উ রাজ্য ও ছু রাজ্যখৃষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে চীনের বসন্ত ও শরত্ আমলের দুটি রাজ্য । খৃষ্টপূর্ব ৫৮৪ সাল থেকে খৃষ্টপূর্ব ৫১৪ সাল পর্যন্ত সত্তর বছরে দুটি রাজ্যের মধ্যে দশটি বিরাটাকার যুদ্ধ হয়েছিলো ।খৃষ্টপূর্ব ৫১৫ সালে উ রাজ্যের রাজপুত্র কুয়ান রাজা হলেন , তিনিই রাজা হে লুই । উ রাজ্যকে যুদ্ধমান রাজ্যসমুহের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশে পরিণত করার জন্যরাজা হে লুই অর্থনীতি বিকাশের ব্যবস্থা নিলেন ,সামরিক শক্তি বাড়ানোর উপর বিশেষ গুরুত্ব দেন । সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য তিনি বিখ্যাত সমরবিদ সুন উকে কমান্ডার নিয়োগ করেন । ফলেউ রাজ্যের শক্তি ক্রমেই বাড়ে ।
ছু রাজ্য দক্ষিণাংশের একটি বড় রাজ্য । শক্তিশালী বলে ছু রাজ্য অনেক ছোট ছোট রাজ্যকে নিশ্চিহৃ করে নিজের ভূখন্ড বাড়িয়েছে । কিন্তু খৃষ্টপূর্ব ৫১৬ সালে ছু চাও ওয়ান রাজা হওয়ার পর রাজকীয় প্রশাসনে দুর্নীতি বৃদ্ধি পায় । প্রতিবেশী থান ও ছাই রাজ্যের সঙ্গে ছু রাজ্য সুপ্রতিবেশী সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে নি । তাই ছু রাজ্যের শক্তি ক্রমেই দুর্বল হয় । খৃষ্টপূর্ব ৫১২ সালে উ রাজা হে লুই ছু রাজ্যের পাশের ছোট রাজ্য সুই ও চুন উ রাজ্য নিশ্চিহৃ করার পর ছু রাজ্যের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালাতে চান ।
উ রাজ্যের কমান্ডার সুন উ মনে করেন , ছু রাজ্যের ভূখন্ড উ রাজ্যের চেয়ে বড় , লোকসংখ্যাও উ রাজ্যের চেয়ে বেশী । যদিও ছু রাজ্য আগের মতো শক্তিশালী নয় , তবে তার সামরিক শক্তি উপেক্ষা করা যায় না । উ রাজ্য বছরের পর বছর যুদ্ধ করার দরুণ দেশের সামরিক শক্তি ও সামরিক সরঞ্জামের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে , তাই উ রাজ্যের উচিত আরো ভালো সুযোগের জন্য অপেক্ষা করা । সুন উ রাজার কাছেউ বাহিনীকে তিন ভাগ করে পালাক্রমে ছু রাজ্যের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক হামলা করার প্রস্তাব করলেন।
উ রাজা হে লুই সুন উর এই প্রস্তাব গ্রহণ করলেন । তাই সুন উ কিছু দিন পর পর একদল বাহিনী ছু রাজ্যের সীমান্তে পাঠিয়ে ছু রাজ্যের বিরুদ্ধে আক্রমণ করে । ছু রাজা উ রাজ্যের উদ্দেশ্য জানেন না , তাই প্রতিবারই প্রতিরোধের জন্য বিপুল সৈন্য পাঠান । কিন্তু ছু রাজ্যের বাহিনী সীমান্তে পৌঁছার পরই উ রাজ্যের বাহিনী অপসারণ করতে শুরু করে । যখন ছু বানিহী সীমান্ত অঞ্চল ত্যাগ করে, উ রাজ্যের দ্বিতীয় দল আবার ছু রাজ্যের সীমান্তে হয়রানি করতে শুরু করে । এই ভাবে উ রাজ্যের বাহিনী একটানা ছয় বছর ছু রাজ্যের বিরুদ্ধেআক্রমণ করেছিল । এতে ছু বাহিনী কাহিল হয় , দেশের সামরিক শক্তি ও প্রচুর সম্পত্তি ক্ষয় হয় , সামরিক শক্তি অনেকদুর্বল হয় ।
