“ইউনিকোর্ণ ব্যাগ”

       প্রাচীনকালে তেংচৌ নামে একটি জায়গায় সুইয়ে নামে একজন অত্যন্ত ধনী বণিক ছিলেন । তাঁর একটি মেয়ে ছিল । নাম তাঁর সুইয়ে সিয়াং লিং । পরিবারের সবাই এই মেয়েকে খুবই ভালোবাসতেন। সিয়াং লিং বড় হওযার পর বিয়ের পালা । বাবামা তাঁর জন্যে বহু যৌতুকের ব্যবস্থা করলেন । তাঁর মা বিশেষভাবে তাঁর জন্যে একটি “ইউনিকোর্ণ ব্যাগ” তৈরি করলেন । সুন্দর ছবি দিয়ে বোনানো কাপড়ের এই ব্যাগে নানা রকম রত্নে ভরা ছিল । বলা হয়ে থাকে , বিয়ে হয়ে যাওয়া মেয়েরা সংগে ইউনিকোর্ণ ব্যাগ থাকলে ভবিষ্যতে আগেভাগেই একটি সুন্দর আর বিচক্ষণ ছেলের জন্ম দেবে ।  

  বিয়ে হয়ে যাওয়ার দিন সিয়াং লিং একটি সুন্দর পাল্কিতে বসছিলেন । তাঁর পক্ষের লোকেরা ঢাক ঢোল বাজিয়ে এক সরগরম পরিবেশ সৃষ্টি করলো । মাঝপথে হঠাত বৃষ্টি পড়লো । তারা তাড়াহুড়া করে নিকটবর্তী “বসন্ত আর শরত্ছত্বরে” আশ্রয় নিলেন। কিছুহ্মণ পর নতুন বধু বহনকারী আরেকটি পাল্কি এসে পড়ল । এটি ছিল একটি ছোট আর পুরনো পাল্কি । পাল্কিতে বসা নতুন বধু নিরন্তর কাঁদছিল। কাঁদের শব্দ শুনে সিয়াং লিং অবাক হয়ে গেল । আসল ব্যাপার জানার জন্যে তিনি তাঁর চাকরদের পাঠালেন । পরে তিনি জানতে পারলেন , এই নতুন বধুর নাম চাও সৌচেন । একটি অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে তাঁর জন্ম । বহু বছর আগে তাঁর মা মারা গেছে । বাড়িতে শুধু বুড়ো বাবা ছিল এবং যৌতুক কিছুইছিল না। চাও সৌচেন ভয় করলেন , বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর গরীব বলে অন্যরা তাঁকে উপহাস করবে । তিনি বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর বাড়িতে কেবল বাবা একলা থাকবে এবং তাঁকে দেখাশোনা করার লোক থাকবে না । এই নিয়ে তিনি খুবই চিন্তিত বলে কাঁদতে শুরু করলেন।  

  এ সব কথা শুনে সিয়াং লিং তাঁর প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে উঠলেন । তিনি ভাবতে লাগলেন , তিনি ছোটবেলা থেকে সম্পন্ন পরিবারে বড় হয়ে গেছেন । তিনি কোনোদিন জানতেন না , পৃথিবীতে চাও সৌচেনের মতো গরীব লোক আছে । তিনি ভাবতে লাগলেন , কি করে তাঁকে সাহায্য করা যাবে ? সহসা তিনি পাল্কিতে রাখা ইউনিকোর্ণ ব্যাগ দেখতে পেলেন । তাই তিনি সেটা চাও সৌচেনকে দিয়ে দিলেন । তবে তিনি চাও সৌচেনের কাছে নিজের নাম বলেন নি । এই সময়ে বৃষ্টি থেমে গেল । দুটো পাল্কি আলাদা আলাদাভাবে পথ ধরল ।  

  ৬ বছর পর তেং চৌতে বণ্যা দেখা দেয়ার সময়ে স্বামী আর ছেলের সংগে সিয়াং লিংয়ের ছাড়াছাড়ি হল । সিয়াং লিং একলা লাইচৌতে এসে পড়ল । তখন তাঁর জীবন কঠিন হয়ে পড়ে । একদিন তিনি তাঁর বাড়ির আগেকার ধাত্রীর সংগে দেখা করলেন । ধাত্রীর সুপারিশে তিনি লু নামে একটি ধনীপরিবারে চাকরাণীর কাজ করলেন । তাঁর কাজ ছিল লু পরিবারের ছোট ছেলে থিয়ান লিনকে দেখাশোনা করা । থিয়ান লিনের বয়স ছিল ৫ বছর । সে সিয়াং লিংকে খুব ভালোবাসত এবং প্রতিদিন পেছনের বাগানে তার সঙ্গে বল খেলতে অনুরোধ করতো ।  

  একদিন অসাবধানবশত থিয়ান লিন বলকে পেছনের বাগানের একটি ছোট দালানের মধ্যে ফেলে দিল । সিয়াং লিং সেই দালানের একটি ঘরে বল খুঁজতে গেল । হঠাত তিনি ঘরের মাঝখানে টাংগানো একটি সুন্দর ব্যাগ দেখতে পেলেন। ভালো করে দেখে আবিষ্কার করলেন . সেটি ছিল বিয়ে হয়ে যাওয়ার সময়ে চাও সৌচেনের হাতে দেয়া ইউনিকোর্ণ ব্যাগ। সেটা দেখে আপনজনদের কাছ থেকে নিজের ছাড়াছাড়ির কথা ভেবে তিনি কাঁদতে লাগলেন । থিয়ান লিন তাড়াহুড়ো করে মার কাছে খবর দিল । বস্তুত থিয়ান লিনের মা হলেন চাও সৌচেন । তিনি লু পরিবারে বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর হাতে ইউনিকোর্ণ থাকায় পরিবার ক্রমেই সম্পন্ন হয়ে উঠল । সিয়াং লিংকে স্মরণ করার জন্যে চাও সৌ চেন পেছনের বাগানে একটি দালান নির্মাণ করলেন এবং ইউনিকোর্ণ ব্যাগটি ভেতরে টাংগিয়ে দিলেন । এতে প্রমাণিত হয় , তিনি চিরকাল সিয়াং লিংয়ের কথা ভুলবেন না । থিয়ান লিনের কাছ থেকে সিয়াং লিংয়ের কাঁদার কথা শুনে তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন , সিয়াং লিং কোন্ সময়ে বিয়ে হয়ে গেছেন এবং বিয়ের দিন অবস্থা কি রকম । সিয়াং লিং তখনকার অবস্থা বর্ণনা করলেন । চাও সৌচেন জানতে পারলেন , সিয়াং লিং হলেন নিজের বদান্য ব্যক্তি । তিনি অপার আনন্দে সিয়াং লিংয়ের জন্যে উত্তম পোষাক পরালেন । তিনি সিয়াং লিংকে নিজের সবচেয়ে সম্মানিত অতিথি হিসেবে গ্রহণ করলেন এবং ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়া আপনজনদের খুঁজে বের করার জন্যে সিয়াং লিংকে সাহায্য করলেন ।  

  কিছুদিন পর সিয়াং লিংয়ের স্বামী আর ছেলেও লাইচৌতে আশ্রয় নিতে আসলেন । তারা শুনতে পেলেন , সিয়াং লিং লুর বাড়িতে চাকরাণীর কাজ করেন । তারপর তারা লুর বাড়িতে এসে পড়লেন । এক পরিবারের সবাই শেষ পর্যন্ত মিলিত হলেন । তখন থেকে সিয়াং লিং আর চাও সৌচেন উত্তম বন্ধু হয়ে উঠলেন।