প্রতি বছরের বসন্তকালে চীনারা
ঐতিহ্যিক ছিংমিং উত্সব উদযাপন
করেন । ছিংমিং উত্সব
চীনের চান্দ্র বর্ষের ২৪টি
পর্বের অন্যতমো । প্রতি বছরের
এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে উদযাপিত
ছিংমিং উত্সবের দিন চীনারা
সমাধিস্থলে গিয়ে প্রয়াত বাবা-মা
বা আত্মীয়সজনের প্রতি শ্রদ্ধা
নিবেদন করেন , উপকন্ঠের পার্কগুলোতে
গিয়ে বসন্ত উত্সবের মনোরম দৃশ্য
উপভোগ করেন অথবা দরজার উপর
উইলো গাছের পাতা ঝুলিয়ে বসন্ত
উত্সবকে স্বাগত জানান ।
চীনের কোনো কোনো জায়গায় ছিংমিং
উত্সবকে ভূত উত্সব বলা হয় ।
কারণ চীনে এই দিন পূবর্পুরুষ
এবং পরিবারের প্রয়াত সদস্যদের
প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের দিন
। ছিংমিং উত্সবের আগে বা পরে
লোকেরা সমাধিস্থলে যান । তারা
কবরস্থানের আগাছা পরিষ্কার
করেন , কবরের উপর কিছু নতুন
মাটি দেন , মোমবাতি জ্বালান
এবং কবরের সামনে ফুল দেন ।
কোনো কোনো অঞ্চলে চীনারা প্রাচীন
রীতি অনুসারে এক ধরনের বিশেষ
কাগজ দিয়ে তৈরী পরলোকের টাকা
জ্বালিয়ে কবরে নতজানু করে প্রণাম
করেন ।
প্রাচীন পুথিপত্রে বলা হয়েছে
খৃষ্টপূর্ব ২০৬ সাল শুরু হওয়া
হান রাজবংশের আমল থেকেই ছিংমিং
উত্সব উদযাপন শুরু হয় , খৃষ্টীয়
১৩৬৮ সাল থেকে শুরু হওয়া মিং
আর ছিং রাজবংশের আমলে ছিংমিং
উত্সবে চীনারা করবস্থলে বিশেষ
ধরনের কাগজের টাকা জ্বালানো
ছাড়া কবরস্থানে দশটি তরিতরকারী
রাখেন ।
ছিংমিং উত্সবেপূর্বপুরুষদের
কবরে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের
অভ্যাস আজ পযর্ন্ত প্রচলিত
। তবে শ্রদ্ধা নিবেদনের প্রণালী
আগের চেয়ে সহজ হয়েছে । এখন
ছিংমিং উত্সবে স্কুলের ছাত্রছাত্রী
বা সরকারী সংস্থার কর্মীরা
দলে দলে শহীদদের কবরের সামনে
গিয়ে ফুলের তোড়া বা পুষ্পস্তবক
অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
প্রতি বছরের ছিংমিং উত্সব বসন্তকালের
শুরুতে হয় বলে চীনারা এই উত্সবে
শহীদ ও পূর্বপুরুষের প্রতি
শ্রদ্ধা নিবেদন ছাড়া উপকন্ঠে
বসন্তকালের দৃশ্য উপভোগ করেন
, তাই চীনের কোনো কোনো জায়গা
ছিংমিং উত্সবকে ‘থাছিন’ উত্সব
বলেন , ‘ থাছিন ’র অর্থ বসন্তকালের
সবুজ সমারোহের মধ্যে ঘুরে বেড়ানো।
প্রাচিনকালে ছিংমিং উত্সবে
‘চিছাই ’ নামে এক ধরনের বুনো
সব্জি সংগ্রহের অভ্যাস ছিল
। প্রতি বছরের ছিংমিং উত্সবের
সময় অল্পবয়সী মেয়ে অথবা পরিবারের
বউ-ভাবী উপকন্ঠে গিয়ে বসন্তকালের
মনোরম দৃশ্য উপভোগ করার সংগে
সংগে বুনো সব্জি সংগ্রহ করেন
, তারা এই সব বুনো সব্জি টুকরো
টুকরো করে কেটে ডাম্পলিং বা
ইউয়েন সিয়াওয়ের পুরে মিশিয়ে
খান , বুনো শব্জীর ডাম্ললিং
ও ইউয়েন সিয়াওয়ের এক বিশেষ
সুগন্ধ আছে , খেতে মজা লাগে
, কোনো কোনো মেয়ে ছিংমিং উত্সবের
দিন বুনো সব্জির ছোট ছোট সাদা
ফুল চুলে গুজেন , দেখতে খুব
সুন্দর ।
চীনে ছিংমিং উত্সবে ঘুরি উড়ানো
, দড়ি টানাটানি আর দোলনায় দোল
খেলারও অভ্যাসও আছে ।
ছিংমিং উত্সব বসন্তকালের সুচনা
বলে এই সময় আবহাওয়া আরামদায়ক
, যেমন শীত কম , তেমনি নেই
গরম । গাছে কচিপাতা বের হয়
, সর্বত্রই মনোরম দৃশ্য বিরাজ
করে । এই সময় কৃষকদের বীজ বপনের
সময় , চীনের কৃষকরা জানেন ,
ছিংমিং উত্সবের কাছাকাছি সময়
শস্যের বীজ বপন করলে ফসল ভালো
হবে , যে কোনো গাছের চারা লাগালে
গাছ সতেজভাবে বড় হবে ।
ছিংমিং উত্সবে চীনারা উইলো
গাছ লাগাতে পছন্দ করেন ।
|