বৃত্তের পরিধি রেখা ও ব্যাসের হার অর্থাত পাই হিসাব করা এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন ব্যাপার । প্রাচীন চীনের অনেক বিজ্ঞানী এই হার হিসাব করার প্রচেষ্টা করেছিলেন । খৃষ্ট পঞ্চম শতাব্দীতে বিজ্ঞানী চু ছুন চি বৃত্তের পরিধি রেখা ও ব্যাসের হার হিসাব করার ব্যাপারে জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। চু ছুন চি প্রাচীন চীনের বিখ্যাত গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ। খৃষ্টীয় ৪২৯ সালে চিয়েন খান অর্থাত বর্তমানের চিয়ান সু প্রদেশের নান চিংয়ে চু ছুন চির জন্ম । চু ছুন চির পূর্ব পুরুষরাও জ্যোতির্বিদ্যা গবেষনা করেন । তাই তিনি ছোট বেলা থেকেই গণিতবিদ্যা ও জ্যোতির্বিদ্যা শিখেন । ৩৫ বছর বয়স থেকে চু ছুন চি বৃত্তের পরিধি রেখা ও ব্যাসের হার হিসাব করতে শুরু করেন ।
প্রাচীন চীনের লোকেরা বাস্তব
অনুশীলন থেকে এটা বুঝতে পারেন
যে বৃত্তের পরিধি রেখার দূরত্ব
ব্যাসের তিন গুণের কিছু বেশি
, কিন্তু তিন গুণের কতটুকু
বেশি , সেটা কেউ সঠিকভাবে বলতে
পারেন না । চু ছুন চির আগে
চীনের গণিতবিদ লিউ হুই এই হার
হিসাব করার পদ্ধতি খুঁজে বের
করেন । তিনি একটি বৃত্তকে নিয়মিত
বহুভুজে পরিণত করেন । তারপর
এই নিয়মিত বহুভুজের পরিধি হিসেব
করেন । বহুভুজের পরিধির বৃত্তের
পরিধি রেখ চেয়ে একটু কম । এই
পদ্ধতিতে লিউ হুই বৃত্তের পরিধি
ও ব্যাসের হারের দশমিকের পরে
চারটি সংখ্যা পান । চু ছুন
চি লিউ হুইয়ের হিসাবের ভিত্তিতে
বারবার হিসাব করে দশমিকের পরে
সাতটি সংখ্যা পান , এই সংখ্যা
পাইয়ের সঠিক সংখ্যার প্রায়
একই । কিন্তু চু ছুন চি কি
পদ্ধতিতে এই ফল পেয়েছেন , তা’
এখনও জানা যায় নি । চু ছুন
চি যদি লিউ হুইয়ের পদ্ধতিতে
হিসাব করেন , তাহলে তাকে একটি
বৃত্তকে ১৬ হাজার ভুজে পরিণত
করতে হয় । এই ধরনের হিসাব যে
কত সময়সাপেক্ষ , তা’ সবাই জানেন
।
এক হাজার বছর পর বিদেশের গণিতবিদরা
চু ছুন চির একই পরিমানের হার
পান । এই ক্ষেত্রে চু ছুন চির
অনন্যসাধারণ অবদান স্মরণের
জন্য বিদেশী বিজ্ঞানীরা বৃত্তের
পরিধি ও ব্যাসের হার পাইকে
চু -হার নাম দেয়ার প্রস্তাব
করেন । পাই হিসাব ছাড়া চু ছুন
চি ও তার ছেলের সঙ্গে বোলের
বাল্ক হিসেবের পদ্ধতি আবিষ্কার
করেন । পাশ্চাত্যদেশে এই পদ্ধতিকে
কাভালিরিকে বলা হয় । চু ছুন
চির পর এক হাজার বছরের বেশি
সময় পর ইতালির গনিতবিদ কাভালিরি
এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। চু
ছুন চি ও তার ছেলের এই গুরুত্বপূর্ণ
আবিষ্কার স্মৃতির জন্য গণিতবিদ্যায়
এই পদ্ধতিকে চু –পদ্ধতি বলা
হয় ।
গণিতবিদ্যা ক্ষেত্রে চু ছুন চি’র সাফল্য প্রাচীন চীনের গণিতবিদ্যার সাফল্যগুলোর একটি অংশ মাত্র । চতুদর্শ শতাব্দীর আগে চীন বরাবরই গণিতবিদ্যা ক্ষেত্রে সবচেয়ে উন্নত দেশগুলোর অন্যতম ছিল । গণিতবিদ্যার বিখ্যাত পাইথ্যাগ্রারাস থিয়েরেম চীনের প্রাচীনকালের ‘ চৌপিসুয়ানচিন ’ নামে একটি গণিতবিদ্যা সংক্রান্ত রচনায় বর্ণনা করা হয় , খৃষ্টীয় প্রথম শতাব্দীতে রচিত ‘ চিউ জান সুয়ান সু ’ নামে অন্য একটি গণিতবিদ্যার বইতে বিশ্ব গণিতবিদ্যার ইতিহাসে সর্বপ্রথম পোজিটিভ নম্বর ও ন্যাগেটিভ নম্বরের কথা উল্লেখ করা হয় এবং পোজিটিভ নম্বর ও ন্যাগেটিভ নম্বরের যোগ ও বিয়োগের পদ্ধতি পেশ করা হয় । ত্রয়দশ শতাব্দীর সময় চীনে দশম পর্যন্ত হাই ডিগ্রির ইকোয়েসন হিসেব করার পদ্ধতি আবিষ্কার করা হয় । ইউরোপের দেশগুলোর গণিতবিদরা ষষ্ঠদশ শতাব্দীর সময়ই শুধু কিউবিক ইকোয়েসন হিসেব করার পদ্ধতি খুঁজে বের করেন ।
|