সুউ


       চীনে সুউ’র ভেড়া পালনের কাহিনী যুগ যুগ ধরে প্রচারিত হয় । সুউ অত্যন্ত খারাপ প্রাকৃতিক পরিবেশে সংখ্যালঘু জাতির চাপে নতি স্বীকার না করে নিজের মহত দেশপ্রেমিক মনোভাব বজায় রাখেন । 

 সুউ খৃষ্টপূর্ব এক শতাব্দীতে চীনের হান রাজবংশের লোক । সেই সময় মধ্য চীনের হান রাজবংশ ও উত্তর পশ্চিম চীনের সংখ্যালঘু জাতি সুননুর সম্পর্ক অস্থিতিশীল । খৃষ্টপূর্ব ১০০ সালে সিউননুর একজন নতুন সর্দার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন । হান রাজ্যের রাজা সিউননুর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য সুনউকে এক শ’জন লোক ও প্রচুর উপহার নিয়ে সিউননুর দেশে পাঠান । সুউ উপহারগুলো সিউননুকে দিয়ে দেশে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন । ঠিক এই সময় সিউননের অভ্যন্তরে সংঘর্ষ ঘটে। সুউ ও তার সফরসঙ্গীরা আটকে পড়েন । সিউননুর সর্দার সুউকে হান রাজ্যের সঙ্গে বেইমানি করে সিউনুর জন্য সেবার অনুরোধ জানান ।  

প্রথমে সিউননুর সর্দার সুউকে প্রচুর টাকা ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করার কথা বলেন , সুউ তা’ প্রত্যাখ্যান করেন । প্রলোভন ব্যর্থ হয়েছে দেখে সর্দার সুউকে শাস্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন । তিনি প্রচন্ড শীতের দিন সুউকে এক ভূগর্ভের গুদামে বন্দী করেন এবং পানি ও খাবার দেন না । সর্দার আশা করে সুউ শীত ও ক্ষুদ্ধায় জর্জরিত হয়ে নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবেন । কিন্তু সুউ এই অবস্থায়ও নিজের মনোভাব পরিবর্তন করেন নি । পিপাসা হলে তিনি বরফ খান , খিদে পেলে তিনি গায়ের ভেড়ার পোশাক খান । কিছু দিন পর সুউ মুমুর্ষু অবস্থায় পড়েন , সর্দার বাধ্য হয়ে সুউকে ছেড়ে দিলেন । 

সিউননুর সর্দার জানেন কোনো উপায়ই সুউকে আত্মসমর্পণ করতে রাজী করাতে পারবেন না । তিনি মনে মনে সুউকে শ্রদ্ধা করেন , তাই তিনি তাকে হত্যা করতে চান না , তবে তিনি সুউকে নিজের দেশে ফিরে যেতে দিতে চান না । তাই সর্দার সুউকে সুদূর সাইবেরিয়ার বইকাল হ্রদে নির্বাসিত করার সিদ্ধান্ত নেন । যাওয়ার আগে সর্দার সুউকে বলেন , যেহেতু আপনি আত্মসমর্পন করতে চান না , তাই আমি আপনাকে ভেড়া পালন করতে সাইবেরিয়ায় পাঠাচ্ছি । যখন পুরুষ ভেড়ার ছোট বাচ্চা হবে , তখন পর্যন্ত আপনি হান রাজবংশে ফিরে যেতে পারবেন । 

সুউ একা বইকাল হ্রদের নিকর্টবর্তী নির্জন এলাকায় গেলেন । সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়া অসম্ভব । সুউর সঙ্গে শুধু একপাল ভেড়া ও হান রাজবংশের প্রতীক –এক সুন্দর দূত-ছড়ি । সুউ প্রতিদিন এই দূত-ছড়ি দিয়ে ভেড়া পালন করেন , তিনি আশা করে একদিন তিনি নিজের দেশে ফিরে যেতে পারবেন । কিন্তু দিনের পর দিন , বছরের পর বছর কাটার পর তিনি এই আশার আলো দেখেন নি , তার দূত-ছড়ির উপরের অলংকারগুলো পড়ে যায় , সুউর চুল ও দাড়ি সাদা হলো ।  

বইকাল হ্রদের পাশে সুউ দীর্ঘ ১৯ বছর ভেড়া পালন করেন । তাকে আটক করার সিউনসু সর্দার ও হান রাজবংশের প্রবীণ রাজা মারা গেলেন , প্রবীণ রাজার ছেলে হান রাজ্যের নতুন রাজা হলেন । সিউননুর নতুন সর্দার হান রাজবংশের সঙ্গে সম্প্রীতির নীতি কার্যকরী করেন , তাই হান রাজ্য সুউকে নিজের দেশে আনতে লোক পাঠান ।  

সুউ হান রাজ্যে ফিরে সরকারী কর্মকর্তা ও অধিবাসীদের আন্তরিক সম্বর্ধনা পান । সবাই এই জাতীয় বীরকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন । দু হাজার বছর পরও চীনারা চীনা জাতির এই বীরকে নিজের দৃষ্টান্ত হিসেবে মনে করেন । সুউর দেশপ্রেম মনোবল চীনের জাতীয় সংস্কৃতির একটি অংশে পরিণত হয়েছে ।