সি মেন পাওয়ের কাহিনী 


       সি মেন পাও খৃষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর লোক । তিনি একজন দক্ষ ব্যক্তি , তাই রাজা তাকে জেলা প্রশাসক হিসেবে ইয়েদি নামে এক জায়গায় পাঠালেন । সি মেন পাও ইয়েদি পৌঁছেই ওখানকার বৃদ্ধবৃদ্ধাদের জিজ্ঞেস করেন অধিবাসীদের পক্ষে সবচেয়ে কষ্টের ব্যাপার কি । বয়োবৃদ্ধরা সি মেন পাওকে বললেন , তাদের পক্ষে প্রতি বছর নদী দেবতার জন্য স্ত্রী জোগাড় করা সবচেয়ে দুঃখের ব্যাপার , এই কারণে গোটা ইয়েদি অঞ্চলের অধিবাসীদের জীবন অনেক কষ্টকর হয়ে উঠেছে। 

  ইয়েদি হোয়াং হো নদীর তীরবর্তী একটি জেলা । ওখানকার একটি উপকথায় বলা হয়েছে , হোয়াং হো নদীর দেবতা নদীতে থাকে , প্রতি বছর দেবতা এক নতুনস্ত্রী চায় ।স্থানীয় অধিবাসীরা প্রতি বছর দেবতার জন্য স্ত্রী জোগাড় না করলে নদীর দেবতা রাগ করবেন এবং বন্যা সৃষ্টি করে গোটা অঞ্চলের অধিবাসীদের বন্যার পানিতে ডুবিয়ে দেবেন । তাই দীর্ঘকাল ধরে স্থানীয় সরকার ও ডাকিনীরা সোত্সাহে হোয়াং হো দেবতার জন্য তথাকথিত স্ত্রী বেঁছে নেয়ার কাজ করে । তারা এই সুযোগে অধিবাসীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত কর আদায় করে । 

  বয়োবৃদ্ধরা সি মেন পাওকে বলেন , প্রতি বছর এক ডাকিনী বুড়ী গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ায় । গরীব পরিবারের সুন্দরী মেয়ে দেখে ডাকিনী বুড়ী বলবে এই মেয়ের হোয়াং হোদেবতার স্ত্রী হওয়া উচিত । ডাকিনীর এই কথা শুনে স্থানীয় সরকার লোক পাঠিয়ে মেয়েটিকে জোর করে নিয়ে যায় । তারা এই মেয়ের জন্য আলাদা থাকার ব্যবস্থা করে , মেয়ের জন্য নতুন পোশাক তৈরী করে এবং ভালো খাবার খেতে দেয় । দশ-বারো দিন পর দেবতার বিয়ের দিন সরকারী কর্মকর্তা ও ডাকিনীরা মেয়েটিকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে একটি মাদুরে বসিয়ে মাদুরসহনদীতে ফেলে দেয় । প্রথম দিকে মেয়ে পানির উপর ভাসে , কিন্তু ধীরে ধীরে মেয়ে ও মাদুর পানিতে ডুবে যায় । এই সময় ডাকিনী বুড়ীরা ঘোষণা করে দেবতা তার নতুন স্ত্রী পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছে । বৃদ্ধবৃদ্ধাদের কথা শুনে সি মেন পাও কিছুই বলেন নি । বয়োবৃদ্ধরা নতুন জেলা প্রশাসকের প্রতি বড় আশা রাখেন নি । 

  সেই বছর নদী দেবতার নতুন বউ গ্রহনের সময় এলো । সি মেন পাও খবর পেয়ে সৈন্য নিয়ে আগে আগেই নদীর তীরে গেলেন । কিছুক্ষণ পর স্থানীয় সরকারের কর্মীরা , ধনী পরিবারের লোকেরা , ডাকিনী বুড়ী আর নির্বাচিত মেয়ে নদীর তীরে আসে । এবার ডাকিনী বুড়ীর বয়স সত্তরের বেশী । 

   এই সময় সি মেন পাওজেলা প্রশাসক হিসেবে প্রথমে বললেন , নির্বাচিত মেয়ে নিয়ে এসো , আমি দেখবো মেয়েটি সত্যিই সুন্দর কিনা । মেয়েটিকে সি মেন পাওয়ের সামনে নিয়ে যাওয়া হয় । সি মেন পাও মেয়েটি দেখে উপস্থিত সবাইকে বললেন , এই মেয়ে সুন্দর নয় , হোয়াং হো নদীর স্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা তার নেই । কিন্তু দেবতানতুন স্ত্রীর জন্য অপেক্ষা করছেন । তিনি ডাকিনী বুড়ীকে বললেন ,আপনিদয়া করে দেবতার কাছে গিয়ে তাকে বলবেন , আমরা আরেকজন সুন্দর মেয়ে বেছে নিয়ে পাঠাবো । এই কথা বলে সি মেন পাও সঙ্গে নেয়া সৈন্যদের সেই ডাকিনী বুড়ীকে নদীতে ফেলে দেয়ার আদেশ দিলেন । কিছুক্ষণ পর সি মেন পাও বললেন , বুড়ী ডাকিনী কেনএখনও দেবতার কাছ থেকে ফিরে আসেন নি , দেবতাকে এই কথা জানাতে আমরাআরেকজন পাঠাবো । এই কথা বলে সি মেন পাও বুড়ী ডাকিনীটির একজন সহকারীকে নদীতে ফেলে দেয়ার আদেশ দিলেন । এই ভাবে সি মেন পাও পর পর বুড়ী ডাকিনীর তিনজন সহকারী নদীতে ফেলা দেয়ার আদেশ দিলেন । 

  নদীর তীরে দাড়ানো সরকারী কমর্কর্তা , ধনী পরিবারের লোক ও আশেপাশের অধিবাসী সি মেন পাওয়ের কান্ড দেখে অবাক হলো । কিন্তু সি মেন পাও সশ্রদ্ধচিত্তে দাঁড়িয়ে আছেন , যেন একাগ্রচিত্তে নদী দেবতার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছেন । কিছুক্ষণ পর সি মেন পাও বললেন , আমি মনে করি নদী দেবতা একটি অতিথিপরায়ন দেবতা , তিনি আমাদের দূতদের আপ্যায়ন করছেন । আমরা আরেকজন দূত সেখানে পাঠাবো , কেমন ?এই কথা বলে তিনি প্রতি বছর নদী দেবতার তথাকথিত স্ত্রী জোগাড়ের কাজে নিয়োজিত সরকারী কমর্কর্তা ও স্থানীয় ধনী ব্যক্তিদের দিকে তাকান । সি মেন পাওয়ের কথা শুনে তারা সবাই তার সামনে হাটু গেড়ে ক্ষমা চাইলো , তারা ভয় পায় , সি মেন পাও রাগ করে তাদেরকেও নদীতে ফেলে দেবেন । 

  সি মেন পাও উচ্চস্বরে উপস্থিত সকল ব্যক্তিকে বললেন , নদী দেবতার জন্য স্ত্রী জোগাড় করা এক লোক-ঠকানো ব্যাপার । পরবর্তীকালে কেউ যদি আবার এই ধরনের প্রতারনামূলক কাজ করে , তাহলে আমি তাকে নদীতে ফেলে দেবো । সেই সময় থেকে ইয়ে তি জেলায় আর নদী দেবতার জন্য স্ত্রী জোগাড়ের ঘটনা ঘটে নি । সি মেন পাও বুদ্ধি খাটিয়ে শাসনের কাজ করে ইয়ে তি জেলায় সুশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করেন ।