‘উড়ন্ত পাখির ওপর তেজী ঘোড়া’ হলো এক চমত্কার ভাস্কর্যশিল্পকর্ম যা ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরী। তার আরেক নাম “ ব্রোঞ্জ ধাবমান ঘোড়া”। এই ভাস্কর্য ৩৪.৫ সেণ্টিমিটার উঁচু, ৪৫ সেণ্টিমিটার লম্বা, ১০ সেণ্টিমিটার চওড়া । এটি পূর্ব হান রাজবংশ আমলে ( ২৫-২২০ খ্রীষ্টাব্দ) তৈরী। এটি উত্তরপশ্চিম চীনের কানসু প্রদেশের উওয়েই নামক স্থানের লেইথাই সমাধি থেকে আবিষ্কৃত হয় । এটি এখন কানসু প্রদেশের যাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।
তেজী ঘোড়া হলো প্রাচীন চীনের যুদ্ধ, পরিবহন আর যোগাযোগের সবচেয়ে দ্রুত আর কার্যকর বাহন বা মাধ্যম। শক্তিশালী অশ্বারোহী ছিল হানাদার হুনো জাতির আক্রমণের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণে হান রাজবংশের বাহিনীর বিজয়ের একটি অপরিহার্য শর্ত। অশ্বারোহী বাহিনীর সাহায্যেই-কেবল চীনের উত্তরাংশের শান্তি ও নিরাপত্তা সুরক্ষা করা যায় । তাই হান বংশের লোকেরা আগের যে কোনো রাজবংশের চেয়ে ঘোড়াকে বেশী ভালবাসেন এবং তেজস্বী ঘোড়াকে জাতীয় মর্যাদা , শক্তিমত্তা এবং গৌরবময় কীর্তির প্রতীক বলে মনে করেন। তাই প্রচুর তেজস্বী ঘোড়ার মূর্তি দেখা যায় হান বংশের ভাস্কর্য শিল্পকর্মগুলোর মধ্যে । এর মধ্যে সবচেয়ে বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত হলো এই তেজী ঘোড়া--“উড়ন্ত পাখির ওপর তেজী ঘোড়া”।
এই ধাবমান তেজী ঘোড়াটির ভঙ্গি ভারী সুন্দর। মাথা উঁচু করে তুলে রেখেছে , লেজ নাড়াচ্ছে, মাথা একটু বাম দিকে হেলে আছে, ঘোড়াটির তিন পা উঁচুতে শুণ্যে তুলেছে, শুধু ডান দিকের পেছনের পা একটি ডানা মেলা উড়ন্ত পাখি--“ড্রাগন পাখির” ওপর রেখেছে । তেজস্বী ঘোড়ার শরীরের তাগড়া বা বলিষ্ঠ গড়ন থেকে ফুটিয়ে তোলা হয় তার অসীম শক্তি। অথচ তার গতির ভঙ্গি আবার হালকা উড়ন্ত ভঙ্গিমার মতো। ফলে লোকেরা ভুলে যায় যে, ঘোড়াটির গোটা শরীরের ওজন(ভার) ছোট্ট একটি উড়ন্ত সোয়ালো পাখির ওপর ভর করে আছে ।
“উড়ন্ত পাখির ওপর তেজি ঘোড়া” ভাস্কর্যটি হলো হান রাজবংশের শিল্পীদের উচ্চ পর্যায়ের বুদ্ধি, সমৃদ্ধ কাল্পনিক শক্তি, রোম্যাণ্টিক মনোভাব এবং কলাকৌশলের উত্কর্ষের সমন্বয়সাধন । এটা চীনের প্রাচীন ভাস্কর্যশিল্পের অমূল্য সম্পদ ।
|