থিয়ে চির ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার কাহিনী


       খৃষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীর সময় চীন যুদ্ধমান রাজ্যসমূহের যুগে ছিলো । সেই আমলে অনেক ছোট ছোট রাজ্য ছিলো । উই রাজ্যের রাজকীয় কমর্কর্তা সুন পিন সহকর্মী ফান জুয়েনের অন্যায় আচরণ সহ্য করতে না পেরে ছি রাজ্যের দূতের সঙ্গে উই রাজ্য ত্যাগ করে ছি রাজ্যের রাজধানী গেলেন । 

  ছি রাজ্যের দূত ছি রাজ্যের কমান্ডার থিন চিকে সুন পিনের পরিচয় করিয়ে দিলেন । থিয়েন চি, সুন পিনের সঙ্গে রণকৌশল আলোচনা করেন , সুন পিন তিন দিন তিন রাত সেই সম্পর্কে নিজের মতামত ও অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন , থিয়েন চি সুন পিনের বক্তব্যের প্রশংসা করেন এবং তাকে সম্মানিত অতিথি হিসেবে গণ্য করেন । থিয়েন চিকে নিজের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য সুন পিন প্রায়ই তাকে পরামর্শ দেন । 

  ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা ছিলোছি রাজ্যের অভিজাত ব্যক্তিদের সবচেয়ে প্রিয় খেলা । রাজা ও মন্ত্রীরা ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা থেকে আনন্দ পান এবং জয়-পরাজয়ের জন্য পণ রাখতেন । থিয়েন চি বহুবার রাজা ও মন্ত্রীদের ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার জয়ের জন্য পণ রেখেছিলেন , কিন্তু একবারও জিতেন নি। একদিন ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায়থিয়েন চি আরেক বার পরাজিত হয়ে বাড়ী ফিরলেন । সুন পিন তার বিষন্ন মুখ দেখে তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন ,আমি আপনার সঙ্গে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার মাঠে যাব , আমি হয়ত আপনাকে সাহায্য করতে পারবো । 

  পরবর্তী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার সময় সুন পিন , থিয়েন চির সঙ্গে প্রতিযোগিতার মাঠে যান । প্রতিযোগিতা দেখার জন্য অনেক রাজকর্মকর্তা ও স্থানীয় অধিবাসীরাও সেখানে যান । সুন পিন লক্ষ্য করেছেন , ঘোড়াগুলো দৌড়ের গতি অনুসারে ঘোড়াগুলো তিন ভাগে ভাগ করা হয় । তিন ভাগের ঘোড়ার সাজানোর পদ্ধতিও ভিন্ন । একই স্তরের ঘোড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ।তিনটি প্রতিযোগিতায় দুবার জয়ী হলে বিজয়ী হবে । 

  সুন পিন লক্ষ্য করেছেন , থিয়েন চির ঘোড়াগুলো অন্যদের ঘোড়াগুলোর মধ্যে তফাত বেশি নয় । তিনি মনে করেন সঠিক কৌশলব্যবহার করা হয় নি বলে তার ঘোড়াগুলো পরাজিত হয়েছে । তাই সুন পিন থিয়েন চিকে বললেন , আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন , আপনার বিজয় নিশ্চিত করার উপায় আমার আছে ।থিয়েন চি তার কথা শুনে খুশি হয়ে হাজার লিয়ান সোনার পণ রেখে রাজাকে তার সঙ্গেপ্রতিযোগিতার আমন্ত্রণ জানালেন । রাজা প্রতিযোগিতায় কখনও পরাজিত হন নি , তাই তিনি থিয়েন চির আমন্ত্রন গ্রহণ করলেন । 

  প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আগে সুন পিনের প্রস্তাব অনুসারে সুন পিন থিয়েন চির তৃতীয় শ্রেণীর ঘোড়াকেপ্রথম শ্রেণীর ঘোড়ার সাজে সাজিয়ে রাজার প্রথম শ্রেণীর ঘোড়ার সঙ্গে প্রতিযোগিতার সিদ্ধান্ত নিলেন । প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার পর ছি রাজার ঘোড়া আগে আগে দৌড় দিচ্ছে , কিন্তু থিয়েন চির ঘোড়া রাজার ঘোড়ার অনেক পিছনে। এই দৃশ্য দেখে রাজা হো হো করে হাসলেন।দ্বিতীয় প্রতিযোগিতায়সুন পিনের প্রস্তাব অনুসারে থিয়েন চির প্রথম শ্রেণীর ঘোড়া ও রাজার দ্বিতীয় শ্রেণীর ঘোড়ার মধ্যেপ্রতিযোগিতা হলো । দর্শকদের হর্ষধ্বনির মধ্যে থিয়েন চির ঘোড়া রাজার ঘোড়াকে ছাড়িয়েছে বলেথিয়েন চি দ্বিতীয় প্রতিযোগিতায় জিতলেন । তৃতীয় প্রতিযোগিতায় থিয়েন চির দ্বিতীয় শ্রেণীর ঘোড়া ও রাজার তৃতীয় শ্রেণীর ঘোড়ার মধ্যে প্রতিযোগিতা হলো , তাই থিয়েন চির ঘোড়া আরেকবার রাজার ঘোড়াকে ছাড়িয়ে আবার জিতলো । ফলে থিয়েন চি তিনটি প্রতিযোগিতায় দুটিতে জয় লাভ করে রাজাকে পরাজিত করলেন । 

  ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় রাজা এর আগে একবারও পরাজিত হন নি , প্রতিযোগিতার এই ফল দেখে তিনিঅবাক হলেন । তিনি জানেন না থিয়েন চি কোথা থেকে এতো ভালো ঘোড়া পেলেন । এই সময় থিয়েন চি রাজাকে বললেন , তিনি ভালো ঘোড়া পান নি , কিন্তু কৌশল ব্যবহার করে প্রতিযোগিতায় জয় লাভ করেছেন । তিনি ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় সুন পিনেরকৌশল রাজাকে জানালেন । রাজা তার কথা শুনে তত্ক্ষনাত্ সুন পিনকে রাজপ্রাসাদে আসার আমন্ত্রন জানালেন । সুন পিন ছি রাজাকে বললেন , দুপক্ষের শক্তি সমান হলে রণকৌশল ব্যবহার করে অপর পক্ষকে পরাজিত করা যায় । দুপক্ষের মধ্যে শক্তির ব্যবধান বেশী হলেও উপযুক্ত কৌশল ব্যবহার করে যুদ্ধের ক্ষতি ন্যূনতম পর্যায়ে রাখা যায় ।রাজা সুন পিনকে সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করে তাকে ছি রাজ্যের সৈন্যবাহিনী পরিচালনার দায়িত্বদিলেন । সুন পিন থিয়েন চিকে সাহায্য করেন , ফলে অন্য রাজ্যের সঙ্গে লড়াইয়ে ছি রাজ্য বার বার জয় লাভ করে ।