চীনাদের বৈশিষ্ট্যময় খাওয়ার কাঠি ---খুয়াই চি

       পৃথিবীতে প্রধানতঃ তিন ধরনের খাবার আহার করার পদ্ধতি আছে । শতকরা ৪০জন লোক হাত দিয়ে খান , শতকরা ৩০জন লোক কাটা ও চামচ দিয়ে খান আর শতকরা ৩০জন লোক খুয়াই চি অর্থাত চপস্টিক্স দিয়ে খান।  

  চীনারাই খাওয়ার কাঠি খুয়াই চি আবিষ্কার করেছেন । তিন হাজার বছর আগে ইন সান রাজবংশ থেকেই চীনারা চপস্টিক্স ব্যবহার করতে শুরু করেন । তবে সেই আমলে এর নাম খুয়াই চি ছিল না , খাওয়ার কাঠির তখনকার নাম ছিল ‘ চু ’ । কেন খাওয়ার কাঠির নাম ‘ চু ’ থেকে এখনকার ‘ খুয়াই চি ’তে নাম পরিবর্তন হয়েছে ? প্রাচীনকালের পুঁথিপত্র থেকে জানা গেছে , পূর্বচীনের ইয়াংসি নদী বরাবর অঞ্চলের অধিবাসীরা মনে করতেন , খাওয়ার কাঠি ‘ চুর ’ উচ্চারণ চীনাভাষায় থামা বা বন্ধ শব্দের উচ্চারণ একই , মাঝিরা সব সময় নদীতে নৌকা চালাতেন বলে এই ধরনের উচ্চারণ পছন্দ করতেন না , তাই তারা খাওয়ার লাঠি চু না বলে তার বিপরীত অর্থ খুয়াই অর্থাত দ্রুত বলেন । তখন থেকে চীনার খাওয়ার কাঠিকে খুয়াই চি বলতেন । 

  প্রাচিনকালের অধিবাসীরা আগুনে খাবার ঝলসানোর সময় হাত যাতে আগুনের তাপে পুড়ে না যায় , সেই জন্য গাছের দুটি ডালে খাবার রাখতেন এবং এই গাছের ডাল দিয়ে খাবার খেতেন ।এই ধরনের ডালই সবচেয়ে আগেকার খাওয়ার কাঠি—খুয়াই চি । খুয়াই চি হলো দুটি চিকোন কাঠি , খুব সহজেই তৈরী করা যায় , চীনের কুয়াই চির বৈশিষ্ট হলো কাঠি দুটির উপর অংশ চার কোনাকার আর নীচ অংশ গোল আকার , উপর অংশ একটু মোটা আর নীচ অংশ সরু । এই ধরনের খুয়াই চি ব্যবহার করার সময় সুবিধা , টেবিলে রাখার সময় গড়িয়ে পড়ে যায় না , নীচ অংশ গোল আকার বলে খাওয়ার সময়ও সুবিধা হয় । জাপানীরাও খুয়াই চি দিয়ে খান , কিন্তু তাদের খুয়াই চি একটু অন্যরকম , জাপানের খুয়াই চি গোলাকার , জাপানীরা ঠান্ডা ও কাঁচা খাবার খেতে পছন্দ করেন , তারা গোল আকারের খুয়াই চি ব্যবহার করতে সুবিধা বোধ করেন ।  

  সাধারণতঃ কাঠ বা বাঁশ দিয়ে খুয়াই চি তৈরী করা হয় । কিন্তু প্রাচীনকাল থেকেই ধনী ব্যক্তিরা দামী ধরনের খুয়াই চি ব্যবহার করতে শুরু করেন । দু হাজার বছর আগে থেকেই চীনারা হাতির দাঁতের ও ব্রোঞ্জের খুয়াই চি ব্যবহার করেন । রাজপ্রাসাদ , পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা ও ধনী পরিবারে সোনা ও রুপা দিয়ে তৈরী খুয়াই চি ব্যবহার করা হয় , কোনো কোনো জায়গায় দামী পাথর দিয়ে তৈরী খুয়াই চির মাথায় রুপোর লেপ জড়ানো হয় , রুপার মাথার খুয়াই চির আরেক ভুমিকা হলো খাবারে বিষাক্ত জিনিস আছে কিনা , তা’ নির্ণয় করা , খাবারে বিষ থাকলে খুয়াই চির মাথার রৌপ্য লেপ তত্ক্ষাত কালো বা সবুজ হয়ে যায় ।  

  খুয়াই চি অথার্ত চপষ্টিক্স চীনাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা নেয়। চীনের কোনো কোনো জায়গায় বিয়ের আগে কনের যৌতুকের মধ্যে অবশ্যই খাওয়ার বাটি ও খুয়াই চি থাকতে হয় , লাল দড়ি দিয়ে বাঁধানো এই বাটি ও খুয়াই চিকে নতুন জীবন বাটি বলা হয় , এর মানে নতুন দম্পতির নতুন জীবন শুরু হবে , তা ছাড়া খুয়াই চির উচ্চারণ দ্রুত শব্দের উচ্চারণ একই বলে এই নতুন জীবন বাটির আরেক অর্থ হলো তাড়াতাড়ি নতুন সন্তান হবে । উত্তর চীনের পল্লী অঞ্চলে বিয়ে অনুষ্ঠানের পর আত্মীয়সজন ও বন্ধুবান্ধব জানালা থেকে বাসর ঘরে খুয়াই চি ছুড়েন , এই রীতি থেকেও নতুন দম্পতির কল্যান ও যথাশীঘ্র বাচ্চা হওয়ার কামনা প্রকাশ করা হয় । 

  চীনের খুয়াই চি দুটি চিকোন কাঠি মাত্র হলেও ব্যবহার খুব সহজ নয় । পাশ্চাত্য দেশগুলোতে খুয়াই চি ব্যবহারের প্রশিক্ষন কেন্দ্র আছে , চিকিত্সাবিদরা বলেছেন , খুয়াই চি দিয়ে খাওয়া শরীরের ত্রিশাধিক গাঁট ও পঞ্চাশটিরও বেশী মাংসপেশীর নাড়াচাড়ার সংগে জড়িত , এটি হাত ও মস্তিষ্কের পক্ষে ভালো । চীন হচ্ছে খুয়াই চির জন্মস্থান , পৃথিবীতে প্রথম খুয়াই চি জাদুঘর জার্মানীতে । এই জাদুধরে দশ হাজারের বেশী জোড়া সোনা ,রুপা , দামী পাথর , পশুর হাড় প্রভৃতি উপকরেনর খুয়াই চি প্রদর্শিত হয়েছে , এই সব খুয়াই চি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে , প্রতি দিন প্রচুর দর্শক ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ের এই সব খুয়াই চি দেখতে যান ।