সান রেন ছেন হুর কাহিনী


       মিথ্যা কথা যদি বার বার প্রচার করা হয় , তাহলে সারাধণ অধিবাসীমিথ্যা প্রচার সত্যি মনে করেন । চীনের সংস্কৃতিতেপ্রবাদ ‘ সান রেন ছেন হু ’ এই ধরনের একটি কাহিনী বণর্না করা হয়েছে । 

  খৃষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে যুদ্ধমান রাজ্য আমলে চীনের অনেক ছোট ছোট রাজ্য ছিলো । এই সব ছোট ছোট রাজ্যের মধ্যেভুভাগীয় সংঘর্ষপ্রায়ইঘটে । ঠিক এই কারণে ইতিহাসবিদরা ইতিহাসের এই সময়পর্বকে ‘ যুদ্ধমান রাজ্য যুগ ’ আখ্যা দিয়েছেন । 

  যুদ্ধমান রাজ্য আমলে উই ও চাও দুটি প্রতিবেশী দেশ ছিলো । দেশদুটির মধ্যে মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করা হয় । এই চুক্তির কার্যকরী নিশ্চিত করার জন্য উই ও চাও রাজ্যের রাজা একে অপরের দেশে পনবন্দী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন । উই রাজ্যের রাজা তার এক ছেলেকে পনবন্দী হিসেবে চাও রাজ্যে পাঠিয়েছেন । ছেলের নিরাপত্তার জন্য উই রাজা ফান ছুন নামে তার একজন মন্ত্রীকে ছেলের সঙ্গে চাও রাজ্যে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন । 

  ফান ছুন উই রাজ্যের একজন দক্ষ মন্ত্রী , রাজপ্রাসাদে কিছু লোকে তাকে পছন্দ করেন না । তাই ফান ছুন চিন্তা করেন তার ত্যাগের পর কিছু লোক রাজার সামনে তাকে দোষারোপ করবেন । তাই ফান ছুন রওয়ানার আগে রাজাকে জিজ্ঞেস করেন , মাননীয় রাজা , যদি একজন ব্যক্তি বলেন , রাস্তায় একটি বাঘ দেখেছেন , আপনি তার কথা বিশ্বাস করবেন ?   

  উইরাজা উত্তর দিলেন , আমি বিশ্বাস করবো না , বাঘ কি করে রাস্তায় আসবে ?

  ফান ছুন আবার জিজ্ঞেস করেন , যদি দুইজন ব্যক্তি এক সঙ্গে আপনাকে বলবেন , তারা রাস্তায় বাঘ দেখেছেন, তাহলে আপনি তাদের কথা বিশ্বাস করবেন ? 

  উই রাজা উত্তর দিলেন , যদি দুজন ব্যক্তি এই কথা বলেন , তাহলে তাদের কথা আমি আধা বিশ্বাস করবো ।  

  ফান ছুন আবার জিজ্ঞেস করেন , যদি তিনজন ব্যক্তি একসঙ্গে আপনাকে বলবেন , তারা রাস্তায় একটি বাঘ দেখেছেন , তাদের কথা আপনি বিশ্বাস করবেন কিনা ? 

  উই রাজা একটু দ্বিধা করে বলেছেন , যদি সবাই এই কথা বলছে , তাহলে আমি বাধ্য হয়ে এই কথা বিশ্বাস করবো । 

  রাজার উত্তর শুনে ফান ছুন আরো চিন্তিত হলেন । তিনি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রাজাকে বললেন , মাননীয় রাজা , আপনি জানেন , বাঘ যে রাস্তায় আসবে না , এটা সবাই জানেন । তিনজন ব্যক্তি বলেছেন যে তারা রাস্তায় বাঘ দেখেছেন বলে আপনি বিশ্বাস করবেন যে সত্যই বাস্তায় বাঘ হাটাঁহাটি করছে । চাও রাজ্যের রাজধানী হানতান ও উই রাজ্যের রাজধানী তা লিয়ানের দূরত্বরাজপ্রাসাদ থেকে রাস্তার দূরত্বের চেয়ে অনেক বেশি , আমার বিরুদ্ধে দোষারোপ করার ব্যক্তি তিনজনের বেশীও হতে পারে ।

  রাজা ফান ছুনের উদ্বেগ বুঝতে পেরেছেন , তিনি ফান ছুনকে সান্ত্বনা করে বললেন , আপনার চিন্তা আমি জানি , আপনি নিশ্চিন্তে যান ।  

  ফান ছুন রাজার কথা শুনে রাজার ছেলের সঙ্গেচাও রাজ্যের রাজধানী হানতানে গেলেন । 

  ফান ছুন চাও রাজ্যে যাওয়ার পর সত্যিই বেশ কয়েকজন মন্ত্রী রাজার সামনে ফান ছুনের দোষারোপ করেন । প্রথম দিকে রাজা তাদের কথা বিশ্বাস করেন না এবং তাদের বলেছেন যে ফান ছুন একজন অনুগত ও দক্ষ মন্ত্রী । কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো ফান ছুনের শত্রুরা বার বার তার বিরুদ্ধে আক্রমন করেন বলে উই রাজা তাদের কথা বিশ্বাস করতে শুরু করেন । পরে ফান ছুন যখন চাও রাজ্য থেকে উই রাজ্যে ফিরে যান , রাজা আর ফান ছুনকে বিশ্বাস করেন না এবং তার সঙ্গে দেখা করতেও চান না । 

  ‘ সান রেন ছেন হুর ’ মতো আরেকটি গল্প আছে । চেন ছানযুদ্ধমান রাজ্য আমলের একজন বিখ্যাত পন্ডিত ছিলেন । এক দিন চেন ছান কাজের জন্য বাড়ী ফিরেন নি । ঠিক সেই দিন তার একই নামের একজন ব্যক্তি লোক হত্যা করেছে বলেপুলিশতাকে গ্রেপ্তারকরেছেন । চেন ছানের একজন প্রতিবেশী তার মাকে বললো ,আপনার ছেলে লোক হত্যা করে গ্রেপ্তার হয়েছেন ।চেন ছানের মা নিজের ছেলেকে ভালো করে জানেন , তাই তিনি বিশ্বাস করেন নিজের ছেলে লোক হত্যা করবেন না । তাই তিনি নিশ্চিন্তে কাপড় বুনতে থাকেন । একটু পর আরেকজনব্যক্তি চেন ছানের মাকে বললো , আপনার ছেলে লোক হত্যা করেছে । তার কথা শুনে চেন ছানের মা কিছুটা দ্বিধা করলেন , তবুও তিনি বিশ্বাস করেন না যে তার ছেলে মানুষ হত্যার অপরাধ করতে পারেন । কিছুক্ষণ পর তৃতিয় ব্যক্তি চেন ছানের মাকে আবার বললো আপনার ছেলে মানুষ হত্যা করেছে । তার এই কথা শুনে চেন ছানের মা আর নিজের বিশ্বাসে টিকে থাকতে পারেন না , তিনি হাতের কাজ ফেলে দিয়ে পালিয়ে গেলেন । 

  চীনা প্রবাদ ‘ সান রেন ছেন হু ’ ও ‘ চেন ছান সা রেন ’ –এর অর্থ হলো অনেক লোক বার বার একই কথা বললে মানুষের প্রত্যয় বানচাল করতে পারে, তাই অনেক সময় জনমতের ভুমিকা বিরাট ।