খৃষ্টপূর্ব ৫০৬ সালে উ রাজ্য মনে করে ছু রাজ্যের বিরুদ্ধে আক্রমণ করার সময় এসেছে । তখন ছু রাজ্যের সৈন্য সংখ্যাউ রাজ্যের কয়েক গুন , তাই কমান্ডার সুন উ দ্রুতগতিতে যুদ্ধ শেষ করার রণনীতি কার্যকরী করলেন । তিনি কয়েক হাজার সৈন্যনিয়ে গোপনে ছু রাজ্যের সীমান্তে সমাবেশ করলেন ।
ছু রাজাযুদ্ধের কোনো প্রস্তুতি করেন নি । উ রাজ্যের আক্রমণের খবর পেয়ে তিনি কমান্ডার নান ওয়া ও সেন ইন রোনকে সৈন্য নিয়ে প্রতিরোধের আদেশ জারি করলেন । দু পক্ষের মধ্যেপো চু ( আজকের হু পেই প্রদেশের আন লু ) নামে এক জায়গায় চুড়ান্ত যুদ্ধ হল । সেন ইন রোন নান ওয়াকে প্রস্তাব করলেন , নান ওয়া ছু রাজ্যের প্রধান শক্তি নিয়েউ বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ চালাবেন , আর তিনি কিছু সৈন্য নিয়ে উ বাহিনীকে পিছন দিক থেকেআক্রমণ করবেন । দুই দিক থেকেআক্রমণ চালালে উ বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত , এটা উ বাহিনীকে পরাজিত করার সবচেয়ে ভালো উপায় । নান ওয়া সেন ইন রোনের প্রস্তাবে রাজী হলেন ।
কিন্তু সেন ইন রোন সৈন্য নিয়ে চলে যাওয়ার পরনান ওয়া ভাবলেন যুদ্ধে বিজয় লাভের পর সেন ইন রোনের অবদান তার চেয়ে বেশী হবে –এই ভয়ে নান ওয়া বাহিনীর অন্য কমান্ডারের উস্কানিতে পুরোপুরিভাবে প্রস্তুতির কাজ সম্পন্ন হওয়ার আগে নির্ধারিত পরিকল্পনা পরিবর্তন করে উ বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ চালালেন , ফলে নান ওয়া সুন উর বাহিনীর হাতে পরাজয় বরণ করেন । নান ওয়ার প্রধান বাহিনী পরাজিত হওয়ার খবর পেয়ে সেন ইন রোন সৈন্য নিয়ে সাহায্য করতে যান । কমান্ডার সুন উর পরিচালনায় উ বাহিনী সেন ইন রোনের বাহিনীকে ঘেরাও করলো । বিজয়ের কোনো আশা না দেখে সেন ইন রোন তার সহকারীকে তার মাথা কেটে ছু রাজাকে তাদের পরাজয়ের খবর দেয়ারআদেশ দিলেন । ছু রাজা সম্মুখ ফ্রন্টেরপরাজয়ের খবর পেয়ে মন্ত্রীদের বিরোধীতা ও অধিবাসীদের জানমাল উপেক্ষা করে পরিবার-পরিজন নিয়ে রাজধানী ত্যাগ করলেন । সম্মুখ ফ্রন্টের অফিসার ও সৈন্য রাজারপালানোর খবর পেয়ে বাকী সংগ্রামী শক্তি হারালো । উ বাহিনীছু রাজ্যের রাজধানীতে প্রবেশ করে । ছু রাজ্যের মন্ত্রী সেন পাও সিউ অন্য এক শক্তিশালী রাজ্য ---ছিন রাজ্যে গিয়ে উ রাজ্যকে বাঁচানোর জন্য সৈন্য পাঠানোর অনুরোধজানালেন । ছিন বাহিনী উ রাজ্যের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালাল ,এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে উ বাহিনী ছু রাজ্য থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করলো ।
পোচু যুদ্ধ চীনের সামরিক ইতিহাসে অল্প সংখ্যক সৈন্যের বিপুল সংখ্যক সৈন্যকে পরাজিত করা আর দ্রুত বিজয় অজর্নের এক চমত্কার দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে । যুদ্ধের প্রথম দিকে উ বাহিনীর সংখ্যা মাত্র ত্রিশ হাজার , ছু বাহিনীর সংখ্যা দুই লক্ষ । কিন্তু ছু বাহিনী ভুল রণনীতি ও ভুল সিদ্ধান্তের দরুণ পরাজয়বরণ করলো ।
|