প্রায় চার হাজার বছর আগে চীনের
হলুদ নদী অববাহিকা অঞ্চলে প্রায়ই
বন্যা দেখা দিতো । তা ইয়ু নামক
একজন লোক বন্যা নিয়ন্ত্রনে
পারদর্শী । আশেপাশের জনসাধারণ
তাকে খুব শ্রদ্ধা করেন । তখনকার
চীনা জাতির সর্দার সুন রাজার
আসন তা ইয়ুকে দিলেন । তা ইয়ু
বন্যা নিয়ন্ত্রনের কাহিনী যুগ
যুগ ধরে প্রচারিত হয়।
রাজা ইয়াওয়ের আমলে ঘন ঘন
বন্যা হতো , বন্যার সময় চাষজমি
পানিতে ডুবে যেত , বাড়ী ধ্বসে
পড়তো । অধিবাসীরা বাধ্য হয়ে
উচু জায়গায় যেতে হতো । ইয়াও
বন্যা নিয়ন্ত্রনের জন্য একটি
সভা ডাকেন , সবাই কোনকে বন্যা
নিয়ন্ত্রনের দায়িত্ব দেয়ার
সুপারিশ দেন ।
কোন পর পর নয় বছর বন্যা নিয়ন্ত্রের
চেষ্টা করেন । তিনি বন্যার
পানি বন্ধ করার পদ্ধতি গ্রহন
করে বন্যা নিয়ন্ত্রন করেন বলে
বন্যার পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি
ঘটে ।
রাজা সুন কোনকে হত্যা করে তার
ছেলে ইয়ুকে বন্যা নিয়ন্ত্রনের
দায়িত্ব দেন ।
ইয়ু পিতার বন্যা নিয়ন্ত্রন
পদ্ধতি পরিবর্তন করে খাল খনন
করে আর নদীপথ প্রশস্ত করে বন্যার
পানি সমুদ্রে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা
করেন । তিনি অধিবাসীদের সঙ্গে
মাটি খনন করেন এবং বন্যা নিয়ন্ত্রনের
সময় অনেক পরিমাপক যন্ত্র ও
পদ্ধতি আবিষ্কার করেন ।
১৩ বছরের প্রচেষ্টা করে ইয়ু
বন্যার পানি নদী ও খাল দিয়ে
সমুদ্রে নিতে সার্মথ্য হন ,
অধিবাসীরা আবার জমিতে চাষ করতে
শুরু করেন ।
বন্যা নিয়ন্ত্রনের জন্য ইয়ু
চেষ্টার কোনো ত্রুটি করেন নি
। তার বিয়ের পর ইয়ু তিন-তিনবার
বাড়ীর সামনে এসেও বাসায় প্রবেশ
করেন নি । ইয়ুর ছেলে ছির জন্মের
পর ইয়ু দরজার বাইরে বাচ্ছার
কান্নার শব্দ শুনেও বন্যা নিয়ন্ত্রনের
কাজের জন্য বাড়ী ঢুকেন নি ।
অধিবাসীরা ইয়ুকে খুব শ্রদ্ধা
করেন , সবাই তাকে তাইয়ু অর্থাত
বড় ইয়ু ডাকেন ।
বন্যার নিয়ন্ত্রনের অবদানের
জন্য অধিবাসীরা ইয়ুকে উপজাতির
সর্দার হিসেবে নির্বাচন করেন
।
তাইয়ুর প্রধান অবদান হলো বন্যা
নিয়ন্ত্রন। তিনি একীভূত বন্যা
নিয়ন্ত্রন নীতি পেশ করেন ।
তার একজন সহকারী ‘ সানহাইচিং
’ নামে একটি বই লিখেছেন , এতে
প্রথমবার চীনের নদনদী ও পাহাড়-
পর্বতের অবস্থান , বিভিন্ন
ঘটনা আর জীবজন্তু ও পাখির কথা
বর্ণনা করা হয়েছে ।
বন্যা নিয়ন্ত্রনের কাজ সম্পন্ন
করার পর ইয়ু উপজাতির সর্দার
নির্বাচিত হন , তিনি নিষ্ঠার
সঙ্গে শাসনের কাজ করেন । তার
আমলে অধিবাসীরা শান্তিতে বসবাস
করেন । সমাজ একটি নতুন পর্যায়ে
প্রবেশ করে ।
এই সময়পর্বের শেষ পর্যায়ে উপজাতির
সর্দাররা নিজের অবস্থান কাজে
লাগিয়ে উদ্বৃত্ত মালকে নিজের
ব্যক্তিগত সম্পদ হিসেবে গণ্য
করেন , তারা কমিউনের অভিজাতে
পরিণত হন । উপজাতিগুলোর মধ্যে
যুদ্ধ হলে তারা প্রতিপক্ষের
বন্দীকে নিজের দাস হিসেবে নিজের
সেবা করার আদেশ দেন । এইভাবে
ধীরে ধীরে সমাজে দাসকর্তা ও
দাস--এই দুই শ্রেণী বিভক্ত
হয় । উপজাতির কমিউন ধীরে ধীরে
ভেঙ্গে যায় ।
ইয়ুর মৃত্যুর পর উপজাতির অভিজাতরা
ইয়ুর ছেলে ছিকে সর্দার নির্বাচন
করেন । এইভাবে উপজাতির নির্বাচন
ব্যবস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল
করা হয় । রাজার আসন উত্তরাধিকারসূত্রে
পাওয়ার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত
হয় ।
চীনের ইতিহাসের প্রথম দাস ব্যবস্থার
রাজ্য -- সিয়া রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত
হয় ।
|