রাষ্ট্রীয় পরিষদ ও তার মন্ত্রনালয়গুলো


রাষ্ট্রীয় পরিষদ

  চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদ অর্থাত্ কেন্দ্রীয় গণ-সরকার দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক সংস্থা । রাষ্ট্রীয় পরিষদ চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেস ও তার স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রনয়ন করা আইন ও গৃহিত প্রস্তাবগুলো কার্যকরী করে , জাতীয় গণ কংগ্রেস ও তার স্ট্যান্ডিং কমিটির অর্পিত দায়িত্ব পালন করে এবং তার কাছে কার্যবিবরণী দেয় । রাষ্ট্রীয় পরিষদের দায়িত্ব ও ক্ষমতার আওতার মধ্যে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার , প্রশাসনিক আইনবিধি প্রনয়নের আর সিদ্ধান্ত ও নির্দেশ দেয়ার অধিকার আছে । রাষ্ট্রীয় পরিষদ প্রধানমন্ত্রী, উপপ্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রীয় কাউনসিলার , বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী , বিভিন্ন কমিটির চেয়ারম্যান , মহা নিরীক্ষক ও মহাসচিব নিয়ে গঠিত ।

  বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন ওয়েন চিয়া পাও ।

  বর্তমানে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের অধীনে মোট ২৮টি মন্ত্রনালয় পর্যায়ের বিভাগ আছে , এগুলো হলোঃ পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় , প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় , জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশন , শিক্ষা মন্ত্রনালয় , বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয় , প্রতিরক্ষা বিষয়ক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যাগত শিল্প কমিশন , জাতীয় সংখ্যালঘু জাতি বিষয়ক কমিশন , গণ-নিরাপত্তা মন্ত্রনালয় , জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রনালয় , অভিশংসক বিভাগ , গণ-কল্যান মন্ত্রনালয় , অর্থ মন্ত্রনালয় ,কর্মচারী ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয় , শ্রম ও সামাজিক নিশ্চয়তাবিধান মন্ত্রনালয় , রেল মন্ত্রনালয় , যানবাহন মন্ত্রনালয় , রাষ্ট্রীয় ভূমি সম্পদ মন্ত্রনালয় , পূর্ত মন্ত্রনালয় , তথ্য শিল্প মন্ত্রনালয় , জল প্রকল্প মন্ত্রনালয় , সংস্কৃতি মন্ত্রনালয় , স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় , কৃষি মন্ত্রনালয় , বানিজ্য মন্ত্রনালয় , জাতীয় লোকসংখ্যা ও পরিবার-পরিকল্পনা কমিশন , চীনা গন ব্যাংক ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়

  পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় হলো রাষ্ট্রীয় পরিষদের অধীনে দেশের বৈদেশিক নীতি কার্যকরী করা আর দৈনন্দিন পররাষ্ট্র বিষয়ক কাজকর্ম চালানোর একটি কার্যনির্বাহী বিভাগ । পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের প্রধান দায়িত্ব হলো দেশ ও সরকারের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র বিষয়ক কাজকর্ম পরিচালনা করা , এ সব কাজের মধ্যে আছেঃ দেশের বৈদেশিক নীতি ও সিদ্ধান্ত ঘোষনা করা , কুটনৈতিক দলিল ও বিবৃতি প্রকাশ করা , কুটনৈতিক আলোচনা- বৈঠক অনুষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের সংগে যোগাযোগ করা , চুক্তিসহ বিভিন্ন পররাষ্ট্র দলিলের স্বাক্ষর করা , জাতি সংঘের ও বিভিন্ন দেশের সরকারের মধ্যে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মসূচীতে অংশ নেয়া , বিদেশে চীনের দূতাবাস , কনসুলেট ও প্রতিনিধি সংস্থার প্রতিষ্ঠা ও বিদেশে মোতায়েন চীনা কর্মীদের পরিচালনা করা , রাষ্ট্রীয় পরিষদের বিভিন্ন বিভাগের পররাষ্ট্র বিষয়ক সংস্থা আর বিভিন্ন প্রদেশ , স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ও কেন্দ্রশাসিত মহানগরের পররাষ্ট্র বিষয়ক কাজকর্ম পরিচালনা করা , নির্দেশ দেয়া , সংগঠন ও সমন্বয়ের কাজ করা আর পররাষ্ট্র বিষয়ক কাজে নিযুক্ত ক্যাডারদের প্রশিক্ষণ দেয়া ও পরিচালনা করা ।

