“সিলাং তাঁর মাকে দেখতে গেলেন ” 

       দশম শতাব্দি থেকে দ্বাদশ শতাব্দি পর্যন্ত মধ্য চীনের সুং রাজবংশের প্রশাসনের পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব চীনের একটি সংখ্যালঘু জাতির প্রশাসন”লিয়াও”রাজ্য থাকতো । লিয়াও রাজ্য বহুবার সুংয়ের বিরুদ্ধে আক্রমণ করেছিল । দুই রাজ্য প্রায়ই যুদ্ধ করতো । 

  সুং রাজবংশের সময়ে ইয়াং পরিবারের সেনাপতিদের কাহিনী সবার মুখে প্রচলিত ছিল । এই পরিবারে বাবার নাম ইয়াং লিংকুং , মার নাম সিয়ে থাইচুন আর তাদের ৮জন ছেলে সবাই সাহসের সঙ্গে লড়াই করতে নিপুণ ছিলেন এবং দেশের জন্যে বহুবার কীর্তি স্থাপন করেন ।  

  একবার লিয়াও রাজ্য পরিকল্পনা এঁকে শান্তি্ আলোচনায় অংশ নেয়ার জন্যে সুং রাজবংশের রাজাকে আমন্ত্রণ করলেন । সুং রাজবংশ জানতো না , প্রতিপক্ষের আসল উদ্দেশ্য কি ছিল । সুং রাজবংশের রাজাকে রক্ষা করার জন্যে ইয়াং পরিবারের বড় ছেলে সুং রাজবংশের রাজা সেজে তাঁর ৭টি ভাইয়ের সাহচর্যে লিয়াও রাজ্যে গেলেন । পথে তারা লিয়াও বাহিনীর আক্রমণের সম্মুখীণ হলেন । আক্রমণে ইয়াং পরিবারের ৩জন ভাই মারা গেলেন এবং চতুর্থ ভাই সি লাং বন্দী হলেন। সি লাং নিজের ডাক নাম খন্ডন করে নিজেকে নতুন নাম দিলেন মু ই এবং এভাবে লিয়াও বাহিনীকে বিশ্বাস করালেন ।  

  লিয়াও রাজ্যের নারী রাজা সিয়াও থাই হো দেখতে পেলেন , মু ইর চেহারা সুদর্শন এবং ভালো কুং ফু জানেন । তাই তিনি তাঁর মেয়েকে মু ইর সংগে বিয়ে করিয়ে দিলেন । এভাবে ইয়াং সি লাং হয়ে গেলেন লিয়াও রাজ্যের রাজকুমারীর জামাই । দম্পতির মধ্যে খুব ভাব ছিল । পরে তাদের একটি ছেলে হল । আশেপাশের কেউই জানতো না , এই জামাই আসলে সুং রাজবংশের ইয়াং সি লাং।  

  সুং আর লিয়াও বরাবরই যুদ্ধ করে চলল । ১৫ বছর পর লিয়াও রাজ্য আবার সু রাজ্যের বিরুদ্ধে বিরাটাকারের আক্রমণ চালালো । ইয়াং সি লাং আর রাজকুমারী থিয়ে চিং সিয়াও থাই হোর সংগে সম্মুখ ফ্রন্টে এসে পড়লেন । প্রতিরোধের জন্যে সু রাজবংশ ইয়াং সি লাংয়ের ষষ্ঠ ভাই ইয়াং লিউ লাংকে প্রধান সেনাপতি হিসেবে নিয়োগ করলো এবং তার মা সিয়ে থাই চুনও খাবার আর ঘাস সরবরাহ করার জন্যে যুদ্ধ ক্ষেত্রে গিয়ে পড়লেন।  

