চিওয়া চি চীনের এক ঐতিহ্যিক খাবার,
এই খাবার চীনের সংস্কৃতির একটি
অংশও বলা যায় । পরিবারের সকল
সদস্য এক সংগে চিওয়া চি খাওয়া
সম্মীলনীর প্রতীক ,মেহমান আসলে
তাদের শ্রদ্ধা ও আতিথেয়তা দেখানোর
জন্য তাদের চিওয়া চি খাওয়ানো
হয় । একজন বিদেশী চীনে আসলে চীনের
চিওয়া চি না খেলে খুব দুঃখের
ব্যাপার , ফিরে যাওয়ার পর হয়ত
তার বন্ধু তাকে এই বলে পরিহাস
করবেন যে চীনের চিয়াও চি না খেয়ে
ফিরে আসা চীনে না যাওয়ার মতো
। চিওয়া চি হলো ময়দার
তৈরী গোল আকারের পাতলা ফালির
মধ্যে মাংসের পুর বা শাকসব্জি
দেয়া এক কুলী পিঠে । তৈরী হওয়ার
পর গরম পানির মধ্যে সিদ্ধ করে
খাওয়া হয় । অতীতে লোকেরা উত্সবের
সময় চিয়াও চি খেতেন , বিশেষ
করে চীনের চান্দ্র বর্ষের শেষ
রাতে অবশ্যই চিওয়া চি খেতে
হয় । চীনে চিওয়া চির পুর তৈরী
, চিওয়া চির আকার আর চিওয়া
চি খাওয়ার অভ্যাস সম্বন্ধে
বিচিত্র রীতি আছে ।
চিওয়া চির পুরে মাংস ছাড়া শাকসব্জিও
দেয়া হয় । পুর তৈরীর সময় মাংস
,শাকসব্জি ও নানা মশলা মেশানোর
পর ছুরি দিয়ে এগুলো জোরে টুকরা
টুকরা করে কাটতে হয় , কাটার
শব্দ প্রতিবেশীর কানে যায় ,প্রতি
পরিবারই চায় নিজের পুর কাটার
শব্দ অন্য পরিবারের চেয়ে বেশী
দীর্ঘস্থায়ী একং বেশী জোরে
হোক । পুরের মধ্যে শাকসব্জি
মেশানোর কারণ শুধু শুধু খাওয়ার
সময় আরো সুস্বাদু নয় , এতে
পরিবার আরো ধনী হওয়ার অর্থও
আছে , কারণ চীনা ভাষায় শাকসব্জির
উচ্চারণ হলো ছাই , চীনা ভাষায়
ধন-সম্পত্তির উচ্চারণও ছাই
। কাজেই পুরের মাংস ও শাকসব্জি
দীর্ঘসময় জোরে কাটার মানে পরিবারটির
স্থায়ীভাবে ধনী হওয়া ।
পুর তৈরী হওয়ার পর চাও চি তৈরীর
সময়ও অনেক রীতিনীতি আছে । বেশীর
ভাগ অঞ্চলের অধিবাসীরা ক্ষীণ
চাঁদের আকারের চাও চি তৈরী
করেন , কোনো কোনো অঞ্চলের অধিবাসীরা
সমৃদ্ধি জীবনের আশা রেখে ইউয়েন
পাও আকারের আর সুফলনের আশা
রেখে গমের শীষের আকারের চাওয়া
চি তৈরী করেন ।
চাওয়া চি তৈরী হওয়ার পর ফুটন্তপানির
মধ্যে সিদ্ধ করে খাওয়া হয়।
চিয়াও চি পুরোপুরি সিদ্ধ করার
জন্য সিদ্ধ করার সময় তিনবার
ঠান্ডা পানি দিতে হবে , চাওয়া
চি সিদ্ধ করতে সাধারণতঃ দশ
বারো মিনিট লাগে ।
চিয়াও চি খাওয়ার সময় অনেক চীনা
অধিবাসী , বিশেষ করে পল্লী
অঞ্চলের অধিবাসীরা প্রয়াত পূর্বপুরুষের
প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করার
জন্য প্রথম প্লেট চিয়াও চি
তাদের প্রতিকৃতি বা ছবির সামনে
উত্সর্গ করেন , দ্বিতীয় প্লেট
রন্ধন দেবতার প্রতি নিবেদন
করেন ।
চিয়াও চির দুই দিক সরু, মাঝখানে
এক বড় পেট ,
সিদ্ধের সময় প্রচুর চিয়াও চি
উঠা-নামা করে ।
বাটিতে রেখে প্রণাম করে ,
স্রষ্টার আশির্বাদ প্রার্থনা
করি ।
স্রষ্টা চিয়াও চি দেখে খুশি
মনে ,
সবাকে সুখশান্তি দেন ।
তার পর পরিবার পরিজন খেতে শুরু
করেন । তবে খাওয়ার সময় খেয়াল
রাখতে হবে যে যুগ্ম সংখ্যার
চাওয়া চি খেতে হয় , নইলে অমঙ্গল
মনে করা হয় । খাওয়া শেষে প্লেটে
অথবা চাওয়া চি সিদ্ধ করার বাটিতে
যুগ্ম সংখ্যার কয়েকটি চাও চি
রেখে দিতে হয় , এটার অর্থ হলো
সব সময় খাবারের কিছু বাকী থাকে
, জীবনে কখনো খাবারের অভাব
হবে না ।
প্রতি বছরের চান্দ্র বর্ষের
শেষ দিন সন্ধ্যায় উত্তর চীনের
অধিবাসীরা চিয়াও চি খান । পরিবার
পরিজনদের মধ্যে যারা দেশের
অন্য জায়গায় পড়াশুনা বা চাকরী
করেন , তাঁদের সে দিন রাতে
অবশ্যই বাড়ী ফিরে যেতে হয় ।
বছরের শেষ খাবার সবাই এক সংগে
চিয়াও চি তৈরী করেন এবং এক
সংগে চিয়াও চি ও অন্যান্য খাবার
খান ।
আসলে নাগরীকদের বাস্তব জীবনে
চিয়াও চি সম্পর্কিত রীতিনীতির
অনেক পরিবর্তন হয়েছে । যেমন
শহরের নাগরিকরা সময় বাঁচানো
আর সুবিধার জন্য দোকানের তৈরী
চিয়াও চি কিনে বাড়ীতে সিদ্ধ
করে খান অথবা এক সংগে রেস্তোঁরায়
গিয়ে চিয়াও চি খান । পল্লী
অঞ্চলে গ্রামবাসীরা নিজে চিয়াও
চি তৈরী করলেও কড়াকড়ি নিয়ম
আর নেই ।
|