প্রাচীন সমরবিদ সুনউ


       খৃষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর বিখ্যাত সমরবিদ সুনউ-র রচিত ‘ সুনচিপিনফা ’প্রাচীন চীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক রচনা । চীনের প্রাচীন পুথিপত্রগুলোর মধ্যে পৃথিবীতে এই বইয়ের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। দেশবিদেশের সমরবিদরা সুনউকে তাদের পূর্বপুরুষ হিসেবে শ্রদ্ধা করেন ।  

 খৃষ্টপূর্ব ৫৫১ সালে চীনের বসন্ত –সরত আমলে সুনউ-র জন্ম । সুনউ ছিরাজ্যের লোক , তার বয়স যখন ১৯ বছর , তিনি পূর্ব চীনের উ রাজ্যের রাজধানীর উপকন্ঠে ( আজকের সুচৌ শহর ) গিয়ে সামরিক বই লিখতে শুরু করেন । তখনকার উ রাজ্যের উচিসুই নামক একজন মন্ত্রী রাজার সামনে সুনউর কথা বলেন এবং রাজাকে সুনউর লেখা ১৩টি সামরিক প্রবন্ধ পড়তে অনুরোধ করেন । রাজা সুনউর প্রবন্ধ পড়ে ভালো মনে করেন , কিন্তু তিনি জানেন না সুনউ তার এইসব তত্ব বাস্তব যুদ্ধে ব্যবহার করতে পারেন কিনা । তাই তিনি সুনউকে রাজপ্রাসাদের রমনীদের মধ্যে মহড়া করে তার সামরিক তত্ব বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন ।  

সুনউ রাজপ্রাসাদের ১৮০জন প্রাসাদ-সেবিকাকে দুই দলে বিভক্ত করে রাজার দুজন প্রিয় উপপত্নীকে দুই দলের নেত্রী করেন , প্রাসাদ সেবিকারা এই দুজন উপপত্নীর পরিচালনায় মহড়া করেন ।  

সুনউ কমান্ডার মঞ্চে দাড়িয়ে মহড়ার নিয়মগুলো ব্যাখ্যা করার পর মহড়া শুরু হওয়ার আদেশ দেন । কিন্তু প্রাসাদ- মেইডরা তার আদেশ মানে না , তারা হাসাহাসি করেন অথবা পরস্পরকে ঠাট্টা করে মহড়াকে গুরুত্ব দেন না । সুনউ বার বার প্রাসাদ-মেইডদের মনোযোগ সহকারে মহড়ায় অংশ নেয়ার অনুরোধ করেন , কিন্তু কোনো ফল হয় নি , সুনউ রেগে গিয়ে এই দুই দলের দুজন নেত্রীকে হত্যা করতে চান । সুনউ নিজের প্রিয়তম দুই উপপত্নীকে হত্যা করতে চাচ্ছেন দেখে রাজা সুনউকে তাদের হত্যা না করার অনুরোধ জানান । কিন্তু সুনউ রাজী নন । তিনি নিয়ম অনুসারে রাজার এই দুজন উপপত্নীকে হত্যা করেন এবং দুই দলের প্রথম মেইডকে দলনেত্রী নিয়োগ করেন । মহড়া পুনরায় শুরু হয় , এবার প্রাসাদ-মেইডরা আর হাসাহাসি ও ঠাট্টা করেন না , তারা সুনউ-র নির্দেশ অনুসারে মনোযোগ সহকারে মহড়ায় অংশ নেন । এই ঘটনা থেকে রাজা সুনউ-র দক্ষতা দেখে সন্তোষ বোধ করেন , তিনি সুনউকে নিজের সৈন্যবাহিনীর জেনারেল নিয়োগ করেন ।  

সুনউ-র কড়া প্রশিক্ষনে উ রাজ্যের সৈন্যবাহিনী ক্রমেই শক্তিশালী হয় । এরপর সুনউ উ রাজ্যের দুজন রাজাকে সেবা করেন । তার পরিচালনায় উ রাজ্যের সৈন্যবাহিনী অন্য দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রায়ই জয় লাভ করে । 

উ রাজ্য দিন দিন শক্তিশালী হয় । ঠিক এই সময় উ রাজ্যের রাজা ফুছাই ক্রমেই অহংকারী হয়ে উঠেন ।  

তিনি অনুগত মন্ত্রীর কথা না শুনে উদ্দেশ্যপ্রনোদিত মন্ত্রীদের প্ররোচনা বিশ্বাস করেন । তাই সুনউ নিজে থেকেই জেনারেলের পদ ছেড়ে দেন । তিনি নির্জন পাহাড়ী অঞ্চলে গিয়ে নিজের সৈন্য প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধ পরিচালনার অভিজ্ঞতা সারসংকলন করে তার লেখা ১৩টি প্রবন্ধ শুদ্ধ করেন । এটাই বিশ্ববিখ্যাত সামরিক রচনা ‘ সুনচিপিংফা ’ ।  

‘ সুনচিপিংফার ’ মধ্যে ১৩টি প্রবন্ধ আছে । তার মোট অক্ষর সংখ্যা মাত্র ৬ হাজার হলেও এতে সুনউর সামরিক চিন্তাধারা প্রতিফলিত হয়েছে । এই সামরিক রচনা প্রাচীনকালে পৃথিবীর প্রথম সামরিক রচনা বলে পরিচিত । এই সামরিক রচনায় ব্যাখ্যা করা সামরিক চিন্তাধারা ও দার্শনিক চিন্তাধারা ব্যাপকভাবে সামরিক , রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে ।