রন্ধন শালার দেবতার প্রতি শ্রদ্ধার্পন সম্পর্কিত উপকথা

       দু হাজার বছর ধরে চীনের বিভিন্ন জায়গায় , বিশেষ করে চীনের পল্লী অঞ্চলে চান্দ্র বর্ষের শেষ মাসের ২৩তম দিন রন্ধন শালার দেবতার প্রতি শ্রদ্ধার্পনের অভ্যাস আছে । রন্ধন শালার দেবতা প্রাচীন চীনের রূপকথার এক দেবতা । 

  তিনি হচ্ছেন স্বর্গীয় রাজার পৃথিবীর প্রতিটি পরিবারে পাঠানো রাজকীয় কর্মকর্তা , প্রতি বছর রন্ধন শালার দেবতা স্বর্গীয় রাজাকে পৃথিবীর অবস্থা সম্বন্ধে অবগত করেন । কাজেই রন্ধন শালার দেবতাকে তোশামদ করার জন্য অধিবাসীরা প্রতি বছর তাকে শ্রদ্ধার্পনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন । রন্ধন শালার দেবতাকে শ্রদ্ধার্পন সম্বন্ধে একটি কাহিনীও আছে ।  

  অনেক অনেক বছর আগে চান সেন নামে এক ধনী ব্যক্তি ছিলেন , তার স্ত্রীর নাম তিন সিয়ান , তিন সিয়ান যেমন সুন্দর, তেমনি লক্ষী , স্বামী-স্ত্রীর জীবন অত্যন্ত সুখী । 

  একদিন চান সেন ব্যবসার জন্য বাইরে গেলেন । বাইরে থাকাকালে চান সেন হাই থান নামক এক সুন্দরী মেয়েকে দেখলেন এবং সংগে সংগেই তাকে ভালোবাসতে শুরু করেন । হাই থান দেখলেন চান সেন এক ধনী লোক , তাই ইচ্ছা করে তার সংগে সম্পর্ক বাড়ানোর চেষ্টা করলেন । তাই অল্প দিনের মধ্যে চান সেন হাই থানের সংগে বিয়ে করে তাকে বাড়ীতে নিয়ে গেলেন । প্রাচীন চীনে ধনীদের তিন-চারটি বিয়ে করার ঘটনা স্বাভাবিক । চান সেনের বাড়ীতে গিয়ে হাই থান দেখলেন চান সেনের স্ত্রী তিন সিয়ান তাঁর চেয়েও সুন্দর , তাই দেখে হাই থানের ঈর্ষা হলো । হাই থান চান সেনকে তার স্ত্রী তিন সিয়ানকে তালাক দিতে পীড়াপীড়ি করতে শুরু করেন , চান সেন কোনো উপায় না দেখে তিন সিয়ানকে বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দিলেন । 

  চান সেন ব্যবসার প্রতি অমনোযোগী হয়ে পড়লেন এবং দু বছর হতে না হতে চান সেন পরিবারের সমস্ত টাকা শেষ হয়ে যায় , চান সেনের টাকা-পয়সা শেষ হচ্ছে দেখে হাই থান চান সেনকে ছেড়ে অন্য লোককে বিয়ে করলেন । চান সেন কোনো উপায় না দেখে রোজ ভিক্ষা করে দিন কাটাতে বাধ্য হলেন । শীতকালের একদিন বরফ পড়ছিল , চান সেন শীতে আর ক্ষুধায় এক ধনী পরিবারের দরজার সামনে অজ্ঞান হলেন । সেই পরিবারের একজন বুওয়া চান সেনকে দেখে তাকে রন্ধন শালায় নিয়ে গেলো এবং গৃহিনীকে খবর দিলো । এই পরিবারের গৃহিনী ঠিক দু বছর আগে চান সেনের তালাক দেয়া স্ত্রী তিন সিয়ান । চান সেন তিন সিয়ানকে দেখে লজ্জায় পালাতে চাইলেন , কিন্তু কোথায় পালাবেন ? তিন সিয়ান বুঝতেই পারেন নি যে সামনের এই ভিক্ষুক নিজেরই স্বামী ছিলেন । হঠাত তিন সিয়ান দেখলেন ভিক্ষুক উনুনের ভিতরে ঢুকলো , সামনে গিয়ে তিনি দেখলেন লোকটি ঠিক নিজের স্বামী , ততক্ষণে চান সেন আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছেন । এই ঘটনা তিন সিয়ানের মনে বড় আঘাত হানলো , দুঃখে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন , কিছু দিন পর তিন সিয়ানও মারা গেলেন । স্বর্গীয় রাজা এই ঘটনা শুনলেন , তার ধারনা , যদিও চান সেনের ভুল ছিল , তবে তিনি নিজের ভুল জানতে পেরে লজ্জায় আত্মহত্যা করেছেন বলে তিনি চান সেনকে রন্ধন শালার দেবতা আর তিন সিয়ানকে রন্ধন শালার দেবী নাম দিলেন । 

  রন্ধন শালার দেবতা যাতে স্বর্গীয় রাজার সামনে পৃথিবীর খারাপ কথা না বলেন , সেই জন্য প্রাচীন চীনে লোকেরা মিষ্টি জাতীয় খাবার রন্ধন শালার দেবতার ছবির সামনে রেখে তার প্রতি শ্রদ্ধার্পন করতেন । এই ধরনের খাবার মিষ্টি ছাড়াও আঠালো হয় , রন্ধন শালার দেবতা এই খাবার খেতে খেতে মুখ দিয়ে কথা বলতে অসুবিধা হবে , এই ভাবে তিনি আর স্বর্গীয় রাজার সামনে পৃথিবীর মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে পারবেন না । প্রাচীন চীনের এই উপকথা থেকে তখনকার চীনা অধিবাসীদের মনোভাব প্রতিফলিত হয়েছে ।