  চীনের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হচ্ছেন লি চাও সিন ।

জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনঃ

  এই কমিশনের প্রধান দায়িত্ব হলো জাতীয় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের রণনীতি , দীর্ঘমেয়াদী ও মাঝারী মেয়াদের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বার্ষিক পরিকল্পনা তৈরী ও বাস্তবায়ন, দেশবিদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও উন্নয়ন পরিস্থিতি গবেষনা ও বিশ্লেষন করে সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ন্ত্রন সম্বন্ধে সতর্কতাবাণী দেয়া , জাতীয় অর্থনীতির নিরাপত্তা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা পর্যালোচনা করে সামগ্রিক নিয়ন্ত্রনের নীতি ও প্রস্তাব পেশ করা , অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের সমন্বয় সাধন করা , বড় বড় নির্মাণ প্রকল্প ও শ্রম শক্তির বিন্যাস করা , দেশের গঠনকাজে আর্থিক বরাদ্দের ব্যবস্থা করা , বিদেশ থেকে পাওয়া ঋণের অর্থের ব্যবহার সম্বন্ধে নির্দেশ দেয়া ও তত্ত্বাবধান করা , বিশেষ ঋণের ব্যবহার সম্পর্কে নির্দেশ দেয়া ও তত্ত্বাবধান করা , বেসরকারী অর্থ অস্থাবর প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ করতে উত্সাহ দেয়া , বিদেশী অর্থ কাজে লাগানো ও বিদেশে অর্থবিবিয়োগের রণনৈতিক লক্ষ্য ও নীতি গবেষনা করা , রাষ্ট্রীয় অর্থবরাদ্দে নির্মিত প্রকল্প, প্রধান নির্মান প্রকল্প , বিদেশী অর্থবিনিয়োগে নির্মিত প্রকল্প , বিদেশী সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প আর বিপুল পরিমান বিদেশী মুদ্রা দিয়ে অর্থবিনিয়োগের প্রকল্প নির্ধারণ করা , জাতীয় আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন , অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কার আর উন্মুক্ততা সংক্রান্ত প্রশাসনিক বিধি ও নিয়ম প্রনয়ন করা এবং সংশ্লিষ্ট আইনবিধি , প্রশাসনিক বিধির প্রনয়ন ও কার্যকরীকরণে অংশ নেয়া ইত্যাদি ।

  জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান হচ্ছেন মা খাই ।

বানিজ্য মন্ত্রনালয়

  বানিজ্য মন্ত্রনালয় ২০০৩ সালের মার্চ মাস আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ।

  এই মন্ত্রনালয়ের প্রধান দায়িত্ব হলোঃ অভ্যন্তরীণ বানিজ্য ও আন্তর্জাতিক বানিজ্য আর আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার উন্নয়ন রণনীতি , কর্মসূচী ও নীতি প্রনয়ন করা , অভ্যন্তরীন বানিজ্য , বৈদেশিক বানিজ্য , আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বিদেশী ব্যবসায়ীদের অর্থবিনিয়োগ সংক্রান্ত আইনবিধি প্রনয়ন করা , অভ্যন্তরীণ বানিজ্যের উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরী করা , মুদ্রার সারকিউলেশন ব্যবস্থার সংস্কার গবেষনা করা , শহর ও পল্লী অঞ্চলের বাজার লালন ও প্রসারের ব্যবস্থা নেয়া , বাজার সুশৃঙখল করা , মুদ্রার সারকিউলেশন ব্যবস্থা উন্নত আর বাজারের একনায়কত্ব ও আঞ্চলিক অবরোধ ভাঙ্গা সংক্রান্ত নীতি প্রনয়ন করা , ঐক্যবদ্ধ,উন্মুক্ত , প্রতিদ্বন্দ্বীও সুশৃঙ্খল বাজার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা , বাজারে পন্যদ্রব্যের চাহিদা ও সরবরাহের অবস্থা বিশ্লেষণ ও তদন্ত করা , দামী পন্যদ্রব্যের বাজার নিয়ন্ত্রন আর প্র্রধান প্রধান উত্পাদন উপকরনের সরবরাহ নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা , আমদানী ও রপ্তানি পণ্যের পরিচালনা পদ্ধতি নির্ধারণ আর রপ্তানি পন্যের নামের তালিকা তৈরী করা , আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের কোটা তৈরী করা , কোটার পরিমান স্থির করা আর অনুমোদন কার্ড বিলি করা । আমদানি ও রপ্তানি পন্যের কোটা সম্পর্কিত ঠিকাদারের নীতি প্রনয়ন করা , বৈদেশিক বানিজ্যে ডাম্পিং ও ভর্তুকির বিরোধিতা করা , নিশ্চয়তা ব্যবস্থা নেয়া আর সমতার ভিত্তিতে আমদানি ও রপ্তানি সংক্রান্ত অন্যান্য কাজে সমন্বয় সাধনের প্রয়াস চালানো , সমতার ভিত্তিতে আমদানি ও রপ্তানি চালানো সম্বন্ধে পূর্ব-সতর্কতা বাণী দেয়ার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা , শিল্প সংস্থার ক্ষতি সংক্রান্ত দতন্ত সংগঠন করা , চীনের পন্যদ্রব্যের বিরুদ্ধে বিদেশের ডাম্পিং , ভর্তুকি ও নিশ্চয়তা ব্যবস্থার বিরোধীতা সংক্রান্ত অভিযোগের মোকাবেলা করা ইত্যাদি ।