খালি নগরের কাহিনী


       চীনে চু কে লিয়ানের নাম সর্বজনবিদিত । যদি কেউ বলেন ,আপনি চু কে লিয়ানের মতো বুদ্ধিমান , তাহলে এর মানে তিনি আপনার ধীশক্তির ভূয়সী প্রশংসা করছেন । খালি নগরের কাহিনী চু কে লিয়ানের মেধা সম্পর্কিত একটি বিখ্যাত কাহিনী । 

  খৃষ্টীয় তৃতীয় শতাব্দীর সময় চীনে তিনটি রাজ্য ছিলো , এই তিনটি রাজ্য হলো উই রাজ্য , সু রাজ্য ও উ রাজ্য । ইতিহাসে এই সময়পর্বকে তিন রাজ্য আমল বলা হয় । এই তিন রাজ্যের মধ্যে প্রায়ই যুদ্ধ ঘটে , কিন্তু কেউ কাউকে নিশ্চিহৃ করতে পারে না । চু কে লিয়ান সু রাজ্যের সামরিক উপদেষ্টা , তিনি যুদ্ধে বুদ্ধি খাটিয়েপ্রায়ই জয় লাভ করেন । 

  একবার উই রাজ্য এই বলে একটি খবর পেয়েছে যে , সু রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল পশ্চিম শহরের সৈন্য শক্তি দুর্বল , সেখানে মাত্র দশ হাজার সৈন্য আছে । তাই উই রাজা কমান্ডার সিমা ইকে এক লক্ষাধিক সৈন্য নিয়ে সু রাজ্যের পশ্চিম নগর দখল করার আদেশ দিলেন । উই রাজ্যের সৈন্য পশ্চিম নগরের দিকে আসার খবর পেয়ে সু রাজ্যের রাজা ও সৈন্যরা উদ্বিগ্ন । কারণ সু রাজ্যের দশ হাজার সৈন্য কি করে উই রাজ্যের লক্ষাধিক সৈন্য প্রতিরোধ করবে ? কিন্তু সু রাজ্যের অন্য জায়গার সৈন্য অল্প সময়ের মধ্যে পশ্চিম নগরে পৌঁছতে পারে না , তাই পশ্চিম নগরের পরিস্থিতিসংকটাপন্ন। সু রাজ্যের সবাই বুদ্ধিমান সামরিক উপদেষ্টা চু কে লিয়ানের উপর পশ্চিম নগর রক্ষার আশা রাখেন। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে চু কে লিয়ানও চিন্তিত ,তাকে অবিলম্বে মোকাবেলার একটি উপায় খুঁজে বের করতে হবে । 

  চু কে লিয়ান কিছুক্ষণ চিন্তা করার পর একটি ভালো উপায় খুঁজে বের করলেন । তিনি শহরের অধিবাসী ও সৈন্যদের নিরাপদ জায়গায় অপসারণের নির্দেশ দিলেন । তার পর তিনি নগরের বড় দরজা খুলে শত্রু বাহিনীর আগমণের অপেক্ষায় থাকেন । কিছুক্ষণ পর উই রাজ্যের কমান্ডার সিমা ই ও তার বাহিনী পশ্চিম নগর ঘেরাও করেন । কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো পশ্চিম নগরের বড় দরজা খোলা , গেটের সামনে একজন সৈন্যও নেই , শুধু একজন বুড়ো ঝাড়ু দিচ্ছে । এই দৃশ্য দেখে সিমা ইর মনে প্রশ্ন জাগলো । ঠিক এই সময় গেটের উপরের মঞ্চে একজন লোক দেখা দিলো । কাছে গিয়ে সিমা ই দেখলেন এই লোকসু রাজ্যের সামরিক উপদেষ্টা চুকে লিয়ান । চুকে লিয়ান ধীরে ধীরে মঞ্চে রাখা একটি বাদ্যযন্ত্রের সামনে বসে সুর বাজাতে শুরু করেন । সঙ্গে সঙ্গেই সুরেলা সুর মঞ্চ থেকে ভেসে আসে । উই রাজ্যের কমান্ডার ও সৈনিকরা অবাক হলেন , অন্য রাজ্যের সৈন্যদের ঘেরাও অভিযানের মোকাবেলা করার বিপদজনক মুহুর্তে চুকে লিয়ান বসে বসে বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছেন , এ সত্যিই একটি অদ্ভুত ব্যাপার । 

  উই রাজ্যের কমান্ডার সিমা ইও একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি । কিন্তু চুকে লিয়ান যে মঞ্চের উপরে বসে বাদ্যযন্ত্র বাজছেন , তার উদ্দেশ্য সিমা ই অনুমান করতে পারছেন না । তিনি জানেন চুকে লিয়ান একজন বুদ্ধিমান উপদেষ্টা , কিন্তু তিনি যে নগরের দরজা খুলে উই রাজ্যের লক্ষাধিক সৈন্য ঢুকতে দিয়েছেন , তা’ একেবারে তার কল্পনার বাইরে । তিনি ভাবলেন , অবশ্যই নগরের ভিতরে প্রচুর সৈন্য আছে । উই রাজ্যের সৈন্যদের নগরে প্রবেশের পরতারা মোক্ষম আঘাত হানবে । ঠিক এই সময় মঞ্চ থেকে ভেসে আসা সুরের গতি বাড়লো , শুনতে মনে হয়ঝড়বৃষ্টি হবে । সিমা ই সন্দেহ করেন , এটা চুকে লিয়ান তার সৈন্যদের আক্রমণ করার ইংগিত দিচ্ছেন , তাই তিনি তত্ক্ষনাত সৈন্য প্রত্যাহারের আদেশ দিলেন । উই রাজ্যের লক্ষাধিক সৈন্য অল্প সময়ের মধ্যেই সু রাজ্য থেকে পশ্চাদপসরণ করলো। এই ভাবে বিনা সংঘর্ষ সু রাজ্যের পশ্চিম নগর রক্ষা পেলো । এটাই ইতিহাসের বিখ্যাত খালি নগরের কাহিনী । 

  খালি নগরের কাহিনী ছাড়া চুকে লিয়ানের আরো অনেক বুদ্ধির কাহিনী আছে , এই সব কাহিনী চীনের অন্যতম প্রাচীনউপন্যাস ‘ সান কোন ইয়েন ই ’তে সংগ্রহ করা হয়েছে । আপনিচুকে লিয়ানের মেধার কাহিনী পছন্দ করলে এই উপন্যাস পড়তে পারেন ।