  ইয়াং সি লাং জানতে পারলেন , তাঁর মা আর ভাই সম্মুখ ফ্রন্টে এসে পড়লেন । তিনি মনে মনে তাঁদের কথা খুব ভাবলেন এবং সুং সেনানিবাসে গিয়ে মাকে দেখতে চাইলেন । কিন্তু সামরিক বাহিনীর নিয়ম অনুসারে লিয়াও রাজ্যের রাজার আদেশ-কার্ড ছাড়া কেউই পাহারা-দ্বার পার হতে পারবে না । ইয়াং সি লাং খুব চিন্তিত ছিলেন এবং কাউকে বলতে সাহস করতো না । রাজকুমারী তা জানতে পেরে বারবার জিজ্ঞেস করলেন । অবশেষে ইয়াং সি লাং তাঁকে জানালেন , তাঁর আসল নাম ইয়াং । তিনি সুং রাজবংশের সেনাপতি । তিনি সুং সেনানিবাসে গিয়ে মার সংগে দেখা করতে উদ্গৃব ছিলেন । এই ব্যাপারে সাহায্য করার জন্যে ইয়াং সি লাং বারবার রাজকুমারীকে অনুরোধ করলেন । সহৃদয় রাজকুমারী এতে রাজী হলেন , তিনি তাঁর জন্যে সিয়াও থাইহোর আদেশ-কার্ড চুরি করবেন । তবে তিনি আবার ভয় করলেন , ইয়াং সি লাং সুং সেনানিবাসে গেলে আর ফিরে আসবে না । ইয়াং সি লাং শপথ নিলেন , তিনি ভোর হওয়ার আগে ফিরে আসবেন ।  

  রাজকুমারী শিশু ছেলেকে কোলে নিয়ে সিয়াও থাই হোর কাছে গেলেন । তিনি গোপনে ছেলের গায় চিম্টি কাটলে ছেলেটি কেঁদে উঠল । সিয়াও থাইহো সবসময় এই পৌত্রকে ভালোবাসতেন । তিনি তাকে ভালো করে বুঝিয়ে বললেন । এই সুযোগে রাজকুমার মাকে বললেন , তাঁর ছেলে আদেশ-কার্ড নিয়ে খেলতে চায়। সিয়াও থাই হো পৌত্রকে খুবই পছন্দ করতেন বলে আদেশ-কার্ডকে ছেলেটির হাতে দিয়ে দিলেন । পরের দিন ফেরত দেয়ার জন্যে তিনি রাজকুমারীকে অনুরোধ করলেন ।  

  ইয়াং সি লাং আদেশ-কার্ড সংগে নিয়ে পাহারা -দ্বার পার হয়ে সুং সেনানিবাসে গিয়ে পড়লেন । তাঁর ষষ্ঠ ভাইয়ের সংগে দেখা করার পর ১৫ বছর আগে রণক্ষেত্রে দুজনের ছাড়াছাড়ির কথা উল্লেখ করলে দুজনই পরস্পরকে কোলে নিয়ে কেঁদে ফেললেন । তারপর সিলাং তাঁর মা সিয়ে থাইচুনের সংগে দেখা করলেন । চুল সাদা মা বহু বছর ধরে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ছেলের সংগে দেখে করে যেমন অবাক , তেমনি আনন্দিত হলেন । মা আর ছেলে এবং ভাইদের মধ্যে চিন্তা-ভাবনার কথা চলল । লোকের অজান্তে ভোর হতে চলল । সি লাং বাধ্য হয়ে মার কাছ থেকে লিয়াও সেনানিবাসের উদ্দেশ্যে ফিরতে লাগলেন ।  

  ফিরার পথে পাহারা-দ্বারে সি লাংয়ের জামাতার আসল পরিচয় পাওয়া গেল । তাঁকে সিয়াও থাইহোর সামনে নিয়ে যাওয়া হলো । সিয়াও থাইহো স্বপ্নেও ভাবতে পারলেন না যে, নিজের বেছে নেয়া জামাই আসলে সুং রাজবংশের একজন সেনাপতি এবং রাজকুমারীর সহায়তায় তিনি গোপনে সুং সেনানিবাসে গিয়ে মাকে দেখতে গেলেন । সিয়াও থাইহো রেগে আগুণ । তিনি তত্ক্ষনাতই সি লাংকে হত্যা করতে চাইলেন । রাজকুমারী তাড়াহুড়া করে ছেলেকে কোলে নিয়ে থাইহোর কাছে আকুল আবেদন করলেন । থাইহো জামাইয়ের অপরাধ ক্ষমা করলেন এবং অনুমুতি দিলেন . ভবিষ্যতে সি লাং আপনজনদের সংগে দেখা করার জন্যে বাড়িতে যেতে পারবেন ।