“পিওনি ছত্বর”

      প্রাচীনকালে নান আন জেলার প্রধান প্রশাসক তু পাওয়ের একটি মেয়ে ছিল । নাম তাঁর তু লিনিয়াং । তাঁর চেহারা ভারী সুন্দর এবং অত্যন্ত বুদ্ধিমান । তু পাও মেয়ের জন্যে একটি শিক্ষক নিয়োগ করলেন । তিনি রোজ তু লিনিয়াংকে চীনের প্রথম প্রাচীন কবিতার সংকলন “শিচিং” পড়াতেন । চাকরাণী ছুয়েন সিয়াং লি নিয়াংয়ের পাশাপাশি বই পড়তো । তবে সে খুব চঞ্চল এবং মাঝে মধ্যে ক্লাসের সময়ে বেরিয়ে যেতো ।  

  চীনের সামন্ততান্ত্রিক সমাজে নারীদের উপর কড়াকড়ি নিয়ম ছিল । মাবাবাই মেয়েদের বিয়ের ব্যাপার স্থির করতেন । বিয়ের আগে মেয়েরা এমন কি তাদের স্বামীর চেহারা পর্যন্ত দেখেন নি । তু লিনিয়াং প্রায় “শিচিং” পড়তেন । তিনি প্রাচীন কবিতায় বর্ণিত ছেলেমেয়েদের মধ্যে স্বাধীনভাবে প্রেম করার জীবনের প্রতি আকৃষ্ট হলেন ।  

  বসন্ত এসে পড়ল । ছুয়েন সিয়াং তু লি নিয়াংকে জানাল , বাড়ির পেছনে একটি বাগান আছে । সেখানকার দৃশ্য অত্যন্ত মনোরম । তু লি নিয়াং ছোট বেলা থেকে সামন্ততান্ত্রিক চাল চলন মেনে চলতেন । রোজ কেবল ঘরে বসে বোনার কাজ করতেন , বই পড়তেন আর হস্তলিপি লিখতেন । তিনি কোনোদিন বাইরে যান নি । ছুয়েন সিয়াংয়ের প্ররোচনায় তিনি চুপিসারে বাগানে খেলতে গেলেন ।  

  বাগানের প্রাকৃতিক দৃশ্য সত্যিই চমত্কার ছিল । উইলো গাছ সবুজে সবুজ , পুকুরের চারপাশে জমে উঠে শেওলা । পিওনি সহ নানা রকম ফুল ফুটে গেল । পাখীগুলো গাছে বসে গান গাইচ্ছিল । বাগান থেকে দূরের অস্পষ্ট নীল পাহাড়ো দেখতে পাওয়া গেল । এত সুন্দর দৃশ্য দেখে তু লি নিয়াং ভাবতে লাগলেন , তিনি রোজ কেবল ঘরে বসে বই পড়েন আর বোনার কাজ করেন । নিজের যৌবন বসন্তের নিসর্গের মত মরোরম হলেও নিমেষের মধ্যে উবে যাবে । বসন্তের নিসর্গ সুন্দর হওয়ার সময়ে উপভোগ করার লোক না থাকলে , সৌন্দয্যের আর কি তাত্পর্য থাকবে ? আস্তে আস্তে তিনি এমন বেদনাদায়ক ভাবনায় বিমোর হয়ে গেলেন । বিষন্ন মন নিয়ে তিনি ঘরে ফিরে গেলেন । একটু ক্লান্তিতে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন ।  

  স্বপ্নে তিনি আবার সেই বাগানে ফিরে গেলেন । একজন তরূণ বুদ্ধিজীবি হাতে উইলো নিয়ে তাঁর কাছে এসে তার সংগে কথাবার্তা বলতে শুরু করলেন । সেই বুদ্ধিজীবি তুলিনিয়াংয়ের সৌন্দর্য্যআর বিচহ্মণতা পছন্দ করলেন। তাঁর যৌবন বৃথা হতে দেয়ার জন্যে দুঃখ প্রকাশ করলেন । তু লি নিয়াং মনে করল , তিনি সত্যিই তাঁর মনের কথা জানেন এবং তাঁকে ভালোবাসলেন । বাগানের ফুল দেবতা নেচে উঠে তাদের প্রেমকে অভিনন্দন জানালেন। 

