ছু লুনের চাও থাই হৌকে পরামর্শ দেয়ার কাহিনী


       খৃষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর সময় চীন যুদ্ধমান রাজ্যসমূহের আমলে ছিলো । চাও রাজ্যের রাজার মা চাও থাই হৌ শাসক ক্ষমতা প্রয়োগ করেন । তখন শক্তিশালী ছিন রাজ্য চাও রাজ্যের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালাতে চায় , তাই চাও রাজ্য সুপ্রতিবেশী বন্ধুদেশ ছি রাজ্যের সাহায্য চায় ।ছি রাজ্যচাও রাজ্যের দাবী গ্রহণ করে সৈন্য পাঠাতে রাজি হয় । কিন্তু নিজ দেশের স্বার্থ বিবেচনা করে চাও থাই হৌর কাছে একটি শর্ত পেশ করে । ছি রাজ্যের এই শর্ত হলো চাও থাই হৌর ছোট ছেলে ছান আন চুনকে পণবন্দী হিসেবে ছি রাজ্যে পাঠাতে হবে । চাও থাই হৌ তার ছোট ছেলেকে খুব আদর করেন । তার কোনো অঘটন ঘটার ভয়ে চাও থাই হৌ দীর্ঘ সময় এই শর্তে রাজী হন না । মন্ত্রীরা রাজ্যের নিরাপত্তার জন্য চাও থাই হৌকে তার ছেলে ছান আন চুনকে পণবন্দী হিসেবে ছি রাজ্যে পাঠানোর পরামর্শ দেন । তাদের পরামর্শ শুনে চাও থাই হৌ রাগ করে বললেন , পরবর্তীকালে কেউ আমার সামনে আবার এই পরামর্শ দিলে আমি তার মুখে থুথু দেবো । 

  একদিন চাও রাজ্যের ছু লুন নামে এক প্রবীণ মন্ত্রী চাও থাই হৌর কাছে গেলেন । চাও থাই হৌ মনে করেন তিনি আবার ছাও আন চুনকে ছি রাজ্যে পাঠানোর জন্য পরামর্শ করতে এসেছেন , তাই ছু লুনকে দেখে কোনো কথা বলেন নি । কিন্তু ছু লুন ছাও থাই হৌকে দেখে বললেন , আমি অনেক দিন আপনাকে দেখি নি , আপনি ভালো আছেন ?  

  চাও থাই হৌ বললেন , সম্প্রতি আমি খুব কম বাইরে যাই , খাওয়ার রুচিও কম । ছু লুই বললেন , সম্প্রতি আমারও ক্ষিদে নেই , কিন্তুহাঁটাহাটি পুরোপুরি বন্ধ করি নি । প্রতি দিন এক বা দু কিলোমিটার পথ হাঁটা শরীরের পক্ষে ভালো । চাও থাই হৌ বললেন , আমি কিন্তু আপনার মতো শরীরচর্চা করতে পারি না । শুভেচ্ছা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে চাও থাই হৌয়ের রাগ কমে ।  

  এই সময় ছু লুন বললেন , আমার ছোট ছেলের নাম সুই ছি , আমি তাকে খুব আদর করি , কিন্তু সেভালো ভাবে পড়াশুনা করে না , এর জন্য আমি খুব চিন্তিত । আমার বয়স দিন দিন বাড়ছে , আপনিরাজপ্রাসাদের রক্ষীর কাজ তাকে দিতে পারেন ? আমি আজ বিশেষভাবে এই অনুরোধ জানানোর জন্যই এসেছি । চাও থাই হৌ বললেন , আচ্ছা , আপনার ছেলের বয়স কতো ? ছু লুন বললেন , পনেরো বছর , আশা করি আমার মৃত্যুর আগের তাকে আপনার হাতে দিতে পারি । চাও থাই হৌ বললেন , আমি ভাবতেওপারি নি যে পুরুষ মানুষও নিজের কনিষ্ঠ ছেলেকে এতো আদর করেন । ছু লুন বললেন , পুরুষরা হয়ত নারীর চেয়েও নিজের ছোট ছেলেকে আদর করেন । চাও থাই হৌ হেসে বললেন , এটা অসম্ভব , নারীরা সাধারণতঃ ছোট ছেলেমেয়েকে বেশী আদর করেন । ছু লুন দেখলেন , চাও থাই হোর মন ভালো হয়েছে , তাই তাকে বললেন , পৃথিবীর সব বাবা-মা নিজের ছেলেমেয়েকে ভালোবাসেন । কিন্তু তাদেরকে ছেলেমেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে হবে।ছু লুনের এই কথায় চাও থাই হৌ সায় দিলেন । ছু লুন আরো বললেন , ইতিহাসে রাজপরিবারের ছেলে ও নাতীদের মধ্যে খুব অল্প লোক স্থায়ীভাবে রাজার আসনে বসতে পেরেছে । তার কারণ তাদের দক্ষতার জন্য নয় , আসল কারণ হচ্ছে তাদের মর্যাদা বেশী হলেও তারা রাজ্যের জন্য কোনো অবদান রাখেন নি । তাই তারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পরহাতের ক্ষমতা বজায় রাখতে পারেন না । আপনি আপনার ছোট ছেলের অবস্থান অনেক উন্নত করেছেন এবং তাকে প্রচুর ভূসম্পত্তি ও ধনসম্পদ দিয়েছেন , কিন্তু আপনি তাকে রাজ্যের জন্য অবদান রাখার সুযোগ দিচ্ছেন না । আপনি চিন্তা করুন , আপনার মৃত্যুর পর ছান আন চুন কিভাবে স্থায়ীভাবেচাও রাজ্যের রাজা হবেন ? তাই আমি মনে করি আপনি আপনার ছোট ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেন নি । 

  মন্ত্রী ছু লুনের কথা শুনে চাও থাই হৌ বুঝতে পেরেছেনছু লুনও পণবন্দী হিসেবে তার কনিষ্ঠ ছেলেকে ছি রাজ্যে পাঠাতেপরামর্শ করতে এসেছেন । কিন্তু ছু লুনের সঙ্গে আলাপ করতে করতে চাও থাই হৌতার পরামর্শ গ্রহণ করেছেন । তিনি নিজের ছোট ছেলেকে ছি রাজ্যে পাঠাতে রাজী হলেন । তার ছেলে ছি রাজ্যে যাওয়ার পর ছি রাজ্যবিপদের সময় সৈন্য পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিলো ।