প্রাচীন চীনের অধিবাসীরা বিভিন্ন
ধরনের গাছগাছরা সংগ্রহ করে নানা
ধরনের ভেষজ ওষুধ তৈরী করেন ।
ভেষজ ওষুধ অধিবাশীদের খাবারের
সংগে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত ।
কোনো কোনো ওষুধ খাওয়া যায় , আবার
কোনো কোনো খাবার ওষুধ হিসেবে
ব্যবহার করা যায় । চীনে একটি
কথা আছে , এতে বলা হয়েছে , ওষুধ
খাওয়ার তুলনায় চিকিত্সার ভুমিকা
সম্পন্ন খাবার খাওয়াই ভালো ।
আজ পর্যন্ত চীনের অনেক বিশেষ
রেস্তোরায় এই বিশেষ ধরনের খাবার
সরবরাহ করা হয় । খৃষ্টপূর্ব
১০৪৬ সালের চৌ রাজবংশ থেকেই
চীনারা এই ধরনের চিকিত্সার
ভুমিকাসম্পন্ন খাবার খেতে শুরু
করেন । প্রাচীন পুথিপত্রে বিশেষ
ধরনের খাবার খেয়ে রোগ নিরাময়ের
প্রবন্ধ আছে । থান রাজবংশের
বিখ্যাত চিকিত্সক সুন সি মিয়াও
তার ‘ছিয়েন চিন ফান ’ ও ‘ ছিয়েনচিনইফান
’ নামক দুটি বইতে বিশেষ ধরনের
খাবার দিয়ে রোগ নিরাময়ের কথা
বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।
তিনি মনে করে , উপযুক্ত খাবার
মানুষের সুসাস্থ্য বজায় রাখার
ভিত্তি , অসুস্থ হলে ডাক্তারের
কাছে না গিয়ে নিজের ইচ্ছা মতো
ওষুধ খাওয়া উচিত নয় । রোগীকে
ওষুধ দেয়ার আগে ডাক্তারকে রোগীর
অসুখের কারণ নির্ণয় করতে হবে
, তার পর তাকে বিশেষ ধরনের
খাবার দিয়ে চিকিত্সার প্রয়াস
চালাতে হবে , যদি এই সব খাবার
খেয়েও রোগী সুস্থ হতে না পারেন
, তার পরই শুধু তাকে ওষুধ দেবেন
।
প্রাচীন চীনের চিকিত্সক সুন
সি মিয়াওয়ের দীর্ঘায়ু হয়েছে
, তিনি এক শ বছর পর্যন্ত জীবিত
ছিলেন , কাজেই চীনারা তার এই
তত্ত্ব গ্রহন করেন এবং বিশ্বাস
করেন । আজ পর্যন্ত চীনাদের
নিজের শরীর আরো তেজিয়ান করার
জন্য বিশেষ ধরনের খাবার খাওয়ার
অভ্যাস আছে ।
চীনে অনেক খাবার ওষুধ হিসেবে
ব্যবহার করা যায় । যেমন অনেক
শাকসব্জি রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ের
ভুমিকা আছে । ঠান্ডা লেগে সর্দি
হলে অনেকে গরম পানির মধ্যে
কিছু আদা ও পিয়াজ পাতার সাদা
অংশ আর কিছু গুড়ার চিনি দিয়ে
সিদ্ধ করে খান , এই আদা ,পিয়াজ
পাতা আর গুড়ার সুপ খেয়ে লেপ
মুরি দিয়ে শুয়ে থাকার পর শরীর
থেকে প্রচুর ঘাম বের হয় , তখন
রোগী সুস্থ মনে করেন । তা ছাড়া
চীনে অনেকের সকালবেলা আদা আর
সন্ধ্যাবেলা মুলা খাওয়ার অভ্যাস
