চীনের একটি প্রবাদ আছে , ওষুধ
সেবনের চেয়ে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াই
ভালো । এর মানে নিজেকে আরো স্বাস্থ্যবান
করার জন্য দৈনন্দিন খাবার ও খাওয়ার
অভ্যাস আরো উপযুক্ত করা দরকার
। যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো ,
তারা নিজেদের খাওয়া-দাওয়া ক্ষেত্রে
অধিকতর বেশী মনোযোগ দেন । চীনে
সামাজিক জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে
খাওয়া দাওয়ার বিশেষ রীতি আছে
। যেমন উত্সবের খাবার , বিয়ে
অনুষ্ঠান ও শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের
খাবার , বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের
খাবার , জন্মবার্ষিকীর খাবার
ও নতুন সন্তান জন্ম হওয়ার বিশেষ
খাবার ইত্যাদি। আত্মীয়স্বজন
ও বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে আদান-প্রদানের
সময় লোকেরা পরস্পরের সাথে উপহার
বিনিময় করেন । যেমন আত্মীয়ের
বাচ্চা হয়েছে বা বাড়ী বদল হয়েছে
, তাদের বাড়ীতে যাওয়ার সময়
সাধারণতঃ কিছু উপহার নেওয়া
হয়। অতিথিদের স্বাগত জানানোর
জন্য স্বাগতিক ভালো ভালো খাবার
দিয়ে অতিথিদের আপ্যায়ন করেন
। ব্যবসা করার সময়ও ব্যবসায়ীরা
সাধারণতঃ রেস্তোঁরায় খাওয়ার
সঙ্গে সঙ্গে আলাপ করেন , খাওয়া
শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসার
আলাপও শেষ হয় ।
খাওয়ার ব্যাপারে চীনের বিভিন্ন
জায়গার রীতিনীতিও একই নয় ।
পেইচিংয়ে প্রাচীনকালে অতিথিদের
নুডুল্সখাওয়ানো হত । যদি মেহমান
স্বাগতিকদের বাসায় থাকেন ,
তাহলে তাকে স্বাগত জানানোর
জন্য ‘চিয়াও চি ’ নামে এক ধরনের
মাংসের পুর দেয়া পিঠা খাওয়ানো
হয় । বন্ধু বা আত্মীয়ের বাসায়
বেড়াতে গেলে আট ধরনের কেক-
জাতীয় খাবার উপহার হিসেবে দিতে
হয় । দক্ষিণ চীনের পল্লী অঞ্চলে
অতিথি আসলে চায়ের কাপ দেয়ার
পর অতিথিদের দু-তিনটা ডিমের
সুপ বা অন্যান্য জল খাবার দেওয়ার
রীতি আছে , জল খাবার খাওয়ার
পর দুপুর বা সন্ধ্যাবেলার খাবার
তৈরী করা হয় ।
দক্ষিণ-পূর্ব চীনের ফুচিয়েন
প্রদেশের ছুয়েন চৌ শহরে স্থানীয়
অধিবাসীরা অতিথিদের ফল খাওয়ান
। তারা এই ফলকে ‘ থিয়েন থিয়েন
’ বলেন , তার মানে মিষ্টি ।
ফলগুলোর মধ্যে কমলা থাকে ,
কারণ স্থানীয় ভাষায় কমলালেবুর
উচ্চারণ ‘ চি ’ কল্যান উচ্চারণের
সামিল . কাজেই তারা মেহমানদের
কমলালেবু খাওয়ানোর সঙ্গে সঙ্গে
তাদের কল্যাণ আর তাদের জীবন
কমলালেবুর মতো মিষ্টি হবে বলে
কামনা করেন।
মেহমানদের আপ্পায়ন করার সময়
তরি-তরকারীর সংখ্যাও একই নয়
। পেইচিং শহরে সাধারণতঃ কমপক্ষে
দুটি ঠান্ডা আর আটটি গরম তরকারী
থাকতে হয় । উত্তর পূর্ব চীনের
হেইলুঙচিয়াং প্রদেশে একই তরকারীর
দুই প্লেট থাকতে হয় । কোনো
কোনো অঞ্চলে তরকারীর মধ্যে
মাছ থাকতে হয় , এর অর্থ হলো
জীবনে কোনো অভাব না থাকা ।
নাগরিকদের জীবনে বিয়ে সম্পর্কিত
ভোজানুষ্ঠান সবচেয়ে বেশী ।
যেমন বিয়ে প্রস্তাব ভোজ , বর-কনে
দেখা-সাক্ষাতের ভোজ , বাগদান
ভোজ , বিয়ে অনুষ্ঠানের ভোজ
আর বিয়ের পর কনের বাপ-মার বাড়ী
প্রত্যাবর্তন ভোজ ইত্যাদি ।
এই সব ভোজানুষ্ঠানের মধ্যে
বিয়ে অনুষ্ঠানের ভোজ সবচেয়ে
আড়ম্বর । যেমন পশ্চিম চীনের
শানসি প্রদেশের কোনো কোনো অঞ্চলে
বিয়ে অনুষ্ঠানের প্রতিটি তরকারীর
নাম আছে । যেমন প্রথম তরকারীর
নাম হলো ‘লাল মাংস’ , চীনে
লাল রংয়ের অর্থ হলো আনন্দ ,
এই তরকারীর অর্থ হলো গোটা পরিবার
আনন্দে ভরপুর । দ্বিতীয় তরকারীর
নাম হলো ‘ ছুয়েন চিয়া ফু ’
, এর অর্থ হলো গোটা পরিবারই
মহাসম্মীলন ও সুখশান্তিতে থাকা
। তৃতীয় পরিবেশন এক মিষ্টি
, এই মিষ্টি আঠা-চাউল , কুল
, শুকনা ফল , পদ্মফুলের বীজ
প্রভৃতি আট ধরনের খাবার দিয়ে
তৈরী করা হয় , এর অর্থ হলো
স্বামী-স্ত্রী পক্ককেশ পর্যন্ত
সুখী জীবন যাপন করবেন । পূর্ব
চীনের চিয়াং সু প্রদেশের পল্লী
অঞ্চলে বিয়ে অনুষ্ঠানে ১৬টি
তরকারী , ২৪টি তরকারী অথবা
৩৬টি তরকারী থাকার অভ্যাস আছে
। বয়োবৃদ্ধদের জন্মবার্ষিকী
উপলক্ষে অনুষ্ঠিত ভোজানুষ্ঠানে
দীর্ঘ নুডুল্স থাকতে হবে ।
পূর্ব চীনের হানচৌ শহর আর উত্তর
চিয়াং সু অঞ্চলে বৃদ্ধদের জন্মবার্ষিকী
উপলক্ষে দুপুর বেলায় দীর্ঘকায়
নুডুল্স খাওয়া হয় আর সন্ধ্যায়
ভোজানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়
। হানচৌশহরের অধিবাসীরা নুডাল্স
খাওয়ার সময় পরিবারের প্রত্যেক
সদস্য নিজের বাটি থেকে দু-একটি
নুডুল্স বের করে বৃদ্ধ বা বৃদ্ধাকে
দেন , এর মানে হলো আয়ু বাড়ানো
। তা ছাড়া সেদিন নুডুল্স এক
বাটি খেলে হবে না , প্রত্যেককেই
দুই বাটি নুডুল্সখেতে হবে ,
অর্ধেক বাটি হলেও দু বার খেতে
হবে , তা না হলে অকল্যান বলে
মনে করা হয় ।
|