খৃষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে চীনে সুই রাজবংশের আমলে দেশশাসনে যোগ্য ব্যক্তিদের বেছে নেয়ার জন্য রাজা রাজকীয় পরীক্ষা অনুষ্ঠান করেন । রাজা বিভিন্ন বিষষের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কমর্কতার্দের মধ্যে রাজকীয় সরকারের পদস্থ কর্মী বেছে নেন । থান রাজবংশের সময় রাজকীয় পরীক্ষা ব্যবস্থা আরো প্রসার হয় । সাধারণ অধিবাসীরাও কমর্কতার্দের মতো রাজকীয় পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন । তারা বিভিন্ন বিষয়ের পরীক্ষা অংশ নিয়ে রাজকীয় সরকারের কর্মকর্তা হতে পারেন ।
থান রাজবংশে তিন স্তরের রাজকীয় পরীক্ষা ছিলো । এই তিন স্তরের পরীক্ষার নাম হলো সিউ ছাই , চু রেন ও চিং শি ।লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণহওয়ার পর তাদের রাজার সামনে দাড়িয়ে রাজার প্রশ্ন উত্তরদিতে হয় । সেই আমলে চীনের পন্ডিতরা সবাই উচ্চতম পরীক্ষা --চিং শির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে চান । চিং শি হওয়ার পর রাজকীয় সরকারের বড় অফিসার হতে পারেন বলে চিং শির পরীক্ষা সবচেয়ে কঠিন । এক শ’ ব্যক্তির মধ্যে দশ থেকে বিশজন পার হতে পারে । কোনো কোনো লোক বার বার পরীক্ষায় অংশ নেন , কিন্তু বার বার ব্যর্থ হন । পঞ্চাশাধিক বছর বয়সের পন্ডিত চিং শি পরীক্ষায় অংশ নেয়া কোনো অদ্ভুত ব্যাপার ছিলো না ।
থান রাজবংশের রাজকীয় পরীক্ষা রাজধানী ছান আন অর্থাত আজকের সি আস শহরে অনুষ্ঠিত হয় । প্রতি বছরের প্রথম মাস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় , দ্বিতিয় মাস পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয় । বসন্তকালে গাছের ফুল ফোটার সময় রাজা ছু চিয়ানের বাগানে বিরাটাকারের ভোজানুষ্ঠানের আয়োজন করেচিং সির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পন্ডিতদের পুরষ্কার বিতরণ করেন ।
ছু চিয়ান বাগানছান আন নগরের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত । সেখানে একটি আকাঁবাকাঁ বড় পুকুর , পুকুরের চার পাশে সুন্দর বাগান । ছু চিয়ান বাগানের অদূরে ছি এন মন্দির , তা ইয়েন পেগোডা ও সিয়াও ইয়েন পেগোডা , প্রাকৃতিক দৃশ্য অত্যন্ত মনোরম । রাজা , মন্ত্রী ও অভিজাত পরিবারের ব্যক্তিরা প্রায়ই সেখানে বেড়াতে যান , পন্ডিতরাও সেখানে মদ খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কবিতা আবৃত্তি করতে পছন্দ করেন ।
ছু চিয়াং বাগানে রাজার আয়োজিত ভোজানুষ্ঠানে পরীক্ষায় উত্তীর্ণচিং শির উপাধিপাওয়া পন্ডিতরা মদ ভরা একটি কাপ পুকুরের পানির উপর রাখেন । মদের কাপটি পানির উপর ভাসতে থাকে । এই কাপ যদি কোনো চিং শির সামনে এসে থামে , তাহলে এই চিং শিকে কাপের মদ খেয়ে একটি কবিতা রচনা করে আবৃত্তিকরতে হয় । এই সময় ভোজসভায় দুজন সবচেয়ে কমবয়সের চিং শি বাগানে ফুল তুলে সবাইকেদেন । তাই অনেকে এই ভোজসভাকে ফুল তোলা ভোজসভা বলেন এবং ফুল তোলার দায়িত্ববহনকারীদুজন চিং শিকে ফুল তোলা দূত বলেন ।
এক বছরছু চিয়ান ভোজানুষ্ঠানের পর চিং শিরা ছি এন মন্দিরে বেড়াতে যান । তারা যখন তা ইয়েন পেগোডার নীচে পৌছেন , একজন চিং শিনিজের নাম পেগোডার নীচের পাথরের উপরে খোদাই করলেন । তখন থেকে একটি নিয়ম হলো নতুন চিং শির উপাধি পাওয়া পন্ডিতরা ছু চিয়ান ভোজসভার পর ছি এন মন্দির ও তা ইয়েন পেগোডায় যান । তাদের মধ্যে যার হস্তলিপি সুন্দর , তিনি সবার নাম পেগোডার পাথরেরখোদাই করে দেন । চিং শিদের মধ্যে যারা পরে রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বা সামরিক কমান্ডার হন , তাদের নামকালো রঙের উপর লাল রং দেয়া হয় ।
থান রাজবংশেরবুদ্ধিজীবীরা ছুন চিয়ানের ফুল তোলা ভোজসভা ও তা ইয়েন পেগোডায় নাম দেওয়াকে এক অত্যন্ত গৌরবের ব্যাপার মনে করেন । থান রাজবংশের বিখ্যাত কবি পাই চু ইআর অন্যান্য ১৬জন পন্ডিত এক সঙ্গে চিং শির উপাধি পেয়েছিলেন । সতেরজনের মধ্যে পাই চু ইর বয়স সবচেয়ে কম , সেই বছর তার বয়স মাত্র ২৭ বছর । তিনি তার এই অভিজ্ঞতা তার কবিতায় লিখেছিলেন । আজ সান সি প্রদেশেরসি আন শহরের তা ইয়েন পেগোডার পাথরে প্রাচীনকালের চিং শির নাম দেখা যায় ।
থান রাজবংশের রাজকীয় পরীক্ষা ব্যবস্থা গরীব পরিবারের পন্ডিতদের রাজ্যের রাজনৈতিক জীবনে অংশ নেয়ার সুযোগ যুগিয়েছিলো এবং রাজকীয় সরকারের পরিচালনার মান উন্নত করেছিলো । কিন্তু সামন্ততান্ত্রিক রাজবংশের দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সামন্ততান্ত্রিক সমাজের শেষ দিকেরাজকীয় পরীক্ষা ব্যবস্থায় দুনীর্তি ক্রমেই বাড়ে । বিশেষ করে উনবিংশ শতাব্দীর মিং ও ছিং রাজবংশেরাজকীয় পরীক্ষার বিষয় সব রু সম্প্রদায়ের বিখ্যাত রচনা , প্রবন্ধ লেখারনিয়ম সুনির্দিষ্ট , তাই প্রবন্ধগুলোর কোনো রস নেই ।
অনেক সাহিত্যিক রাজকীয় পরীক্ষার সমালোচনা করেছিলেন । ছিং রাজবংশের সাহিত্যিক ফু সোন লিন তার লেখা ‘ লিয়াও চাই চি ই ’ আর উ চিং চির লেখা ‘ রু লিন উয়াই সি ’তেতখনকার রাজকীয় পরীক্ষার দুনীর্তির তীব্র সমালোচনাকরা হয়েছে ।
|