বসন্ত - শরত ও যুদ্ধরত রাজ্যসমুহ যুগের আইন তত্ত্বের প্রতিনিধিত্বকারী হান ফেই চি


       হান ফিই চি চীনের যুদ্ধরত রাজ্যসমুহ যুগের (খৃষ্টপূর্ব ৪৭৫ সাল—খৃষ্টপূর্ব ২২১ সাল ) বিখ্যাত দার্শনিক , আইনবিদ ও লেখক । তার সৃষ্ট আইন তত্ত্ব প্রাচীন চীনে প্রথম কেন্দ্রীভূত শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য তাত্ত্বিক ভিত্তি যুগিয়েছে ।  

   খৃষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে হান ফেই চি’র জন্ম । তিনি যুদ্ধরত রাজ্যসমুহ সময়পর্বের হান রাজবংশের রাজকীয় পরিবারের সন্তান । তোতলা বলে তাঁর কথা বলতে সমস্যা হতো , কিন্তু তিনি প্রবন্ধ লেখাতে নিপুন ছিলেন ।  

   হান রাজ্যের রাজকীয় পরিবারের ছেলে বলে হান রাজ্যের শক্তি ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে দেখে হান ফেই চি দেশরক্ষার জন্য রাজার কাছে একাধিকবার দেশের শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের প্রস্তাব করেন । তার ধারণা , জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা আর প্রতিরক্ষা শক্তি বাড়ানো শাসকদের প্রধান কাজ হওয়া উচিত । কিন্তু রাজা তার প্রস্তাব গ্রহন করেন নি । তিনি ইতিহাসের বিভিন্ন রাজ্যের শাসনের অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা আর সমাজের বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে অনেক প্রবন্ধ লিখেছিলেন । তার লেখা প্রবন্ধগুলো ‘ হান ফেই চি ’ নামক একটি প্রবন্ধসংগ্রহে অন্তর্ভুক্ত করা হয় । তার লেখা প্রবন্ধগুলো হান রাজ্যের রাজা গুরুত্ব দেন নি । কিন্তু তখনকার শক্তিশালী রাজ্য—ছিং রাজ্যের রাজা ছিং সি হুয়ান হান ফেই চির লেখা প্রবন্ধগুলোর প্রশংসা করেন। ছিং রাজ্য হান রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সময় হান রাজ্যের রাজা হান ফেই চিকে রাজকীয় দূত হিসেবে যুদ্ধবিরতির অনুরোধ জানাতে ছিং রাজ্যে পাঠান। ছিং রাজ্যের রাজা হান ফেই চিকে আর হান রাজ্যে ফিরতে দেন নি , তিনি হান ফেই চিকে নিজের জন্য কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলেন । তখনকার ছিং রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী লি সি হান ফেই চির সহপাঠী ছিলেন । তিনি জানেন হান ফেই চির দক্ষতা তার চেয়ে বেশি । তাই তিনি হান ফেই চিকে ঈর্ষা করতেন এবং রাজা ছিং সি হুয়ানের সামনে হান ফেই চির বদনাম করতেন , রাজা লি সির কথা শুনে হান ফেই চিকে ধরে জেলখানায় আটক করেন এবং তাকে বিষ পানে হত্যা করেন । 

  হান ফেই চির লেখা প্রবন্ধগুলো বসন্ত –শরত ও যুদ্ধরত রাজ্যসমুহ যুগের আইন তত্বের প্রতিনিধিত্ব করে । তার রচিত ‘ হান ফেই চি ’ নামক প্রবন্ধ সংগ্রহে ৫৫টি প্রবন্ধ আছে । এতে মোট অক্ষর সংখ্যা প্রায় এক লক্ষ । হান ফেই চি’র আমলে চীনের চিন্তাধারা মহলের প্রতিনিধিত্বকারী ছিলেন কনফুসিয়াস ও মোচি । তারা পুরানো শাসন ব্যবস্থা অনুসরনের পক্ষপাতী । কিন্তু হান ফেই চি তাদের অভিমতের বিরোধীতা করেন । তিনি বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে আইন অনুসারে দেশ শাসনের পক্ষপাতী । তিনি সত্ কর্মকর্তাদের প্রশংসা ও পুরষ্কার দেয়ার আর দুর্নীতিপরায়ন কর্মকর্তাদের কড়া শাস্তি দেয়ার আর কৃষি ও প্রতিরক্ষাকে গুরুত্ব দেয়ার নীতি পেশ করেন । হান ফেই চির পেশ করা নীতিগুলো চীনের ছিং রাজবংশ থেকে সামন্ততান্ত্রিক কেন্দ্রীভূত শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছে । 

  হান ফেই চি তার প্রবন্ধগুলোতে তখনকার সমাজের বিভিন্ন সমস্যা বিশ্লেষন করেন এবং সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি পেশ করেন । যেমন ‘ উয়ান চেন ’ নামে একটি প্রবন্ধে তিনি রাজ্য পতনের ৪৭টি কারণ বিশ্লেষন করেন । ‘ নান ইয়েন ’ ও ‘ সো নান ’ নামে দুটি প্রবন্ধে হান ফেই চি রাজা ও রাজ্যের পদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে প্রস্তাব দাখিলকারীদের মনের অবস্থা চমত্কারভাবে বর্ণনা করেছেন ।  

  হান ফেই চির প্রবন্ধগুলোতে সমাজের বিভিন্ন সমস্যার তীক্ষ্ণ সমালোচনা করা হয়েছে । তার ভাষা রসিকতাপূর্ণ । তিনি তার প্রবন্ধগুলোতে বিপুল পরিমান উপকথা ও ঐতিহাসিক তথ্য দিয়ে সমাজ ও জীবন সম্বন্ধে নিজের অভিমত প্রকাশ করেন । তার প্রবন্ধগুলোতে ব্যবহার করা উপকথাগুলো এখনো লোকেরা ব্যবহার করেন ।