চীনের ইতিহাস সুদীর্ঘ,রাষ্ট্রীয়
ভুভাগ বিস্তীর্ণ, তাই চীনের বিভিন্ন
জায়গায় বিয়ে সম্পর্কিত রীতিনীতি
একই নয় , কিন্তু মূলবিষয়গুলো
প্রায় একই রকম । প্রাচীন
চীনে বিয়ের মোট ছয়টি অনুষ্ঠান
আছে , এগুলোর মধ্যে আছে মেয়েপক্ষকে
যৌতুক দেওয়া অনুষ্ঠান , বিবাহের
বাগদান অনুষ্ঠান আর বিয়ের ভোজ
ইত্যাদি । অতীতকালে একটি ছেলে
যদি এক মেয়েকে পছন্দ করতেন
, তাহলে তিনি মেয়ের বাড়ীতে
বিয়ের প্রস্তাব করতে ঘটককে
পাঠাতেন । যাওয়ার আগে ছেলেটি
ঘটককে কিছু উপহার দেয়া ছাড়াও
মেয়েকেও কিছু উপহার দিতেন ।
ঘটক দু পক্ষের নাম , বয়স আর
পারিবারিক অবস্থা প্রভৃতি তথ্য
দু পক্ষকে জানিয়ে দিত । দু
পক্ষ মোটামুটি রাজি হলে ঘটক
মেয়ে পক্ষের বাড়ীতে ছেলে পক্ষ
যাওয়ার দিন বেছে দিত । ছেলে
মেয়ের বাড়ীতে গিয়ে মেয়ের চেহারা
নিজ চোখে দেখা ছাড়া মেয়ের পরিবারের
আর্থিক অবস্থা ও মেয়ের চরিত্র
ও মেজাজ খোজখবর নিতে পারতেন
। প্রাচীন চীনে বিয়ের আগে মেয়ে
ছেলের বাড়ীতে যেত না , এখন
যুগ পরিবর্তন হয়েছে ,আধুনিককালে
বিয়ের আগে অনেক মেয়ে বাবা মার
সংগে ছেলের বাড়ীতে গিয়ে ছেলে
পরিবারের অবস্থার খোজখবর নেন
। পেইচিংয়ের উপকন্ঠের কিছু
কিছু জায়গায় এরকম রীতি আছে
, যদি মেয়ে ও তার বাবা মা বা
আত্মীয়সজন ছেলের বাড়ীতে বেড়াতে
গিয়েছেন এবং দুপুর বেলায় এক
সংগে খেতে রাজী হন , তাহলে
ছেলে পক্ষ বুঝতে পারে যে মেয়ে
ছেলেকে পছন্দ করেছেন ।
বিবাহের বাগদান অনুষ্ঠান হচ্ছে
বিয়ের অনুষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ
অংশ । যদিও এই অনুষ্ঠানের কোনো
আইনগত আনুষ্ঠানিকতা নেই , কিন্তু
বর ও কনে দু পক্ষই এই অনুষ্ঠানকে
গুরুত্ব দেয় । দক্ষিণ চীনের
উন চৌ শহরে চীনারা বিবাহের
বাগদান অনুষ্ঠানে পরস্পরকে
বিনিময় আঙটিকে বিয়েটি চিরস্থায়ী
হওয়ার প্রতীক হিসেবে মনে করেন
। এই অনুষ্ঠানের পর বিয়ের দুপক্ষের
সম্পর্কের আর পরিবর্তন হবে
না ।
বিয়ে অনুষ্ঠানের দিন কনে সাধারণতঃ
লাল পোশাক পরেন , আধুনিক যুগে
অনেক কনে পাশ্চাত্যে প্রচলিত
সাদা রংয়ের লম্বা স্কার্ট পরেন
। নিজের বাড়ী ত্যাগ করার সময়
কনেকে কাঁদতে হয় , সেদিন থেকে
মেয়ে বাবা মার বাড়ী ত্যাগ করে
স্বামীর বাড়ীতে থাকবেন বলে
বিদায়ের সময় বাবা মাও দুঃখ
প্রকাশ করেন । চীনের কোনো কোনো
জায়গায় স্বামীর বাড়ীর দ্বার
প্রবেশের আগে কনেকে এক আগুন
জ্বালানো গামলা পার হতে হবে
, এই রীতির অর্থ হলো সব অমঙ্গল
জিনিস আগুনে পুড়ে যাবে আর নতুন
দম্পতির জীবন আগুনের মতো উজ্জ্বল
হবে । স্বামীর বাড়ী প্রবেশের
পর বর-কনে আকাশ ও মাটির প্রতি
, দুপক্ষের বাবা-মা আর স্বামী-স্ত্রী
পরস্পরকে প্রণাম করে শ্রদ্ধার্পন
করেন এবং এক সংগে বিয়ের মদ
পান করেন। সেদিন কোনো কোনো
দম্পতি একে অপরের অল্প চুল
কেটে এক সাথে রেখে বিয়ের স্মৃতি
হিসেবে সযত্নে রাখেন ।
বিয়ের ভোজ হলো বিয়ের সবচেয়ে
ধুমধাম অনুষ্ঠান । বিয়ের ভোজে
প্রচুর মেহমান আসেন । ভোজ অনুষ্ঠানে
নতুন বধু মেহমানদের জন্য মদের
কাপ পূর্ণ করেন এবং ভোজ অনুষ্ঠানে
অংশ নেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান
। ভোজ অনুষ্ঠানের পর অতিথিরা
নতুন দম্পতিকে বাসর ঘরে পৌছে
দেন । অল্পবয়সী ছেলেমেয়ে বর
ও কনেকে গান বা নাচ করার অনুরোধ
করতে পারে অথবা বরকনে এক সংগে
একটি ফল খাওয়ার প্রস্তাব করতে
পারে , এই সময় নতুন দম্পতি
রাগ করতে পারে না , তাদের মেহমানদের
সব অনুরোধ ধৈয্যের সংগে পূরণ
করতে হয় , জীবনের এই দিনের
কথা বর ও কনের পক্ষে স্মরনীয়
।
|