মো চির কাহিনী


        মো চি খৃষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে জন্ম গ্রহণ করেন । সেই আমলে চীনে অনেক ছোট ছোট রাজ্য বিদ্যমান ছিলো । ছু রাজ্য তখনকার একটি বড় রাজ্য আর সুন রাজ্য একটি ক্ষুদ্র রাজ্য ছিল । 

  কোন সু পান নামে একজন মিস্ত্রী ছু রাজ্যের জন্য ‘ ইউন থি ’ নামে এক ধরনের নতুন অস্ত্র তৈরী করেন । এই অস্ত্র বেশ বড় , শত্রু রাজ্যের প্রধান গেটে উঠার সময় ব্যবহার করা হয় । এই অস্ত্র তখনকার একটি নতুন রণকৌশলগত অস্ত্র বলা যায় । এই নতুন অস্ত্রের নিমার্ণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরএই অস্ত্র পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহারের জন্য ছু রাজ্য ক্ষুদ্র সুন রাজ্যের বিরুদ্ধে আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিলো । 

  এই খবর পেয়ে মোচি একটানা দশ দিন হেটেছু রাজ্যের রাজধানী পৌঁছে মিস্ত্রী কো সুন পানের সঙ্গে দেখা করেন । তিনিপরামর্শের মাধ্যমে কো সুন পানকে সুন রাজ্যের বিরুদ্ধে আক্রমণ বন্ধ করতে চান । কোন সুন পানকে দেখে মোচি বলেছেন , উত্তরাংশের একজন লোক আমাকে অপমান ও অত্যাচার করে , আমি আপনার হাত দিয়ে তাকে হত্যা করতে চাই । এই কথা শুনে কোন সুন পান মুখ গম্ভীর করে কিছু বলেন নি । মোচি আরো বললেন , ওই লোক হত্যার জন্যধন্যবাদ জানানোর জন্য আমি আপনাকে প্রচুর টাকা দিতে পারি । কোন সুন পান বললেন , আমিনৈতিকতা অনুসারে কাজ করি , টাকা পয়সার জন্য আমি নরহত্যার কাজকরবো না । মোচি বললেন , ছু রাজ্য একটি বড় রাজ্য , লোকসংখ্যা কম হলেও আয়তন বড় ।কিন্তু এমন একটি শক্তিশালী বড় রাজ্য ক্ষুদ্র সুন রাজ্যের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে । এটা একটা অন্যায় যুদ্ধ । আপনি মুখে নরহত্যা না করার কথা বলছেন , কিন্তু যদি একবার যুদ্ধবাধে , কতো নিরীহ অধিবাসী আপনার তৈরী নতুন অস্ত্রের আঘাতে মরা পড়বে ? আপনার নিজের হাতে নরহত্যার সঙ্গে এর তফাত কি ?  

  মোচির কথা শুনে কোন সুন পান কোনো কথাবলতে পারেন না । তিনি বলেছেন , সুন রাজ্যের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর সিদ্ধান্ত ছু রাজা নিয়েছেন , এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই ।মোচি ও কোন সুন পান ছু রাজার কাছে গেলেন । ছু রাজাকে দেখে মোচি প্রথমে যুদ্ধের কথা উল্লেখ করেন নি । তিনি ছু রাজাকে বললেন , এখন কিছু লোক নিজের সুন্দর গাড়ী পাশে রেখে প্রতিবেশীর পুরানো গাড়ী চুরি করতে চাচ্ছে । নিজের সুন্দর সুন্দর পোশাক না পরে প্রতিবেশীর পুরানো পোশাক চুরি করতে চাচ্ছে । আপনি বলুন , এই ধরনের লোক কাকে বলে ? ছু রাজা মোচির এই কথা বলার উদ্দেশ্য জানেন না , তাই তিনি বললেন , এই ধরনের লোককে চোর বলা যায় । মোচি এই সুযোগে ছু রাজাকে বললেন , ছু রাজ্যের আয়তন বড় , সুন রাজ্য একটি ক্ষুদ্র রাজ্য । দুটির রাজ্যের শক্তিসুন্দর গাড়ী ও পুরানো গাড়ী আর সুন্দর পোশাক ও পুরানো পোশাক তুলনা করা যায় । কাজেই আমি মনে করিছু রাজ্য যে সুন রাজ্যের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে , তা’ ঠিক যেন চোর প্রতিবেশীর জিনিস চুরি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ।

    ছু রাজা মোচির কথা শুনে রাগ করলেন । কিন্তু মুখে বললেন , আপনি খুব ভালো কথা বলেছেন । কিন্তু কোন সু পান আমার জন্য ‘ ইয়ুন থি ’ নামে নতুন অস্ত্র তৈরী করেছেন , তাই সুন রাজ্যের বিরুদ্ধে আক্রমণ আমি বন্ধ করতে চাই না । মোচি বললেন ইয়ুন থি আপনার ধারনার মতো শক্তিশালী নয় । আমার এই কথা যদি আপনি বিশ্বাস না করেন , তাহলে আমি কোন সুন পানের সঙ্গে এই অস্ত্র পরীক্ষা করতে পারি । ছু রাজা অস্ত্র পরীক্ষায় প্রয়োজনীয় সব কিছু প্রস্তুত করেন । কো সুন পাননতুন অস্ত্র ‘ ইয়ুন থি ’ দিয়ে রাজ্যের প্রধান গেটে উঠার চেষ্টা করেন , মোচি তা’ প্রতিরোধের চেষ্টা করেন । বার বার চেষ্টা করে মোচি কো সু পানের চেষ্টা ব্যর্থ করে দেন । শেষেআক্রমণের সব অস্ত্র ও সরঞ্জাম ব্যবহারে করেও কোন সু পান রাজ্যের প্রধান গেটে উঠতে পারেন নি , কিন্তুরাজ্য রক্ষার কৌশল মোচির আরো আছে । 

  কোন সু পান পরাজয় স্বীকার করতে চান না , তিনি মোচিকে বললেন , আমি জানি কিভাবে আপনাকে পরাজিত করবো , কিন্তু এখন একথা আমি বলবো না । মোচিও বললেন ,আপনাকে পরাজিত করার উপায় আমারও আছে , এখন আমিও বলবো না । ছু রাজা মোচিকে এই কথা না বলার কারণ জিজ্ঞেস করেন । মোচি বললেন , কো সু পানের আমাকে পরাজিত করার উপায় হলো আমাকে হত্যা করা । তিনি মনে করেন , আমাকে হত্যা করলেছু রাজ্যের আক্রমণ প্রতিরোধের লোক আর থাকবে না । কিন্তু আমি আমার রণকৌশল আমার ছাত্রকে শিখিয়েছি । আমার মৃত্যু হলেওছু রাজ্যের সৈন্য সুন রাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না ।

  ছু রাজা মোচির এই কথা শুনে বাধ্য হয়ে সুন রাজ্যের বিরুদ্ধে আক্রমণ না করার প্রতিশ্রুতি দিলেন । মোচি সাহসের সঙ্গে বুদ্ধি খাটিয়ে সুন রাজ্যের নিরাপত্তা রক্ষা করলেন ।