সাদা সাপের জীবনী

      অনেক অনেক বছর আগে ও মেই পাহাড়ে থাকতো এক হাজার বছর ধরে সাধনাসিদ্ধ দুটো সাপ । একটি ছিল সাদা সাপ আর একটি ছিল নীল সাপ । তাঁরা পৃথিবীর মনোরাম দৃশ্য খুবই পছন্দ করতেন বলে দুজন সুন্দর মেয়ের রূপ নিয়ে সুবিখ্যাত দর্শনীয় জায়গা হাংচৌর পশ্চিম হ্রদে ভ্রমন করতে আসলেন । তাঁদের একজনের নাম ছিল পাই সুচেন আর অন্যজনের নাম ছিল সিয়াও ছিং ।  

  পশ্চিম হ্রদের দৃশ্য সত্যিই চমত্কার ছিল । যখন তাঁরা সুপরিচিত ভাঙা সেতুর কাছে এসে পড়লেন , তখন হঠাত বৃষ্টি পড়তে লাগল । তাঁরা একটি উইলো গাছের তলায় আশ্রয় নিলেন । এমন সময়ে সামনে থেকে একটি যুবক এসে পড়লেন । তাঁর হাতে ছিল একটি ছাতা । তাঁর নাম ছিল সু সিয়ান । তিনি তাঁর আদি পুরুষের কবর পরিষ্কার করার পর বাসায় ফিরছিলেন । উইলো গাছের তলায় আশ্রয়কারী দুই মেয়েকে দেখে তিনি নিজের ছাতাকে তাঁদের ধার দিলেন এবং নৌকা ডেকে তাঁদের বাসায় পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন । পাই সুচেন সু সিয়ানকে ভালোবাসলেন এবং তাঁকে পরের দিন নিজের বাসায় ছাতা নেয়ার জন্যে আসতে বললেন ।  

  পরের দিন সু সিয়ান পশ্চিম হ্রদের পাশে অবস্থিত একটি লাল দালানে এসে পড়লেন । তাঁদের সাহায্য করার জন্যে পাই সু চেন সু সিয়ানকে ধন্যবাদ জানালেন। তিনি আবার তাঁর পরিবারের অবস্থা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি জানতে পারলেন , ছোট বেলায় সু সিয়ানের বাবামা মারা গেছেন । এখন তিনি বড় বোনের বাড়িতে থাকেন এবং একটি ওষুধ দোকানে কাজ করেন । পাই সুচেন সু সিয়ানের সংগে বিয়ে করার প্রস্তাব করলেন । সু সিয়ান আনন্দের সংগে এই প্রস্তাব গ্রহণ করলেন । সিয়াও ছিংয়ের পরিচালনায় তাঁদের বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হল । বিয়ের পর তাঁদের উদ্যোগে একটি ওষুধ দোকান খোলা হলো । পাই সু চেন বেশ ভালোভাবে চিকিত্সা বিদ্যা জানতেন । প্রতিদিন তিনি অক্লান্তভাবে অনেক লোকের রোগ দেখলেন । সবাই তাঁকে ভালোবাসলেন এবং তাঁকে পাই নিয়াং নিয়াং বলে ডাকতেন ।  

  চেন চিয়াংয়ে একটি চিন শান মন্দির আছে। মন্দিরে একজন সন্ন্যাসীছিলেন। নাম তাঁর ফা হাই । তিনি জানতে পারলেন , পাই সু চেন হলেন একটি এক হাজার বছরের সাপ। তিনি মনে করলেন , এই সাপ নিশ্চয় মানুষের ক্ষতি করবে । সু সিয়ান যাতে পাই সুচেনকে ছেড়ে সন্ন্যাসী হতে পারেন, তার জন্যে তিনি নানা উপায় অবলম্বন করলেন ।  

  এক দিন ফা হাই সু সিয়ানের বাড়িতে এসে পড়লেন এবং সু সিয়ানকে বললেন , তাঁর স্ত্রী আসলে একটি সাপ । তাঁর কথায় সু সিয়ান বিশ্বাস করলেন না। ফা হাই তাঁকে পরামর্শ দিলেন , ড্রাগণবোটউত্সবের দিনে তিনি যেন পাই সুচেনকে কয়েকটি কাপ মদ খেতে বলেন । তখন পাই সুচেনের আসল রূপ বের হবে ।  

  ড্রাগণবোটের দিনে দানবকে দূর করার জন্যে পরিবারে পরিবারে মোমছাল মদ খাওয়া হল । সাপগুলো এই রকম মদ খেতে ভয় করতো । পাই সু চেন আর সিয়াও ছিং পাহাড়ে গিয়ে সরে যেতে চাইলেন। তবে তাঁরা আবার সু সিয়ানের সন্দেহ জাগিয়ে তুলতে চাইলেন না তাঁর অসুস্থ হওয়ার ভান করলেন ।  

