল সাদা ইত্যাদি রঙ লাগিয়ে সৈনিকের সাদা পোষাকের রঙ্ হয় । ভাঁটিতে পোড়াবার সময়ে মাটির সৈনিক ও ঘোড়া যেভাবে সাজিয়ে রাখা হয়, তাও আমাদের কল্পনার বাইরে। অর্থাত্ সেগুলো উল্টা করে রাখা হয় : পা উপরের দিকে এবং মাথা নিচে রাখা হয়। আসলে এইভাবে সাজিয়ে রাখার পদ্ধতি বিজ্ঞান-সম্মত, কারণ মানুষের উপরের অংশ সিচের অংশের চেয়ে বেশি ভারী, মাথা নিচে রাখা হলে পোড়াবার সময়ে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। এতে প্রমাণিত হয়েছে, দু হাজার বছর আগেই চীনা জনগণ এই বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আয়ত্ত করেছেন । ছিন সম্রাটের সমাধির সৈনিক ও ঘোড়ার টেরাকোটা আবিষ্কৃত হবার পর আমাদের লোক প্রথম দিকে এই সব টেরাকোটার অনুকরণ করে অনুরূপ ধরনের টেরাকোটা তৈরী করার প্রচেষ্টা করার প্রথম দিকে এই পদ্ধতি আয়ত্ত করেন নি বলে, ভাঁটিতে মাটির ঘোড়ার পা নিচের দিকে রেখেছিলেন এবং পোড়াবার প্রক্রিয়ায় সেগোলো বার বার ধসে পড়েছিল, এবং অনুকরণ- মূলক উত্পাদনের প্রয়াস বারংবার ব্যর্থ হয়েছিল। তা’ছাড়া ছিন রাজবংশের আমলে যে সব কুমোর, শ্রমিক বা মিস্ত্রী টেরাকোটা বানিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের নাম টেরাকোটায় ছাপিয়েছেন বা খোদাই করেছেন , যাতে তাঁদের কাজের পরিমাণ ও গুণগত মান সহজেই পরীক্ষা করা যায় এবং গুণগত মান সুনিশ্চিত করা যায় । এই ব্যবস্থা নেয়ার ফলে আজ প্রচুর সংখ্যক প্রাচীন কুমোর ও ভাস্কর্যশিল্পীর নাম জানা গেছে । আজ কোং পিং এবং কোং চিয়া প্রমুখ ৮৫ জন মিস্ত্রীর নাম সনাক্ত করা হয়েছে ।
|