চার হাজার বছর আগে প্রাচীন
চীনা জাতি সৃষ্টির প্রক্রিয়ায়
চীনা জাতির তিনজন বিশিষ্ট ব্যক্তি
ছিলেন , তারা হলেন ইয়াও , সুন
ও ইয়ু ।
চীনের প্রাচীন পুথিপত্র ‘ সানশু
’ ও ‘ শিচি ’তে বলা হয়েছে ,
ইয়াওয়ের নাম ফান সুন । এর পরবর্তীকালের
বইগুলোতে বলা হয়েছে , ইয়াওয়ের
উপাধি ইনছিসি , তার আরেক নাম
থাওথান । কাজেই ইতিহাসে ইয়াওকে
থান ইয়াও বলা হয় ।
প্রাচীন পুথিপত্রে বলা হয়েছে
, ইয়াও চীনা জাতির পুর্বপুরুষ
হুয়াং তির বংশধর । ইয়াও একজন
দয়ালু ও বুদ্ধিমান ব্যক্তি
, তাই তিনি সবার শ্রদ্ধা জয়
করেন । ১৬ বছর বয়সে ইয়াও উপজাতির
সর্দার নির্বাচিত হন । ইতিহাসের
পুথিপত্রে বলা হয়েছে , ইয়াও
ফিং ইয়াংকে অর্থাত আজকের সানসি
প্রদেশের লিনফেন শহরে উপজাতির
রাজধানী হিসেবে গণ্য করেন ।
আজ পর্যন্ত লিনফেন শহরে চিন
রাজবংশের তৈরি ইয়াওয়ের মন্দির
আর থান রাজবংশে তৈরি ইয়াওয়ের
সমাধিস্থল আছে ।
ইয়াও সর্দার হওয়ার পর নিজ উপজাতির
গুনী ও যোগ্য ব্যক্তিদেরকে
উপজাতি পরিচালনার দায়িত্ব দেন
এবং অধিবাসীদের সংহতি জোরদারের
প্রচেষ্টা চালান । তিনি যোগ্য
কর্মকর্তাদের পুরষ্কার দেয়ার
সঙ্গে সঙ্গে অধিবাসী অত্যাচারকারী
কর্মকর্তাদের শাস্তি দেন ।
তিনি অধিবাসীদের শান্তিপূর্ণ
পরিবেশে বসবাস করতে বলেন ।
তাই সেই আমলে জনগণ সুখ শান্তিতে
জীবনযাপন করেন ।
জানা গেছে , ইয়াওয়ের আমলে সর্বপ্রথম
ক্যালেন্ডার তৈরি করা হয় ।
কৃষকরা পর্ব অনুসারে জমি চাষ
করতে পারেন । প্রাচীন চীনের
অধিবাসীরা ইয়াও-র আমলকে কৃষি
ও সংস্কৃতির দ্রুত প্রসারের
সময়পর্ব হিসেবে গণ্য করেন ।
ইয়াওয়ের আমলে প্রবল বন্যা হতো
। অধিবাসীর বসতবাড়ী বন্যার
পানিতে ডুবে যেতো , অধিবাসীরা
শান্তিতে বসবাস করতে পারতো
না । বন্যার নিয়ন্ত্রনের জন্য
ইয়াও চিন্তিত হয়ে পড়লেন । তিনি
সবার মতামত সংগ্রহ করেন এবং
বন্যা নিয়ন্ত্রনে অভিজ্ঞ ব্যক্তি
পাওয়ার চেষ্টা করেন । তার উপদেষ্টারা
ইয়াওয়ের কাছে কুনকে পানি নিয়ন্ত্রনের
দায়িত্ব দেয়ার সুপারিশ করেন
। ইয়াও তাদের কথা শুনে কুনকে
বন্যা নিয়ন্ত্রনের দায়িত্ব
দেন ।
প্রাচীন পুথিপত্রে ইয়াওয়ের
কীর্তির বর্ণনা করা হয়েছে ।
দক্ষিণাংশের উপজাতির আক্রমণ
প্রতিরোধের জন্য তিনি নিজে
লড়াইয়ে অংশ নেন , তিনি ইকে
হিংস্র পশু হত্যা করা আর সুর্যের
কড়া তাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার
জন্য আকাশের নয়টি সূর্য তীর