  যদিও সু সিয়ান ফা হাইয়ের কথায় বিশ্বাস করলেন না , তবুও সেই দিন সবাইকে মোমছাল মদ খেতে হল বলে তিনি পা সু চেনকে এক কাপ খেতে বললেন। অন্য উপায় না দেখে পা সু চেন কোনোক্রমে এক কাপ মদ খলেন। খাওয়ার পর তিনি মাতাল হয়ে যাওয়ার মত অসুস্থ হয়ে পড়লেন । সু সিয়ান দ্রুত তাঁকে সাহায্য করে খাটের কাছে নিয়ে গেলেন। মাতাল অবস্থা থেকে স্ত্রীকে জাগিয়ে তোলার জন্যে তিনি এক রকম সুপ তৈরি করতে গেলেন । যখন তিনি মশারী খুললেন , তখন হঠাত একটি বড় সাদা সাপ খাটে শুইতে দেখলেন । ভীষণ ভয়ে সু সিয়ান “মারা” গেলেন । 

  জেগে উঠার পর পাই সু চেন দেখতে পেলেন , সু সিয়ান ভয়ে মারা গেলেন । তখন তিনি অপার দুঃখ পেলেন। তিনি সিয়াওকে সু সিয়ানকে দেখাশোনা করতে বললেন এবং নিজে পরি-পাহাড়ে গ্লসি গানোদের্মা চুরি করতে গেলেন । কারণ কেবল গ্লসি গানোদের্মা দিয়ে সু সিয়ানকে বাঁচিয়ে তোলা যাবে ।  

  এই সময়ে পাই সুচেন ৭ মাসের গর্ভবতী ছিলেন । তিনি পরি-পাহাড়ে যাওয়ার পর পাহারারত পরিশিশু তাঁকে দেখতে পেল । তাঁর গ্লসি গানোদের্মা চুরি করার চেষ্টা দেখলে তাঁর সংগে লড়াই করতে শুরু করল । পাই সু চেন প্রাণপণে লড়াই করলেন । পরি-পাহাড়ের পরিবৃদ্ধ স্বামীর প্রতি তাঁর আন্তরিকতা দেখে তাঁকে গ্লসি গানোদের্মা দিয়ে দিলেন।  

  সু সিয়ানকে বাঁচিয়ে তোলা হল । তবে তাঁর একটু ভয় ভয় লাগল । পাই সু চেনের একটি বুদ্ধি হলো । তিনি সাদা পেটি দিয়ে একটি বড় সাদা সাপের রূপ দিয়ে ঘরের কড়িতে বসিয়ে দিলেন । তারপর তিনি সু সিয়ান ডাকলেন । এভাবে সুই সিয়ান বিশ্বাস করলেন , তাঁর স্ত্রী সাপ নয় । তিনি আবার পাই সু চেনের সংগে সুসম্পর্ক গড়ে তুললেন ।  

  ফা হাই তখনো পর্যন্ত ক্ষান্তহন নি । তিনি সু সিয়ানকে ছল করে চিন শান মন্দিরে নিয়ে আসলেন এবং তাঁকে বাড়িতে ফিরতে দিলেন না । পাই সু চেন আর সিয়াও ছিং চিন শান মন্দিরে সু সিয়ানকে নিতে গেলেন এবং ফা হাইয়ের সংগে লড়াই করলেন । পা সু চেন গর্ভবতী বলে পেটে তীব্র ব্যথা হয়ে ভাঙা সেতুতে পালিয়ে গেল । ভাঙা সেতু দেখে তাঁর মনে পড়ল ,এখানে সু সিয়ানের সংগে তাঁর প্রথম পরিচয়ের দৃশ্য। তখন তিনি খুবই ব্যথিত হলেন । সিয়াও ছিং ফা হাইয়ের কথা শোনার জন্যে সু সিয়ানের ওপর দোষারোপ করলেন এবং পাই সুচেনকে সু সিয়ানকে ছেড়ে যেতে বললেন ।  

  একজন ছোট সন্ন্যাসীর সহায়তায় সু সিয়ান চিন শান মন্দির থেকে পালিয়ে গেলেন এবং ভাঙা সেতুতে নিজের স্ত্রীকে খুঁজে পেলেন । পাই সু চেন তাঁকে জানালেন , তিনি সত্যিই সাপ থেকে মানুষের রূপ নিয়েছেন । এই সময়ে সু সিয়ান বুঝতে পারলেন , নিজের প্রতি স্ত্রীর গভীর ভাবানুভূতি। তিনি শপথ নিলেন , মানুষ হোক আর সাপ হোক , তিনি পাই সু চেনের সংগে চিরকাল দম্পতি হয়ে থাকবে ।  

  তাঁরা একসাথে বাড়িতে ফিরলেন । কিছু দিন পর পাই সু চেনের একটি ছেলে হল । ছেলেটির এক মাস হওয়ার দিনে পরিবারের সবাই খুব খুশী হলেন।এমন সময়ে ফাহাই আবার এসে পড়লেন । সু সিয়ানের আকুল আবেদন সত্বেও তিনি পাই সু চেনকে পশ্চিম হ্রদের পাশে অবস্থিত লেফোং প্যাগোডার নীচে চাপিয়ে দিলেন ।  

  সিয়াও ছিং ওমেই পাহাড়ে পালিয়ে কঠোরভাবে কুং ফু চর্চা করে অবশেষে ফা হাইকে পরাজিত করলেন এবং পা সু চেনকে বাঁচিয়ে তুললেন ।