কেন্দ্রীভুত শাসন ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠাতা-- ছিংসিহুয়ান

 
      ছিং সিহুয়ান চীনের ছিং রাজবংশের প্রথম রাজা , তার আসল নাম ইংচেন । যুদ্ধরত রাজ্যসমুহের সময়পর্বের শেষ দিকে ছিং রাজ্য সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল । তখন ছিং রাজ্যের অন্য ছয়টি রাজ্য একত্রিকরণের মাধ্যমে শাসন করা করা হতো । ইংচেন রাজা হওয়ার প্রথম দিকে বয়স কম বলে তখনকার প্রধানমন্ত্রী লুইপুওয়ে রাজার পক্ষ থেকে শাসন ক্ষমতা পরিচালনা করেন । খৃষ্টপূর্ব ২৩৮ সালে ইংচেন প্রধানমন্ত্রী লুইপুওয়েকে অপসারণ করে নিজেই শাসন ভার গ্রহণ করেন এবং ওয়েলিয়াও ও লিসি প্রমুখ লোক নিয়োগ করেন। খৃষ্টপূর্ব ২৩৬ সাল থেকে খৃষ্টপূর্ব ২২১ সাল পর্যন্ত ছিং রাজ্য পর পর হান , ওয়ে , ছু , ইয়েন , চাও ও ছি রাজ্য নিশ্চিহৃ করে যুদ্ধরত রাজ্যসমুহ সময়পর্ব শেষ করে চীনের ইতিহাসে প্রথম একত্রিত, বহুজাতিক ও কেন্দ্রীভূত শাসন ব্যবস্থাসম্পন্ন ছিং রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন ।  

  খৃষ্টপূর্ব ২২১ সালে ছিং রাজবংশের প্রথম রাজা ইংচেন গোটা দেশে পুরাতন সামন্ত প্রভূদের জমি দেয়ার প্রথা রদ করে রাষ্ট্রীয় ভূভাগকে একেকটি জেলায় ভাগ করেন এবং রাজার প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রনে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে জেলা পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের শাসন সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন । তিনি ছিং রাজবংশের আইন ব্যবস্থাকে ভিত্তি করে অন্য ছয়টি দেশের আইনগুলোর কোনো কোনো ধারা গ্রহণ করে একীভূত আইন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন । উচ্ছেদ করা ছয়টি রাজ্যের অভিজাত পরিবার ও ধনী ব্যক্তিদের বিচ্ছিন্নতাবাদী তত্পরতা প্রতিরোধের জন্য ছিনসিহুয়ান তাদের দেশের মধ্য অঞ্চল ও পা সু অর্থাত আজকের সিছুয়ান প্রদেশে নির্বাসিত করেন এবং অধিবাসীদের হাতের অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করে ধ্বংস করেন ।  

  অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ছিংসিহুয়ান কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে জমির ব্যক্তিগত মালিকানা ব্যবস্থা আরো মজবুত করার চেষ্টা করেন । খৃষ্টপূর্ব ২১৬ সালে তিনি এই বলে আদেশ দেন যে দেশের জমিদার ও কৃষক যদি সরকারের কাছে জমির পরিমান জানান এবং নির্দিষ্ট পরিমানের খাজনা দেন , তাহলে সরকার তাদের জমির স্বীকৃতি দেবে এবং তাদের অধিকার রক্ষা করবে । ছিংসিহুয়ান যুদ্ধরত রাজ্যসমুহ সময়পর্বের পন্ডিত সানইয়ানের প্রনীত ওজন ও দৈর্ঘ্যের পরিমাপ ব্যবস্থাকে একীভূত পরিমাপক ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহন করেন এবং দেশের একীভূত মুদ্রা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন । দেশের নৌ ও স্থল পথের যানবাহন উন্নত করার জন্য তিনি রাজধানী সিয়েন ইয়ান থেকে আগেকার ইয়েন ও ছি রাজ্যগামী সড়কপথ , সিয়েন ইয়ান থেকে ইয়ুন ইয়ান অর্থাত্ আজকের সানসি প্রদেশের ছুন হুয়ার হয়ে চিউ ইউয়েন অর্থাত আজকের অন্তর্মঙ্গলীয় স্বায়তশাসিত অঞ্চলের পাও থৌ পর্যন্ত সড়কপথ এবং দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে প্রশস্ত সড়ক পথ নির্মাণ করেন । তার উদ্যোগে সিয়ানচিয়ান নদী ও লিচিয়ান নদী যোগাযোগকারী লিনছু নামে একটি খাল খনন করা হয় । 

