ইয়ুপোইয়া ও চুনচিছি


       চীনের বসন্ত –শরত আমলে ছুরাজ্যে ইয়ুপোইয়া নামে একজন সংগীদবিদ ছিলেন । ছোটবেলা থেকেই ইয়ুপোইয়া বুদ্ধিমান ছেলে , তিনি সংগীত পছন্দ করেন । ইয়ুপোইয়া তখনকার বিখ্যাত বাদক ছেনলিয়ানের কাছ থেকে সঙ্গীত শিখেন ।  

  তিন বছর পর ইয়ুপোইয়া একজন খ্যাতনামা বাদক হন । কিন্তু তিনি সন্তুষ্ট নন , তিনি বাদ্যযন্ত্র বাজার মান আরো উন্নত করতে চান । তার শিক্ষক ছেনলিয়েন তার মনোভাব জেনে তাকে বল্লেন ,আমি আমার জানা সব কিছু তোমাকে শিখিয়েছি , তুমি সেগুলো সব আয়ত্ত করেছ । সংগীত উপলব্ধির দক্ষতা আমাকেও বাড়ানোর প্রয়াস চালাতে হবে । আমার শিক্ষক ফান চি ছুন একজন বিখ্যাত সংগীতবিদ , তিনি শুধু একজন বাদক নন , সংগীত উপলব্ধি ক্ষেত্রে পারদর্শী । তিনি এখন পূর্বসাগরের একটি দ্বীপে থাকেন , আমরা তার কাছে যাবো , কেমন ? তুমি তার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখবে । ইয়ুপোইয়া এই কথা শুনে মহাখুশি । 

  তারা প্রচুর খাবার নিয়ে নৌকা করে পূর্বসাগরের দিকে রওয়ানা হলেন । একদিন তাদের নৌকা ফেনলাই পাহাড়ের কাছে পৌঁছে । ছেনলিয়েন ইয়ুপোইয়াকে বলেন , তুমি এখানে অপেক্ষা কর , আমি আমার শিক্ষককে নিয়ে আসবো । এই কথা বলে ছেনলিয়েন নৌকা করে চলে যান । অনেক দিন পরও ছেনলিয়েন আর ফিরে আসেন নি । নিজের শিক্ষককে ফিরতে না দেখে ইয়ুপোইয়া খুব চিন্তিত । তিনি পাহাড়ের পাদদেশে দাড়িয়ে সাগরের দিকে তাকান , দ্বীপে কোনো লোক নেই । শুধু গাছের পাখির কিচির-মিচির শব্দ , যেন গান গাইছে । ইয়ুপোইয়া এই পরিবেশে মনের দুঃখ প্রকাশের জন্য একটি সুর বাজান , সেই থেকে ইয়ুপোইয়ার বাদ্যযন্ত্র বাজার মান দ্রুত উন্নত হয় । আসলে তার শিক্ষক ছেনলিয়েন ইচ্ছা করে ইয়ুপোইয়াকে ছেড়ে চলে যান , যাতে ইয়ুপোইয়া প্রকৃতি থেকে সংগীত উপলব্ধির অনুভুতি পান ।  

  ইয়ুপোইয়া এই নির্জন দ্বীপে সাগর , গাছ ও পাখির সঙ্গে থাকেন । স্বাভাবিকভাবেই তার মনের অনুভুতির পরিবর্তন হলো , তিনি বুঝতে পেরেছেন শিল্পের মূলসত্তা উপলব্ধি করার পরই ভালো সুর বাজাতে পারে । ইয়ুপোইয়া একজন বিখ্যাত বাদক হলেও তার সুরের অর্থ বোঝার মতো লোক বেশী নেই । 

  একদিন ইয়ুপোইয়া নৌকা করে বেড়াতে যান । এক পাহাড়ের পাশে যাওয়ার সময় হঠাত মুশলধারে বৃষ্টি শুরু । ইয়ুপোইয়া নৌকায় বসে বাদ্যযন্ত্র বাজাতে শুরু করেন । হঠাত তিনি তার বাদ্যযন্ত্রের তারের মৃদু স্পন্দন অনুভব করেন , এতে প্রমাণিত হয় যে আশেপাশে কোনো লোক তার বাজনা শুনছেন । ইয়ুপোইয়া নৌকা থেকে বেরিয়ে দেখেছেন নদীর তীরে গাছের নীচে চুনচিছি নামে একজন কাঠুরে বসে আছেন ।  

ইয়ুপোইয়া চুনচিছিকে নৌকায় নিয়ে যান । ইয়ুপোইয়া বলেন , আমি আপনার জন্য একটি সুর বাজাই , কেমন ? চুনচিছি ধন্যবাদ জানিয়ে সায় দিলেন। ইয়োপোইয়া ‘ পাহাড় ’ নামে একটি সুর বাজালেন , চুনচিছি সুর শুনে বলেন , কত উচু পাহাড় ! ইয়ুপোইয়া আবার ‘ নদীর পানি ’ নামে একটি সুর বাজাল , চুনচিছি তা’ শুনে প্রশংসা করে বলেনঃ নদীর পানি নিরন্তরভাবে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে । চুনচিছির কথা শুনে ইয়ুপোইয়া অবাক হলেন , তিনি চুনচিছিকে বলেন , এই পৃথিবীতে শুধু আপনিই আমার মনের কথা বুঝতে পারেন । দুজন মৃত্যু পর্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ার প্রতিজ্ঞা করেন ।  

  ইয়ুপোইয়া চুনচিছিকে বলেন , পর্বতপাহাড় ও নদনদী ঘুরে ঘুরে দেখার পর তিনি তার বাসায় যাবেন । একদিন ইয়ুপোইয়া নিজের কথা অনুসারে চুনচিছির বাসায় গেলেন । কিন্তু দুঃখের বিষয় চুনচিছি রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন । এই খবর পেয়ে ইয়ুপোইয়া তার কবরের সামনে এক বেদনাদায়ক সুর বাজান , তারপর তিনি উঠে দাড়িয়ে নিজের বাদ্যযন্ত্র চুনচিছির কবরে ভেঙ্গে দিলেন । সেই থেকে ইয়ুপোইয়া আর সুর বাজান নি ।