চুয়ান চি


       চুয়ান চি হলেন যুদ্ধরত রাজ্যসমুহ যুগের তাও মতবাদের প্রতিনিধি । 

 চুয়াং চি’র নাম চৌ । তিনি খৃষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীর সময় সুং রাজবংশের লোক। এক সময় তিনি সুং রাজবংশের স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তা ছিলেন। ছোট বেলা থেকেই চুয়ান চি বই পড়তে পছন্দ করতেন এবং বিভিন্ন দেশে ভ্রমন করতে যান । তিনি প্রাকৃতিক পরিবেশে স্বাধীনভাবে বসবাস করতে পছন্দ করতেন । সরকারী কর্মকর্তা ও রাজকীয় পরিবারের লোকদের তিনি ভালো চোখে দেখতেন না । ছু রাজবংশের রাজা তাকে রাজবংশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করতে চেয়েছিলেন , চুয়ান চি তা’ প্রত্যাখ্যান করেন । তিনি তাঁর সারা জীবন সরকারী কর্মকর্তা না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন । তিনি ঘাসের জুতা তৈরি করাকে জীবিকা হিসেবে গ্রহন করেন। তার লেখা বইয়ের মোট অক্ষর সংখ্যা এক লক্ষের বেশি ।  

চুয়ান চি’র লেখা ৩৩টি প্রবন্ধের মধ্যে ‘ছি উ লুন’, সিয়াও ইয়াও ইউ’আর ‘তা চুন সি’এই তিনটি প্রবন্ধে সবচেয়ে স্পষ্টভাবে চুয়ান চির দার্শনিক চিন্তাধারা প্রতিফলিত হয় ।  

চুয়ান চি দর্শন ক্ষেত্রে লাও চির চিন্তাধারার উওরাধিকার সূত্রে বিকাশ করে নিজের বৈশিষ্ট্যময় দার্শনিক চিন্তাধারা সৃষ্টি করেন । তিনি মনে করেন ‘তাও’হলো পৃথিবীর বাস্তব অস্তিত্ব । এটি পৃথিবীর সবকিছুর উত্স । তিনি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কোনো নিয়মবিধি প্রনয়নের বিরোধীতা করেন । তিনি মনে করেন মানবজাতির সাদাসিদা জীবনযাপন করা উচিত । তিনি তখনকার শাসক শ্রেণীর সমালোচনা করেন । তিনি মনে করেন , মানুষের জীবনের চুড়ান্ত লক্ষ্য হলো পূর্ণ মানসিক স্বাধীনতা পাওয়া, বস্তুগত উপভোগ ও তথাকথিত খ্যাতি নয়। চুয়ান চি’র এই মতবাদ মানব জাতির চিন্তাধারার ইতিহাসে এক মূল্যবান মানসিক সম্পদ ।  

চুয়ান চি’র রচিত প্রবন্ধসংগ্রহ ‘ চুয়ান চি ’ খৃষ্টীয় তৃতীয় থেকে পঞ্চম শতাব্দীর উয়ে ও চিং রাজবংশের আমলে বিরাট প্রভাব বিস্তার করে । ইতিহাসে ‘চৌ ই ’ , ‘ লাউ চি ’ ও ‘ চুয়ান চি ’কে ‘ সান সুয়ান ’ বলা হয় । চুয়ান চি’র রচনাবলী চীনের সাহিত্য ইতিহাসেও গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে নিয়েছে । থান রাজবংশের সময় চুয়ান চি’র প্রবন্ধসংগ্রহ তাও মতবাদের শাস্ত্র হিসেবে গণ্য করা হয় ।  

চুয়ান চি শুধু দার্শনিক চিন্তা ক্ষেত্রে নয় সাহিত্য ক্ষেত্রেও প্রভাব বিস্তার করেন । তার লেখা প্রবন্ধগুলোতে নিজের রাজনৈতিক প্রস্তাব ও দার্শনিক চিন্তাধারা-- উপকথা ও গল্প বলার মাধ্যমে প্রতিফলিত হয় । তার রচিত এই প্রবন্ধসংগ্রহ যেন একটি উপকথার বই । এখনো পর্যন্ত তার রচনার প্রাণ শক্তি রয়েছে ।