সি মিয়েন ছু কের কাহিনী


         একজন ব্যক্তির বিরাট অসুবিধার সম্মুখীন হওয়ার সময় চার পাশের পরিস্থিতিও যেন তার পরাজয় বরণের ভবিষ্যতবাণী করছে । এই অবস্থাকে চীনা ভাষায়‘ সি মিয়েন ছু কে ’ বলা হয় । 

  খৃষ্টপূর্ব ২০২ সালে চীনের প্রথম একত্রিত সামন্ততান্ত্রিক রাজবংশ—ছিন রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত হয় । বিশ্বের অন্যতম সাংস্কৃতিক সম্পদ – চীনের সান সি প্রদেশের ছিন সি হুয়ানের সৈন্য ও ঘোড়ার মূর্তিগুলো ছিন রাজবংশের একটি পুরাকীর্তি । অন্য এক বিশ্ব সাংস্কৃতিক সম্পদ--- মহাপ্রাচীরও ছিন রাজবংশের সময়নির্মিত হয়েছিলো । 

  ছিন রাজবংশের শাসক উপভোগের জন্য বড় বড় প্রকল্প নিমার্ণের আদেশ দেন । বিশেষ করে ছিন রাজবংশের প্রথম রাজা অথার্ত ছিন সি হুয়ান নিজের জন বিরাটাকার রাজপ্রাসাদ ও সমাধিস্থল নিমার্ণ করেন । এতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হয়েছিলো ।অধিবাসীদের বিরুদ্ধে শাসকশ্রেণীর শোষণ ও নিষ্ঠুর অত্যাচার জনগণের তীব্র অসন্তোষ উদ্রেক করেছে । তাই ছিন রাজবংশ মাত্র ১৫ বছর স্থায়ী ছিলো । ছিন রাজবংশের পতনের পর দুটি শক্তি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পাওয়ার চেষ্টা করেছিলো । এই দুটি শক্তির দুই নেতা হলো সিয়ান ইয়ু ও লিউ পান । 

  সিয়ান ইয়ুছু অঞ্চলের একজন কমান্ডার ছিলেন । তিনিবীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন , কিন্তু তিনি এক অহংকারী ও খারাপ মেজাজের ব্যক্তি । ছিন রাজবংশের পতনের আগে লিউ পানএকজন নিম্ন পর্যায়ের কর্মী ছিলেন।লিউ পান চালাক হলেওযোগ্য ব্যক্তি বেছে নিতে জানেন। ছিন রাজবংশের বিরোধীতার সংগ্রামে তারা দুজন ভাইয়ের মতো পরস্পরকে সাহায্য করেছিলেন । কিন্তু ছিন রাজবংশের পতনের পর ক্ষমতার জন্য তাদের মধ্যে বৈরীভাব দেখা দিলো । 

  প্রথম দিকে সিয়ান ইয়ুর প্রাধান্য সুস্পষ্ট । তিনি নিজেকে ‘ পশ্চিম ছুর রাজা ’ ঘোষনা করেন এবং লিউ পানকে ‘ হান ওয়ান ’ ডাকেন । হান ওয়ান শুধু তার অধীনে এক আঞ্চলিক প্রধান মাত্র । নিজের শক্তি রক্ষার জন্য লিউ পান মুখেসিয়ান ইয়ুর শাসন অবস্থান স্বীকার করেন , কিন্তু গোপনেযোগ্য ব্যক্তিদের জোগাড় করে নিজের সৈন্য শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করেন । কয়েক বছর পর লিউ পান ও সিয়ান ইয়ুর শক্তি প্রায় সমান হলো । 

  সিয়ান ইয়ু ও লিউ পানের মধ্যকার যুদ্ধ কয়েক বছর স্থায়ী ছিলো । চীনের ইতিহাসে এই যুদ্ধকে ‘ ছু হান চি চেন ’ বলা হয় । একবার সিয়ান ইয়ুর বাহিনী লিউ পানের বাহিনীকে পরাজিত করে লিউ পানের বাবা ও স্ত্রীকে বন্দী করেন । সিয়ান ইয়ু লিউ পানের বাবাকে পনবন্দী হিসেবে ব্যবহার করে লিউ পানকে আত্মসমর্পণ করতে বলেন এবং হুমকি দেখিয়ে বললেন , লিউ পান যদি আত্মসমর্পন না করেন , তাহলে তিনি লিউ পানের বাবাকে হত্যা করে তার মাংস দিয়ে সুপ বানিয়ে খাবেন । লিউ পান সিয়ান ইয়ুর এই কথা শুনে বললেন , ছিন রাজবংশের প্রতিরোধের সময় আমরা ভাই ছিলাম , আপনি আমাদের বাবার মাংস দিয়ে সুপ বানালে অবশ্যই আমাকে কিছু দিতে ভুলবেন না । সিয়ান ইয়ু লিউ পানের কথা শুনে কোনো উপায় না দেখে তার বাবা ও স্ত্রীকে ছেড়ে দিলেন । 

  সিয়ান ইয়ু ও লিউ পানের চুড়ান্ত যুদ্ধ কাই সিয়া নামে এক জায়গায় বাধে । ( কাই সিয়া আজকের আন হুই প্রদেশে ) তুমুল লড়াইয়ের পর লিউ পানের বানিহী সিয়ান ইয়ু ও তার বাহিনীকেঘেরাও করে । পরাজিত হলেও সিয়ান ইয়ুর হাতে একলক্ষ সৈন্য ছিলো , তাই লিউ পান তাকে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহৃ করতে পারেন নি । 

  একদিন রাত্রেবন্দী অবস্থায় থাকা সিয়ান ইয়ু ও তার সৈন্যরা হঠাত পরিচিত গানের সুর শুনতে পান । মন দিয়ে শুনে বুঝতে পেরেছেন এই গান তাদের জন্মস্থানের লোক সংগীত । এই গান লিউ পানের সেনানিবাস থেকে ভেসে উঠে । সিয়ান ইয়ু ও তার সৈন্যরা মনে করেন লিউ পানের বাহিনী তাদের জন্মস্থান দখল করেছে এবং তাদের জন্মস্থানের অধিবাসীদের ধরেছেন ।জন্মস্থানের এই পরিচিতলোক সংগীতের সুর শুনে সিয়ান ইয়ুর বাহিনীর সৈন্যদের গ্রামের কথা মনে পড়ে । তাই সেই দিন রাত্রে সিয়ান ইয়ুর বাহিনীর অনেক সৈন্য পালিয়েছে । পরদিন সকালে এক লক্ষ সৈন্য মাত্র কয়েক শ’ বাকি রয়েছে । 

  আসলে এটা লিউ পানের একটি ফৌঁদি । সিয়ান ইয়ুর বাহিনীতে বিভেদ সৃষ্টির জন্যলিউ পাননিজের সৈন্যদের সি ইয়ুর জন্মস্থানের লোক সংগীত গাওয়ারনির্দেশ দিলেন ।  

  কাই সিয়া যুদ্ধে লিউ পান জয় লাভ করেন , সিয়ান ইয়ু আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন । পরে লিউ পান হান রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন । হান রাজবংশ চীনের ইতিহাসে অন্যতম সবচেয়ে শক্তিশালী রাজবংশ , হান রাজবংশ চীনের অথর্নীতি ও সংস্কৃতি প্রসারেবিরাট অবদান রেখেছিলো ।