ছিন সিহুয়াং সম্রাটের সমাধির ব্রোঞ্জ-গাড়ি

             ছিন সিহুয়াং সম্রাটের সমাধির সৈনিক ও ঘোড়ার টেরাকোটা আবিষ্কৃত হবার ৬ বছর পর ১৯৮০ সালে চীনা প্রত্নতত্ত্ববিদরা আবার এই সমাধির ব্রোঞ্জ-গাড়ি ও ঘোড়া আবিষ্কার কললেন । এই আবিষ্কার আর এক বার বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। 

  সর্বপ্রথমে প্রত্নতত্ত্ব-কর্মী ইয়াং শুতে এই “জাতীয় রত্ন” আবিষ্কার করেন । তখন তিনি ছিং সম্রাটের সমাধিস্থল থেকে ২০ মিটার দূরে ড্রিলিং করছিলেন, হঠাত্ মাটির নিচে ৭ মিটার গভীর জায়গা থেকে ড্রিলিং করে বের করা মাটির মধ্য থেকে দেখা দিলো আঙ্গুলের মতো বড় একটি সোনার পিণ্ড । তিনি এই স্বর্ণপিণ্ডকে ড্রিলিং দলের পরিচালক ছেং স্যুয়েহুয়ার কাছে হস্তান্তর করলেন। তখন ছেং স্যুয়েহুয়ার এতোই আনন্দ হলো যে, তাঁর হাত কিছুটা কাঁপলো । তিনি জানতে পারলেন, যার জন্য লোকেরা দীর্ঘকাল অনেক কষ্টে খুঁজছিলেন , সেই ব্রোঞ্জ গাড়ি-ঘোড়া অবশেষে পাওয়া গেল। 

  বিশেষজ্ঞদের নির্দেশ অনুযায়ী খননকর্মীরা খুব সাবধানে খনন করতে লাগলেন। আস্তে আস্তে প্রায় এক মাস খনন করার পর অবশেষে রহস্য দেখা দিলো: মাটির নিচে ৭.৮ মিটার গভীরে আবিষ্কৃত হলো ২টি ব্রোঞ্জ গাড়ি , ৪টি ব্রোঞ্জ ঘোড়া , দুটি ব্রোঞ্জ গাড়োয়ান।  

  এই সব মূল্যবান পুরাকীর্তি নিদর্শন অক্ষত অবস্থায় পাওয়ার জন্য প্রত্নতত্ত্ববিদদের নির্দেশে কর্মীরা ১০ মিটার গভীর এবং খুব চওড়া বেশ কয়েকটি ‘পরিখা’ খনন করলেন । অবশেষে কর্মীরা ১ মিটারেরও বেশী পুরু মাটিস্তর সহ ব্রোঞ্জ গাড়ি-ঘোড়াগুলোকে বড় বড় তক্তা দিয়ে মুড়িয়ে মোট চারটি বিরাট বাক্সে প্যাকিং করে নিলেন । তার পর ইস্পাতের পাত দিয়ে বিশেষভাবে তৈরী অতিকায় কুলায় রেখে ক্রেন আর (ভারি জিনিস আস্তে আস্তে উঠানোর জন্য ব্যবহার্য) জ্যাক যন্ত্র ইত্যাদি দিয়ে ধীরে ধীরে বাক্সগুলো উপরের দিকে উঠানো হলো এবং বড় ট্রাকে রাখা হলো। ট্রাকযোগে সেগুলো ছিন সম্রাটের সমাধির সৈনিক ও ঘোড়ার টেরাকোটা মিউজিয়ামে স্থানান্তরিত করা হলো। 

  মিউজিয়ামে এই ব্রোঞ্জ গাড়ি -ঘোড়া মেরামত করা হলো । প্রায় দু বছর পর প্রকাশ্যেই মিউজিয়ামে দেখানো হলো এবং তা সারা বিশ্বেই আলোড়ন সৃষ্টি করলো। 

  এই ব্রোঞ্জ গাড়ি-ঘোড়ার সাইজ সত্যিকারের গাড়ি- ঘোড়ার দু ভাগের এক ভাগ , তবে খুব সূক্ষ্ম আর সুন্দরভাবে তৈরী হয়েছে, প্রাচীন চীনাদের কলাকৌশলের উত্কর্ষ এতে প্রতীয়মান হয়। এটা অতুলনীয় বলা যায়।