  তু লি নিয়াংয়ের মা ঘরে মেয়েকে দেখতে এলেন । এতে লি নিয়াংয়ের স্বপ্ন ভেঙে গেলো। তু লি নিয়াং তাঁর স্বপ্নের দৃশ্য স্মরণ করলেন এবং বাগানে এসে স্বপ্নের দৃশ্য খুঁজতে লাগলেন । তবে দৃশ্যটির অস্তিত্ব তখনও ছিল , তবে স্বপ্নে দেখা দেয়া সেই বুদ্ধিজীবিকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না । তিনি খোঁজার সংগে সংগে চিন্তা ভাবনা করতে লাগল । ভাবতে ভাবতে তাঁর মন ব্যথিত হয়ে উঠল । ঘরে ফিরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন । তিনি সর্বদাই সেই মনোরম বসন্ত আর সেই বসন্তের স্বপ্নের কথা ভাবতে লাগলেন । তিনি নিজেই নিজের একটি ছবি আঁকলেন এবং তাঁর চাকরাণীকে সেই ছবিটি বাগানের পাহাড়ী পাথরের নীচে রাখতে বললেন । কিছু দিন পর তিনি রোগে মারা গেলেন । মারা যাওয়ার আগে তিনি বাবামাকে নিজের লাশ বাগানের সেই প্লাম গাছের নীচে পুঁততে এবং একটি কবর নির্মাণ করতে বললেন ।  

  পরে তু পাও সপরিবারে অন্যত্র বসবাস বরতে শুরু করলেন । কিছু দিন অতিবাহিত হওয়ার পর একজন বুদ্ধিজীবি এই বাগানে আসলেন এবং হঠাত অসুস্থ হয়ে পড়লেন । তিনি এই বাগানের কাছে থাকতে শুরু করলেন । এই বুদ্ধিজীবির নাম হলো লিউ মোংমেই যিনি ছিলেন তু লি নিয়াংয়ের স্বপ্ন দেখা দেয়া সেই বুদ্ধিজীবি ।  

  লিউ মোং মেইয়ের অসুখ একটু ভালো হওয়ার পর বাগানে বেড়াতে আসলেন। তিনি অনিচ্ছাকৃতভাবে তু লি নিয়াংয়ের সেই ছবি দেখতে পেলেন । তাঁর মনে হতে লাগল , যেন কোথায় এই সুন্দর মেয়েকে দেখেছেন । তিনি ছবিটি নিজের পড়ার ঘরে নিয়ে টাংগিয়ে দিল এবং এই ছবির মেয়েকে খুব ভালোবাসলেন। তিনি রোজ ছবিটির মেয়েকে ডাকতে শুরু করলেন এবং তাঁকে একটি জ্যান্ত মেয়ে হিসেবে মনে করতে লাগল ।  

  তু লি নিয়াং মারা যাওয়ার পর তাঁর আত্মা বাগানে ভেসে আসতো । তিনি দেখতে পেলেন , লিউ মোমেই সত্যিই নিজেকে ভালোবাসেন । তাই তিনি রোজ সন্ধ্যায় পড়ার ঘরে এসে মোংমেইয়ের সংগে দেখা করতেন এবং ভোর বেলায় চলে যেতেন । মোংমেই তু লি নিয়াংকে জিজ্ঞেস করলেন, কিভাবে চিরকাল তাঁর সংগে বসবাস করতে পারবেন । লি নিয়াং বললেন , তাঁর কবর খুলতে পারলে , তিনি বেঁচে উঠবেন । এই কথা শুনে মোংমেই অত্যন্ত খুশী হলেন । তিনি কোদাল দিয়ে কবর খুড়ে উন্মুক্ত করলেন। তু লি নিয়াং সত্যিই জীবিত হলেন এবং তাঁর চেহারাও আগের মত ছিল সুন্দর । তাঁরা সুখের সংগে দম্পতি হয়ে গেলেন ।  

  প্রেমের জন্যে তু লি নিয়াংয়ের মৃত্যআর পু্নরোজীবনের রোমাঞ্চকর কাহিনী বহু লোককে বিমুগ্ধ করে তুলেছে ।