ছুড়ে নামিয়ে দেওয়ার আদেশ দেন।
তখনকার অধিবাসীরা ইয়াওয়ের এই
কীর্তির জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
করেন , তারা ইয়াওকে রাজা হতে
সমর্থন জানান ।
ইয়াও রাজা হিসেবে ৭০ বছর শাসন
করেন । তিনি তার একজন উত্তরাধিকারী
বেছে নিতে চান । তিনি স্থানীয়
প্রশাসকদের সঙ্গে পরামর্শ করেন
। তারা ইয়াওকে সুনের নাম উল্লেখ
করেন , তারা বলেন সুন পরিবারের
বয়োবৃদ্ধদের সম্মান করেন ,
এবং তাদের যত্ন করেন । ইয়াও
সুনের গুনাবলী পর্যবেক্ষণ করতে
চান ।
ইয়াও নিজের দুজন মেয়ে ওহুয়ান
ও নুইইংকে সুনের সঙ্গে বিয়ে
দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন । তিনি
দুটি মেয়ের কাছ থেকে সুনের
গুন পর্যবেক্ষন করেন ।
ইয়াও সুনকে অধিবাসীদের মানুষের
পাঁচটি গুন ব্যাখ্যা করার দায়িত্ব
দেন । এই পাঁচটি গুন হলো পিতার
নৈতিকতা , মাতার দয়া , বড় ভাইয়ের
ভ্রাতৃত্ব , ছোট ভাইয়ের বিনয়
আর ছেলের বাবা-মাকে শ্রদ্ধানিবেদন।
অধিবাসীরা সুনের ব্যাখ্যা গ্রহন
করেন এবং তার কথা অনুসারে পারিবারিক
সম্পর্ক পরিচালনা করেন । ইয়াও
আবার সুনকে শাসনকাজ পরিচালনার
দায়িত্ব দেন এবং রাজ্যের চার
দিক থেকে আসা স্থানীয় অফিসারদের
সঙ্গে মেলামেশার নির্দেশ দেন
। সবশেষে ইয়াও সুনকে পাহাড়ী
এলাকায় পাঠান , যাতে সুন প্রকৃতির
পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেন।
তিন বছরের পর্যবেক্ষণের পর
ইয়াও সুনকে নিজের উত্তরাধিকারী
হিসেবে নির্বাচণ করেন ।
সুন উত্পাদনকে গুরুত্ব দেন
, তিনি কুয়ো ও খাল খনন করেন
এবং যোগ্য ব্যক্তিদের গুরু
দায়িত্ব দেন । সুনের আমলে কৃষি
ও শিল্পের দ্রুত প্রসার হয়
। তিনি নৈতিকতার ভিত্তিতে দেশ
শাসন করেন এবং জনসাধারণের সঙ্গে
সুখদুঃখে সমভাগী হন । সেই আমলে
অধিবাসীদের জীবন সুখী , খাওয়া-পরার
কোনো অভাব ছিল না । তারা স্বাধীনভাবে
রাজ্যের ব্যাপারে সমালোচনা
করতে পারতেন। সুনের আমলে জনসাধারণ
শাসকদের সমর্থন করেন । সুন
পরে বন্যা নিয়ন্ত্রনে পারদর্শী
ইয়ুকে নিজের উত্তরাধিকারী হিসেবে
বেছে নেন ।
সুন ১১০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন । বর্তমানে হুনান প্রদেশের নিনইউয়ান জেলার ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে চিউই পাহাড়ে সুনের সমাধিস্থল আছে । যুগ যুগ ধরে চীনের অধিবাসীরা ইয়াও ও সুনের যোগ্য ব্যক্তিকে নিজের উত্তরাধিকারী হিসেবে বেছে নেয়ার গুনাবলী প্রশংসা করেন ।
|