প্রাচীন চীনের সাহিত্য ইতিহাসে সুন ইয়ু নামে এক গুরুত্বপূর্ণ লেখক ছিলেন । প্রাচীন পুথিপত্রে বলা হয়েছে , সুন ইয়ু এক সুদর্শন ব্যক্তি । সুন ইয়ু চীনের বিখ্যাত কবি ছু ইউয়েনের একই যুগের লেখক । ছু ইউয়ান ‘ ছু ছি ’ নামে এক ধরনের সুন্দর সাহিত্য রুপ সৃষ্টি করেন । কবিতার মতো ‘ ছু ছি ’ নামক সাহিত্য রচনায় সুন্দর সুন্দর শব্দ ও উপমা দিয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য বা কোনো একটি বিষয় বণর্না করা হয় । ছু ইউয়ানের মৃত্যুর পর সুন ইয়ু ‘ ছু ছির ’ একজন গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিকে পরিণত হয়েছেন । ‘ তেন থু চি হাও সে ফু ’ নামে অন্য লোকের নামে লেখাতার একটি প্রবন্ধেসুন ইয়ু সম্পর্কিত একটি কাহিনী বণর্না করা হয়েছে , এই কাহিনীর নাম ‘ দেওয়াল থেকে প্রতিবেশীনীর উঁকি মারার কাহিনী ’ ।
এই কাহিনীতে বলা হয়েছে , সুন ইয়ু ও তেন থু চি দুজনই ছু রাজ্যের রাজকীয় সরকারের কর্মকর্তা এবং প্রায়ই ছু রাজার সঙ্গে পরামর্শের সুযোগ পান। তেন থু চি সুন ইয়ুর বুদ্ধি ও দক্ষতা দেখতে পারেন না , তাই সুযোগ পেলেই ছু রাজার সামনে সুন ইয়ুর বিরুদ্ধে কথা বলেন । একবার তেন থু চি ছু রাজাকে বললেন , সুন ইয়ু একজন সুদর্শন ব্যক্তি , প্রায়ই নিজের ধীশক্তি জারি করেন এবং সুন্দরী নারীর সঙ্গে মিতালী করতে পছন্দ করেন । পিছনের ভবনে এতো বেশী সুন্দরী নারী থাকেন ,আপনি সুন ইয়ুকে আপনার সঙ্গে পিছনের ভবনে যেতে দেবেন না , নাহলে সমস্যা হবে । এ কথা আপনাকে মনে রাখতে হবে ।
ছু রাজা সুন ইয়ুকে ডেকে পাঠিয়ে তার কাছ থেকে তেন থু চির কথার প্রমাণ পেতে চান । সুন ইয়ু বললেন , আমি একজন সুদর্শন ব্যক্তি , এটা বাবা-মার উপহার । আমি অধ্যবসায়ের সঙ্গে পড়াশুনা করে জ্ঞানাজর্ন করেছি । কিন্তু তেন থুন চি যে সুন্দরী নারীর সঙ্গে মিতালীর কথা বলেছেন , তা’ আমি স্বীকার করতে পারি না ।
ছু রাজা বললেন , আমি কি ভাবে আপনার এই কথা বিশ্বাস করতে পারি ?
সুন ইয়ু বললেন , পৃথিবীতে ছু রাজ্যে সুন্দরী নারী সবচেয়ে বেশী । ছু রাজ্যে আমার জন্মস্থান ছেন লিতে সুন্দরী নারী সবচেয়ে বেশী । ছেন লির সবচেয়ে বিখ্যাত সুন্দরী আমার প্রতিবেশীনী ।আমার এই প্রতিবেশীনী সত্যিই একজন সুন্দরী । এক সেন্টিমিটার উচ্চ বা নীচু হলে তাকে নিখুঁত বলা যায় না। মুখে পাওদা ব্যবহার করলে বেশী ফর্সা হবে , রূজ মাখলে বেশী লাল হবে। তার দাঁত , চুল ও চালচলন সবই সুন্দর । তার মৃদু হাসি দেখে প্রচুর লোক মুগ্ধ হয় । কিন্তু এই সুন্দরী প্রতিবেশীনী গত তিন বছর ধরে আমাকে দেখার জন্য প্রায়ই তার বাড়ীর দেওয়ালের নীচে লুকিয়ে উকিঁ দিতেন । এই কথা জেনেও আমি বিচলিত হই নি , আসলে আমি নয় , তেন থু চিই সব সময় নারীর কথা চিন্তা করেন ।
ছু রাজা তার এই কথা বলার যুক্তি বলতে অনুরোধ করলেন । সুন ইয়ু বললেন , তেন থু চির স্ত্রী সুন্দর নয় , কিন্তু তেন থুন চি তাকে দেখেই তাকে পছন্দ করেছেন এবং এই তার সঙ্গে বিয়ে করে পাঁচটি বাচ্ছা জন্ম করেছেন । ছু রাজা সুন ইয়ুর কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলেন । এটাই দেওয়াল থেকে প্রতিবেশীনীর উকিঁ দেয়ার কাহিনী ।
প্রাচীন পুঁথিপত্রে সুন ইয়ুর জীবন কাহিনী সম্পর্কিত প্রবন্ধ কম , কিন্তু ছু ইউয়ানের সৃষ্ট সাহিত্যিক রুপ ‘ ছু ছির’ উত্তরাধিকারী হিসেবে চীনের সাহিত্যে সুন ইয়ুর প্রভাব বিরাট ।‘ কাও থান ফু ’ ও ‘ সেন নুই ফু ’সহ সুন ইয়ুর লেখা দশ-বারোটি প্রবন্ধ পাওয়া গেছে । এই সব প্রবন্ধে সুন ইয়ু তার কল্পনা শক্তি ও রচনাশৈলী দিয়ে নারী চরিত্রের সৌন্দর্য ও ভাবভঙ্গী বণর্না করেছেন এবং পরবর্তীকালের লেখকের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন । যেমন বিখ্যাত লেখক ছাও চির লেখা ‘ লো সেন ফু ’ ও সিয়ে লিন ইয়ুনের লেখা ‘ চিয়ান ফেই ফু ’ আর সিমা সিয়ান রুর লেখা ‘ মেই রেন ফু ’ ইত্যাদি রচনায় সুন ইয়ুর রচনাশৈলী অনুকরণ করে উচ্চাকাঙ্খা পোষনকারী সুন্দরীর চরিত্র সৃষ্টি করা হয়েছে। আসলে লেখকরা এই সব নারী চরিত্র সৃষ্টির মাধ্যমে লেখকের নিজের স্বপ্ন ও রাজনৈতিক আকাঙ্খা প্রকাশ করেছেন । অবশ্য এই ধরনের সাহিত্য রচনার প্রতিকূল প্রভাবও আছে । এই প্রতিকুল প্রভাবের দরুণ পরবর্তীকালে নান রাজবংশে সৃষ্টরাজপ্রাসাদের কবিতা ও প্রেমের কবিতাগুলোতে সুন্দরী নারীর বণর্না বিশ্রী বলা যায় ।
|