  সংস্কৃতি ক্ষেত্রে ছিং সিহুয়ান ছিন রাজবংশের লিখিত ভাষাকে একীভূত লিখিত ভাষা হিসেবে স্থির করেন এবং দেশে কঠোর আইন ব্যবস্থা বলবত্ করেন । খৃষ্টপূর্ব ২১২ সালে ছিংসিহুয়ান বিভিন্ন ধরনের বইপত্র ধ্বংস করার ও ব্যক্তিগত বিদ্যালয় বন্ধ করার আদেশ দেন এবং তার জন্য অমরত্বের ওষুধ সন্ধ্যানের দায়িত্ববহনকারী পন্ডিতদের পলায়নের ঘটনায় জড়িত চার শ’জন পন্ডিতকে রাজধানী সিয়েন ইয়ানে জীবন্ত কবর দেন । ইতিহাসে বইপত্র পুড়িয়ে দেয়া ও পন্ডিতদের জীবন্ত কবর দেয়ার ঘটনা বিখ্যাত ।  

   ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর ছিং সিহুয়ান কমান্ডার মেন থিয়েনকে উত্তরাঞ্চলের সংখ্যালঘু জাতি সুন নুর আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পাঠান এবং যুদ্ধমান রাজ্যসমুহের ছিন , চাও ও ইয়েন-- এই তিনটি দেশের উত্তর অংশের প্রাচীরকে সংযুক্ত করে পশ্চিমের লিনথাও অর্থাত্ আজকের কানসু প্রদেশের মিন জেলা থেকে পূর্বের লিয়াও নিং প্রদেশের পুর্বাংশ পর্যন্ত মহাপ্রাচীর তৈরি করেন । এই মহাপ্রাচীর উত্তরাংশের সংখ্যালঘু জাতির আক্রমন প্রতিরোধ করা, ছিন রাজবংশের শাসন মজবুত করা আর সীমান্ত অঞ্চলের নিরাপত্তা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে । ছিং রাজবংশের শেষ আমলে রাষ্ট্রীয় ভুভাগের পরিধি ক্রমেই বিস্তৃত হয় । সমগ্র দেশে জেলার সংখ্যা ৩৬টি থেকে ৪০টিতে পৌছে । 

  একীভূত রাজবংশ প্রতিষ্ঠার পর ছিংসিহুয়ান বিরাটাকার রাজপ্রাসাদ ওফানকুন ও লিসানে বিরাট সমাধিস্থল নির্মাণ করেন । তিনি মোট ছয়বার দেশ ভ্রমণ করেন । যেখানেই গিয়েছেন , সেখানেই দেবতাকে প্রণাম করে তার সাহায্য প্রার্থনা করেছেন এবং চিরকাল সুনাম বজায় রাখার জন্য পাথরের উপরে নিজের নাম খোদাই করেন । অমরত্বের ওষুধ পাওয়ার জন্য তিনি পন্ডিত সুই ফুকে কয়েক হাজার ছেলেমেয়েকে নিয়ে পূর্বসাগরের দেবতাকে প্রার্থনা করতে পাঠান । এতে দেশের বিপুল পরিমান অর্থ ও জনশক্তি ক্ষয় হয় এবং জনগণের জীবন আরো কষ্টকর হয় । খৃষ্টপূর্ব ২১০ সালের জুলাই মাসে ছিংসিহুয়ান রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন ।