ইতিহাসের বিবর্তনের সময়ে খুয়েন অপেরা “খুয়েনশানছিয়াং”(সংক্ষেপেখুয়েনছিয়াং) খুয়েনতিয়াও, খুয়েনছুই, “নানছুই”, “নানইন”, “ইয়াপু”র মত নানা ধরণের নামে পরিচিত ছিল । সাধারণত অপেরার সুর প্রকাশের সময়ে প্রধানত খুয়েনশানছিয়াং ব্যবহার করা হয় । সংগীত প্রকাশের সময়ে বিশেষ করে মঞ্চ ছাড়া গান গাওয়ার সময়ে খুয়েনছুই ব্যবহার করা হয় । আর অভিনয়-শিল্পকলা প্রদর্শনের এই স্থানীয় অপেরা খুয়েনচুই বলে অভিহিত হয় ।
খুয়েনচুর সমৃদ্ধ আর অপেরা মঞ্চ তার কর্তৃত্ব প্রায় ২৩০ বছর স্থায়ী ছিল । অর্থাত মিং রাজবংশের লুংছিং আর ওয়ানলির সংলগ্ন থেকে ছিং রাজবংশের চিয়াছিং আমলের গোড়ার দিক পর্যন্ত (১৫৭০-১৮০০) স্থায়ী ছিল। এই সময় ছিল খুয়েনচু অপেরার উজ্জ্বলতম আর লক্ষণীয় সাফল্যজনক পর্যায় । এক সময়ে এই অপেরা দেখার জন্যে প্রতিটি বাড়ি ছিল খালি । নাট্যকারদের নতুন নতুন নাট্যকর্ম ঘন ঘন উদ্ভূত হয় , অভিনয়ের নৈপুণ্য পর্যায়ক্রমে পরিপক্ক হয় এবং বিভিন্ন পেশার বিভাগ আরো সূহ্ম হয় । অভিনয়ের পদ্ধতির দিক থেকে পুরো কাহিনীর অপেরা বিশেষ বিশেষ অংশের অপেরায় রূপান্তরিত হয় । এই ধরণের অপেরা আগেকার অপেরার শিথিল অংশ বাদ দিয়েছে , আবার আগেকার অপেরার চিত্তাকর্ষকঅংশগুলো আরো পরিপূর্ণ আর সমৃদ্ধ করে তুলে তাকে স্বাধীনভাবে অভিনয় করার মত ক্ষুদ্র অপেরায় পরিণত করেছে । এই ধরণের অপেরা তার প্রাণবন্ত বিষয়বস্তু , সূহ্ম অভিনয় আর শিল্পকলার বহুমুখী রীতিনীতি দিয়ে তখনকার নাট্যকর্মের অতি দৈর্ঘ, মন্থরতা আর পরিবর্তনহীনতার মত দুর্বলতা লাঘব করেছে । এইভাবে খুয়েনছুইর অভিনয়ের ক্ষেত্রে এক মূর্ত আর প্রাণবন্ত পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে । তখন শেং ,তান , চিং আর ছৌ- এই চারটি পেশার অপেরা দর্শকদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় ও উত্কৃত অপেরায় রূপান্তরিত হয় ।
খুয়েনছুইর নাট্যকর্ম অত্যন্ত সমৃদ্ধ । নাট্যকর্মগুলোর ভাষা ভদ্র, সুন্দর আর সাহিত্যিক । শুধু নাট্যকর্ম পড়লে তার সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যাবে । বহু গানের ভাষা মূলত মনোরম আর বেদনাদায়ক কবিতার লাইন । মিং আর ছিং রাজবংশে খুয়েনছুই চীনের প্রথম গান করার অপেরায় পরিণত হয় যার নাট্যকার আর নাট্যকর্মের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশী । খুয়েনছুইর বিশেষ সুর করার প্রণালীরয়েছে। তার উচ্চারণ আর কথাবার্তার চারটি ঢং অত্যন্ত স্পষ্ট । খুয়েনছুই তাল আর ছন্দ মেনে চলে কঠোরভাবে । তার সুর মসৃণ আর শ্রুতিমধুর এবং আস্তে আর সুদুরপ্রসারী । তার সুর হচ্ছে চীনের প্রাচীন সাহিত্যের পঙক্তি প্রণালী । প্রতিটি অপেরা পুরো সেটের পঙক্তি নিয়ে গঠিত । খুয়েনছুইর রয়েছে একটি পূর্ণাংগ অভিনয় ব্যবস্থা । খুয়েনছুইর মধ্যে নাচের অভিনয় খুব বেশী এবং এই নাচ গানের সংগে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বিত হয়। খুয়েনছুই হচ্ছে গান , নাচ , আবৃত্তি আর লড়াইয়ের সমন্বয়ে গঠিত একটি বহুমুখী শিল্পকলা । চীনের অপেরাগুলোর সাহিত্য , সংগীত , নাচ , চিত্র এবং অভিনয়ের ভংগী আর প্রণালী , সংগীত দলের গঠন ইত্যাদি খুয়েনছুইর উন্নতির মধ্য দিয়ে পরিণত আর পরিপক্ক হয়ে উঠে ।
খুয়েনছুইর উন্নতি চীনের অপেরার উন্নতির প্রতিনিধিত্ব করে । খুয়েনছুই পেইচিং অপেরা , ছুয়ান অপেরা , সিয়াং অপেরা ,ইউয়ে অপেরা আর হুয়াংমেই অপেরার মত বহু অপেরার উদ্ভব আর উন্নতির উপর প্রত্যক্ষপ্রভাব বিস্তার করেছে । তাই লোকেরা প্রায় খুয়েনচুকে শত অপেরার আদি পুরুষ বলে আখ্যায়িত করে ।
|