দক্ষিণ চীনের ফুচিয়েন প্রদেশের
ইয়ুসান নামে একটি জায়গায় ছিকোছি
নামে একটি মন্দির আছে। চীনের
দেশপ্রেমিক বীর ছিচিকুয়ানের
জাপানী সামুদ্রিক দস্যু প্রতিরোধের
কীর্তি স্মরণের জন্য স্থানীয়
অধিবাসীরা এই মন্দির তৈরি করেন
।
ছিচিকুয়ান মিং রাজবংশের একজন
কমান্ডার। তার বাবাও ছিলেন
একজন কমান্ডার । বাবার প্রেরনায়
ছিচিকুয়ান ছোটবেলা থেকেই সমরবিদ্যা
পছন্দ করেন এবং বড় হয়ে একজন
সত্ ও দক্ষ কমান্ডার হওয়ার
স্বপ্ন দেখেন । সেই সময় চীনের
উপকূলীয় অঞ্চল প্রায়ই জাপানী
দস্যুর আক্রমণের সম্মুখীন হতো
। ছিচিকুয়ান তাদের সে সব আক্রমণ
ও হয়রানি ঘৃণা করতেন । তার
বয়স যখন ১৬ , তখন তিনি একটি
কবিতায় লিখেছিলেনঃ বড় অফিসার
হওয়া আমার আকাঙ্খা নয় , দেশের
উপকুলীয় অঞ্চলে সামুদ্রিক ঢেউয়ের
শান্তি আমার স্বপ্ন । তার বয়স
যখন ১৭ , তিনি বাবার উত্তরাধিকার
হিসেবে সৈন্যবাহিনীর একজন যুব
অফিসার হিবাবে যোগ দেন । সেই
আমলে তার সামনে সবচেয়ে বড় সমস্যা
জাপানী দস্যুদের হয়রানি প্রতিরোধ
করা ।
জাপানী দস্যু প্রধানতঃ জাপানে
গৃহযুদ্ধের পরাজিত সৈন্য ও
অফিসার এবং কিছু বনিকের কথা
বলা হচ্ছে । চতুর্দশ শতাব্দীতে
ইউয়ান রাজবংশের শেষ দিক থেকে
মিং রাজবংশের প্রথম দিকে তারা
প্রায়ই দস্যু নৌকা করে চীনের
সমুদ্র অঞ্চলে ডাকাতি করতো
এবং নরহত্যা ও আগুন জ্বালিয়ে
দিতো । পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষার্ধে
জাপানী দস্যুদের হয়রানি ক্রমেই
তীব্র আকার ধারণ করে । তারা
চীনের উপকুলীয় অঞ্চলের জমিদার
ও অসত্ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজস
করে চীনের ভূভাগের কয়েকটি জেলা
দখল করে । জাপানী দস্যু চীনের
দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের একটি
বিরাট সমস্যায় পরিণত হয়েছিল
।
ছিচিকুয়ান সানতুঙ প্রদেশে সাফল্যের
সঙ্গে জাপানী দস্যুদের হয়রানি
প্রতিরোধ করেন বলে রাজ্য সরকার
তাকে চেচিয়ান প্রদেশের তিনহাই
নামে এক জেলার অফিসার নিয়োগ
করে । তিনহাই জেলায় জাপানী
দস্যুদের ঘন ঘন হয়রানির ঘটনা
ঘটছিলো ।ছিচিকুয়ান কৃষক ও খনি
শ্রমিকদের নিয়ে একটি বাহিনী
গঠন করেন । তিনি জাপানী দস্যুদের
আক্রমন প্রতিরোধের জন্য স্থানীয়
অবস্থা বিবেচনা করে জাপানী
দস্যুদের মুখোমুখি লড়াইয়ের
একটি সামরিক পরিকল্পনা তৈরি
করেন। তার এই পরিকল্পনার নাম
‘ ইউয়েন ইয়ান চেন ’ । এই পরিকল্পনা
অনুসারে ছিচিকুয়ানের বাহিনী
প্রথমে লুকিয়ে থাকতো , জাপানী
দস্যুরা এক শ’ মিটার ব্যবধানে
প্রবেশ করলে ছিচিকুয়ানের সৈন্যরা
আগুন জ্বালানোর অস্ত্র নিক্ষেপ
করতো । দস্যুরা ৬০ মিটার ব্যবধানে
প্রবেশ করলে সৈন্যরা তীর নিক্ষেপ
করতো । শত্রুরা আরো কাছে এলে
সৈন্যরা দস্যুদের সঙ্গে মুখোমুখি
লড়াই করতো ।
ছিচিকুয়ানের গঠন করা এই বাহিনীর
সৈন্যসংখ্যা ছিলো চার হাজার
। এই বাহিনীর মধ্যে কড়া শৃঙ্খলা
ছিলো , সৈনিকরা জাপানী দস্যুর
আক্রমন বিরোধী সংগ্রামে বার
বার জয় লাভ করে এবং স্থানীয়
অধিবাসীর সমাদর পায়। অধিবাসীরা
এই বাহিনীকে ছিচিয়াচুন , অর্থাত
ছি পরিবারের বাহিনী বলতো ।
১৫৬১ সালে কয়েক হাজার জাপানী দস্যু শতাধিক রণবোট চালিয়ে চেচিয়ান প্রদেশের থাইচৌ অঞ্চলের সমুদ্র উপকুলীয় অঞ্চলে আক্রমন চালায় । খবর পেয়ে ছিচিকুয়ানের বাহিনী দ্রুত থাইচৌ বরাবর অঞ্চলে জাপানী দস্যুর বিরুদ্ধে নয়টি লড়াইয়ে সবকটিতে বিজয় অর্জন করেন এবং প্রচুর জাপানী দস্যু নিশ্চিহৃ করেন । বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে অনন্যসাধারণ অবদান রেখেছেন বলে ছিচিকুয়ানের দ্রুত পদোন্নতি হয় । রাজ্য সরকার তাকে ফুচিয়েন প্রদেশে পাঠান।
ছিচিকুয়ান ও অন্যান্য অফিসারের মিলিত প্রচেষ্টায় জাপানী দস্যু প্রতিরোধ সংগ্রামে বিরাট বিজয় অর্জিত হয় । চেচিয়ান ও ফুচিয়েন প্রভৃতি উপকূলীয় অঞ্চলের পরিস্থিতি ক্রমেই স্থিতিশীল হয় । সেখানকার অর্থনীতিরও দ্রুত প্রসার হয় । ছিচিকুয়ান জাপানী দস্যুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রামে বিরাট ঐতিহাসিক অবদান রেখেছিলেন । তিনি তখনকার অধিবাসী তথা তাদের উত্তরসুরীদের প্রশংসা অর্জন করেছেন ।
|