চীনের পূর্ব হান রাজবংশের বিখ্যাত জ্যোতিবির্দ চান হেন


       মধ্য চীনের হোনান প্রদেশের নান ইয়ান জেলায় চান হেনের জন্ম । ছোট বেলায় চান হেন বই পড়তে পছন্দ করতেন এবং ভালো প্রবন্ধ লিখতে পারতেন। তার বয়স যখন সতের , তিনি জন্মস্থান ত্যাগ করে ছান আনে যান। ছান আন হচ্ছে চীনের ইতিহাসের অনেক রাজবংশের রাজধানী সি আন । চান হেন ছান আনে ঐতিহাসিক পুরার্কীতিগুলো পরিদর্শন করেন এবং সমাজের রীতিনীতি ও অর্থনৈতিক অবস্থার খোজখবর নেন । চান হেন তখনকার রাজকীয় সরকারের অনুরোধে রাজধানী লো ইয়াংয়ে হান রাজবংশের কর্মকর্তা ছিলেন ।

চান হেন বিজ্ঞান , বিশেষ করে জ্যোতির্বিদ্যা পছন্দ করতেন । রাজবংশের পদস্থ কর্মকর্তা হওয়া তার ভালো লাগে নি , তাই তিনি দুই বার পদ থেকে ইস্তফা দেন । তিনি তিন বছর দর্শন , গণিতবিদ্যা ও জ্যোতির্বিদ্যা গবেষনা করেন এবং বই লিখতে শুরু করেন ।  

আজ থেকে দু হাজার বছর আগের হান রাজবংশে মহাকাশ সম্পর্কিত গবেষনা শুরু হয় । তখন মহাকাশ সম্বন্ধে তিন ধরনের মতবাদ ছিল । এই তিন ধরনের মতবাদ হলো ‘ কাই থিয়েন শো ’ , ‘ হুন থিয়েন শো ’ আর ‘ সুয়েন ইয়ে শো ’ । চান হেন ‘ হুন থিয়েন শোর ’ প্রতিনিধিত্বকারী । তিনি মনে করেন , আকাশ যেন একটি ডিম , পৃথিবী যেন ডিমের কুসুম । তার ধারণায় , আকাশ ও পৃথিবী একসঙ্গে ছিল । আলাদা হওয়ার পর হালকা জিনিসগুলো উঠে আকাশ সৃষ্টি হয় আর ভারী জিনিসগুলো জমে পৃথিবী সৃষ্টি হয়। আকাশ ও পৃথিবী মিলে পৃথিবীর সব কিছু সৃষ্টি করে । চান হেন ব্যবধানের পরিবর্তন দিয়ে আকাশের গ্রহগুলোর গতি ব্যাখ্যা করেন । আধুনিক বিজ্ঞান এটা প্রমান করেছে যে , গ্রহগুলোর গতি সূর্য থেকে তাদের ব্যবধানের সঙ্গে সম্পর্কিত । এ থেকে প্রমাণিত হয় যে চান হেনের ব্যাখ্যায় যুক্তির উপাদান ছিল। 

চান হেন শুধু তাত্ত্বিক গবেষনা করেন নি , তিনি বাস্তব অনুশীলনকেও গুরুত্ব দেন। তিনি নিজের নকসায় গ্লোব সিলেসটিয়েল যন্ত্র ও ভূকম্পলিক যন্ত্র তৈরি করেন । ভূকম্পলিক যন্ত্র পৃথিবীর প্রথম ভূমিকল্প পরিমাপক যন্ত্র । খৃষ্টীয় ১৩৮ সালে চান হেন এই যন্ত্র দিয়ে সান সি প্রদেশে ঘটিত ভূমিকম্প পরিমাপ করেন । গ্লোব সিলেসটিয়েন আসলে একটি টিলেসটিয়েল গ্লোব। অারেকজন বিজ্ঞানী এটা আবিষ্কার করেন । চান হেন এটার কিছু সংস্কার করেন , যাতে এই গ্লোব একদিন একবার ঘুরে । মানুষ ঘরে বসেই জানতে পারেন কোন সময় কোন গ্রহ কি অবস্থানে আছে ।  

চান হেন বিভিন্ন জ্যোতির্বিদ্যা সমস্যা পর্যবেক্ষন ও বিশ্লেষন করেন । তিনি বলেন , মধ্য চীন অঞ্চলে প্রায় আড়াই হাজারটি নক্ষত্র দেখা যায় । তিনি মোটামুটি চন্দ্রগ্রহণের নিয়ম আয়ত্ত করেন । তা ছাড়া সূর্য ও চাদেঁর অবস্থা সম্বন্ধে চান হেনের পর্যবেক্ষণ সঠিক । তিনি মনে করেন , সকাল ও সন্ধ্যা বেলা আর দুপুর বেলায় সুর্যের আকার একই । কিন্তু সকাল ও সন্ধ্যা বেলায় পরিবেশ অপেক্ষাকৃত অন্ধকার , পর্যবেক্ষকরা অন্ধকারে সূর্য বড় মনে করেন , দুপুর বেলায় উজ্জ্বল আলোয় আকাশের সুর্য ছোট মনে হয় । চান হেনের এই ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ না হলেও অযৌক্তিক নয় । 

চান হেন শুধু জ্যোতির্বিদ নন , তিনি পূর্ব হান রাজবংশের বিখ্যাত সাহিত্যিক ও চিত্রশিল্পী । চান হেন পূর্ব হান রাজবংশের ছয়জন বিখ্যাত চিত্রশিল্পীর অন্যতম । চীনের প্রাচীন পুথিপত্র থেকে জানা গেছে , চান হেন বিজ্ঞান , দর্শন ও সাহিত্য ক্ষেত্রে মোট ৩১টি প্রবন্ধ লিখেছেন । তারমধ্যে ‘ ইন সিয়েন ফু ’ নামে একটি প্রবন্ধে চান হেনের নৈতিকতা ও বিদ্যা চর্চায় তার একনিষ্ঠ মনোভাব প্রতিফলিত হয়েছে । ‘ সি সুয়েন ফু ’ নামে প্রবন্ধটিতে মানব জাতির মহাকাশে ঘুরে বেড়ানোর আকাঙ্খা ব্যক্ত করা হয়েছে । এই প্রবন্ধ প্রাচীন চীনের একটি বৈজ্ঞানিক কল্পনা প্রবন্ধ । ‘ তুং চিং ফু ’ ও ‘ সি চিং ফু ’ নামে প্রবন্ধ দুটি চান হেনের প্রতিনিধিত্বকারী দুটি প্রবন্ধ । তার এই দুটি প্রবন্ধ এখনো লোকেরা পড়েন। এই দুটি প্রবন্ধে চান হেন তুং চি ও সি চিংয়ের ( তুং চিং আজকের সান সি প্রদেশের সি আন শহর আর সি চিং আজকের হোনান প্রদেশের লো ইয়াং শহর ) প্রাকৃতিক দৃশ্য ও রীতিনীতি বর্ণনা করেন । এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের লোক শিল্পীদের অভিনয় সম্পর্কিত বর্ণনা চীনের প্রাচীনকালের এক্রবেটিস্ক শিল্পের মূল্যবাণ তথ্য ।