আছে , রান্নার মসলা লবন , ভিনিগার
, আদা, পিয়াজপাতা আর রসুনের
চিকিত্সা ভুমাকা আছে । চীনে
কোনো কোনো লোক কোকাকোলার মধ্যে
কিছু ভিনিগার মিশিয়ে এক ধরনের
নতুন পানীয় তৈরী করেছেন , এই
পানীয় শরীরের পক্ষে ভালো ,
অনেকে খেতে পছন্দ করেন ।
অনেক ফুলও ওষুধ হিসেবে ব্যবহার
করা যায় । চীনের থান রাজবংশ
থেকেই চীনারা ফুল দিয়ে বিভিন্ন
ধরনের খাবার তৈরী করতে শুরু
করেন ।
ফুলের প্রজাতি বৈচিত্র্য ।
উত্তর চীনে প্রায় এক শ’ধরনের
ফুল খাওয়া যায় , দক্ষিণ-পশ্চিম
চীনে উদ্ভিদের রাজ্য বলে পরিচিত
ইউন নান প্রদেশে ২৬০ ধরনের
ফুল খাওয়া যায় ।
ফুল দিয়ে তৈরী তরিতরকারী দিয়ে
রোগ চিকিত্সা করা যায় , বিশেষ
করে নারীরা এই ধরনের খাবার
খেলে তাঁদের শরীরের উপকার হবে
। যেমন প্রেমের প্রতীক—গোলাপ
ফুল মেয়েদের রক্তচলন আর মুখের
চামড়ার পক্ষে ভালো , পিচের
ফুল মাছ বা চিংড়ির সংগে রান্না
করা তরকারী রোগীর পাকস্থলী
ও রক্তসঞ্চালনের পক্ষে হিতকর
।
চীনের অনেক লোক তরিতরকারী ,
নুডুল্স ও জাউয়ের মধ্যে শরীরের
পক্ষে হিতকর ভেষজ ওষুধ দেন
, চীনের এই ধরনের রেস্তোঁরাও
আছে । এই ধরনের খাবারের সংখ্যা
বেশী । ছোট বাচ্চার হজম শক্তি
বাড়ানোর জন্য তাদের বিশেষ ধরনের
হজমি জাউ খাওয়ানো হয় , এই ধরনের
হজমি জাউয়ে চাল ছাড়া হজমের
পক্ষে হিতকর মিষ্টি আলু , চীনা
ই মি আর শুকনো পারসিমোম আছে
, সুপের মধ্যে কমলার শুকনা
খোসা ও ছুয়ান পেই রেখে কাশি
চিকিত্সার এক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার
করা যায় । তা ছাড়া সুপে জিনসেনের
রস দিলে রোগী ও বয়োবৃদ্ধদের
শরীরের পক্ষে হিত্কর ।
চীনের খাদ্যদ্রব্য তৈরী আইনে
বলা হয়েছে , খাদ্যদ্রব্যের
মধ্যে ওষুধ মেশানো নিষিদ্ধ
। আইনের এই কথা চীনের জনসাধারণের
খাদ্য অভ্যাসের সংগে সংগতিপূর্ন
নয় , এই সমস্যা সমাধানের জন্য
সংশ্লিষ্ট বিভাগ খাদ্য দ্রব্য
তৈরীর সময় খাদ্যের মধ্যে কয়েক
ডজন চীনা ওষুধ মিশিয়ে দেয়ার
অনুমতি দিয়েছে , এই সব চীনা
ওষুধের মধ্যে আছে চীনা কুল
, শুকনো আদা , হো-থ্রোন ফল
ও পাদিনা ইত্যাদি ।
চীনের ওষুধ মেশানো খাবার আন্তর্জাতিক
বাজারেও প্রবেশ করেছে । যেমন
কমলার চামড়া দিয়ে তৈরী চা ,
চন্দ্রমল্লিকা ফুল-মদ , জলপাই
আর ফু লিন কেক ইত্যাদি খাবার
অধিক থেকে অধিকতর বিদেশীর সমাদর
পাচ্ছে ।
|