তুং চি চীনের পঞ্জিকায় ২৪টি পর্বের মধ্যে একটি । তুং চিও চীনাদের একটি ঐতিহ্যিক উত্সব । দু হাজার সাত শ বছর আগেকার বসন্ত ও শরত্ যুদ্ধমান রাজ্যের সময় থেকেই চীনারা তুং চি –এই ঐতিহ্যিক উত্সব পালন করতে শুরু করেন ।
চীনা ভাষায় চি-র অর্থ পূর্ণতা । তুং চি পর্ব সাধারণতঃ শীতকালের ডিসেম্বর মাসের একুশ বা বাইশ তারিখ হয । এই পর্বের অর্থ এই নয় যে তুং চি পর্বে তাপমাত্রা বছরের সবচেয়ে নিম্নে নামে , সূর্য ঘিরে পৃথিবী প্রদক্ষিণের অবস্থান অনুসারে এই পর্ব নির্ধারণ করা হয় । তুং চি পর্বে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে বেলা সবচেয়ে ছোট , তুং চি পর্বের পর পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে বেলা ধীরে ধীরে বড় হয় । প্রাচীন নথিপত্রে বলা হয়েছে , প্রাচীনকালে তুং চি পর্ব থেকে রাজা তার মন্ত্রীদের সংগে একটানা পাঁচদিন সংগীত উপভোগ করতেন । সেদিন সাধারণ অধিবাসীদের বাড়ীতেও বাদ্যযন্ত্র বাজানো হত । সেদিন রাজা জ্যোতির্বিদদের সংগে পঞ্জিকা আলোচনা করতেন এবং স্বর্গীয় দেবতাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন । প্রাচীনকালে পেইচিংয়ের আকাশমন্দির শীতকালের তুং চি পর্বে রাজার পূজানুষ্ঠানের আয়োজনের জায়গা ।
প্রাচীন চীনে তুং চি পর্বে চীনাদের শীতকালকে অভিনন্দন করার অভ্যাস ছিল । সেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে লোকেরা উত্সবের জামা-পোষাক পরে পরস্পরকে অভিনন্দন করতেন । প্রাচীনকাল থেকে চীনারা তুং চি পর্ব থেকে দিন গুনতে শুরু করেন । প্রথম নয় দিনকে বলা হয় ‘ই চিউ ’ , দ্বিতীয় নয়দিনকে বলা হয় ‘আর চিউ ’ এই ভাবে তারা নয়টি নয়দিন গুনেন , নয়টি নয়দিন অর্থাত ৮১ দিন পর আবহাওয়া গরম হতে শুরু হয় । একটি ছড়ার গানে এই নয়টি নয়দিনের আবহাওয়ার পরিবর্তন বর্ণনা করা হয়েছে । এতে বলা হয়েছে , প্রথম ও দ্বিতীয় নয়দিনে শীতে হাত বের করতে সাহস হয় না , তৃতীয় ও চতুর্থ নয়দিনে প্রচন্ড শীতে বিড়াল ও কুকুর মরে যায় ,পঞ্চম ও ষষ্ঠ নয়দিনে নদীতীরের ইউলো গাছের অঙ্কুর বের হয় । সপ্তম নয়দিনে নদীতে জমা বরফ গলতে শুরু করে , অষ্টম নয়দিনে রাজহংস উড়ে আসে আর নবম নয়দিনে বসন্ত আসে এবং ফুল ফুটতে শুরু করে ।
প্রাচীন চীনে তুং চি পর্ব থেকে নয়টি নয়দিনের চিত্র আঁকার অভ্যাসও ছিল । তুং চি উত্সবের দিন লোকেরা প্রথমে একটি কুলফুলের গাছ আঁকেন , ডালে ফুটানো কুল ফুলগুলোর মোট ৮১টি পাপড়ি আছে , এটা তুং চি উত্সব থেকে শুরু হওয়া নয়টি নয়দিন অর্থাত ৮১ দিনের প্রতীক । তুং চি পর্ব থেকে প্রতি দিন ডালের কুলফুলের একটি পাপড়ির উপর রং দেন , ৮১টি পাপড়ির উপর যখন সব রং করা হয় , তখন শীতকাল শেষ হয়ে বসন্তকাল শুরু হয় । কোনো কোনো লোক ফুলে রং করার সময় সেই দিনের আবহাওয়া অনুসারে পাপড়ির নির্দিষ্ট জায়গায় রং দেন । যেমন মেঘলা দিনে পাপড়ির উপরের অংশে রং দেয়া হয় , চমত্কার আবহাওয়ার দিনে পাপড়ির নীচের অংশে রং দেয়া হয় , বাতাসের দিন পাপড়ির বাঁ দিকে রং দেয়া হয় , বৃষ্টির দিন পাপড়ির ডান দিকে রং দেয়া হয় আর বরফ পরার দিন পাপড়ির মাঝখানে রং দেয়া হয় । এই ভাবে ৮১ দিন পর এই কুল ফুলের গাছ এক অত্ভুত আবহাওয়া মানচিত্রে পরিণত হয়।
|