ছিয়েন চু হৌ কোনের কাহিনী


       চীনা ভাষায়প্রবাদ ‘ ছিয়েন চু হৌ কোন ’ অথবা ‘ ছিয়েন চু হৌ পেই ’—এর অর্থ হলো আগে কোনো লোককে অবজ্ঞা করে , পরে আবার সম্মান প্রদর্শন করে ।  

   খৃষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে চীনে যুদ্ধমান রাজ্যসমুহ আমলে অনেক ছোট ছোট রাজ্য বিদ্যমান ছিলো । তাদের মধ্যে প্রধান সাতটি রাজ্যের নাম হলো ছিন , ইয়েন , চাও , ছি , ছু , হান ও ইউ । আজকের উত্তর-পূর্ব চীনের সানসি প্রদেশে অবস্থিত ছিন রাজ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কার করাহয়েছে বলে সাতটি দেশের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিলো । ছিন রাজ্য প্রায়ই অন্য ছয়টি দেশের বিরুদ্ধে আক্রমন চালাতো । অন্য ছয়টি দেশের শাসক গোষ্ঠীর মধ্যে ছিনপন্থী ও ছিন বিরোধীপন্থী দুই পক্ষ দেখা দিয়েছে । ছিনপন্থীরা মনে করেন ছিন রাজ্যের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা উচিত , যাতে ছিন রাজ্য তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর অজুহাত পাবে না , তাদের নীতিরনাম হলো ‘ লিয়েন হেন ’ । ছিন বিরোধীপন্থীরা মনে করেন ছয়টি দেশকে মিলিতভাবে ছিন রাজ্যের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে হবে । তাদের এই নীতির নাম হলো ‘ হে চুন ’ । 

  সেই সময় অনেক উপদেষ্টা বিভিন্ন দেশে নিজের প্রস্তাব প্রচার করেন । প্রস্তাব যদি কোনো দেশের শাসকরা গ্রহণ করেন , তাহলে এই প্রস্তাব প্রচারকারী উপদেষ্টা রাতারাতি নামকরা ব্যক্তি হয় , সুই ছিন এই সব উপদেষ্টার মধ্যে একজন ।  

   সু ছিন প্রথমে ছিন রাজ্যে গিয়ে ছিন রাজার কাছে অন্য ছয়টি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসারের নীতি প্রচার করেন । তিনি ছিন রাজাকে বলেন , ছিন রাজ্যকে প্রথমে ছয়টি দেশের সঙ্গে মিতালী করার ভান করতে হবে , তার পর একটি একটি করে তাদের নিশ্চিহৃ করতে হবে । ছিন রাজা সুন ছিনের প্রস্তাব গ্রহণ করেন নি । তিনি মুখে বলেছেন , ছিন রাজ্য অন্যদেশ নিশ্চিহৃ করতে চায় না , তাই সুই ছিনের প্রচারির ‘ লিয়েন হেন ’ নীতি সম্বন্ধে তার আগ্রহ নেই । আসলে ছিন রাজ্য গোটা চীন একত্রিত করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করে নি । রাজার এই কথা শুনে সুন ছিন কোনো উপায় না দেখে হতাশ হয়ে নিজের দেশ লোইয়ানে ফিরে গেলেন । 

  বাসায় ফিরে সুন ছিনের অবস্থা দেখে সবাই জানেন তার প্রচেষ্টা সাথর্ক হয় নি , তাই তার বাবা মা তার সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলতে চান না , তার স্ত্রী তাকে না দেখে শুধু মাথা নীচু করে কাপড় বুনেন । তিনি ভাবীকে তার জন্য কিছু রান্না করার অনুরোধ জানিয়েছেন , কিন্তু ভাবী খাবার না দিয়ে তাকে অকারণে বকেছেন । পরিবার পরিজনের এই ব্যবহারে সু ছিন দুঃখিত । তিনি ভালো করে পড়াশুনা করে একটা বড় কাজ করতে বদ্ধপরিকর । তিনি প্রতিদিন গভীর রাত পর্যন্ত সমরবিদ্যা অধ্যয়ন করেন । ঘুম পেলে তিনি সূচ দিয়ে নিজের পায়ে বিদ্ধ করেন , ব্যথা পেয়ে জেগে উঠার পর তিনি আবার পড়াশুনা করেন ।চীনা প্রবাদ ‘ ইন চুই ছি কু ’ এই কাহিনী থেকে আসে । 

  সু ছিন বার বার বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেমনে করেন ছয়টি দেশ মিলিতভাবে ছিন রাজ্যের প্রতিরোধ করার নীতি ফলপ্রসু হবে । তাই তিনি প্রথমে ইয়েন রাজ্য ও চাও রাজ্যকে তার মতাধিষ্ঠান গ্রহন করতে পরামর্শ করেন । তার নিরলস প্রচেষ্টায় ছু রাজ্যের নেতৃত্বাধীন ইয়েন , চাও , ছি , ছু , হান আর উই রাজ্যের একটি ছিন-বিরোধী সংঘ প্রতিষ্ঠিত হয় , সু ছিন ছয়টি দেশের সৈন্যবাহিনীর চিফ স্টাফের দায়িত্ব নিলেন ।এই সংঘ প্রতিষ্ঠার কথা শুনে ছিন রাজ্য এই ছয়টি রাজ্যের কোনোটির বিরুদ্ধে আক্রমণ চালাতে সাহস পায় নি । এই ধরনের অবস্থা১৫ বছর স্থায়ী ছিলো , পরে ছিন সি হুয়ান গোটা চীনকে একত্রিত করেন ।  

   সুন ছিন ছয়টি দেশের সৈন্যবাহিনীর চীফ স্টাফ বলেতিনি প্রায়ই ছয়টি দেশে আসা-যাওয়া করেন । তিনি একজন বড় লোক হলেন । একবার তিনি কাজের জন্য নিজের জন্মভূমি লোইয়ানে গেলেন । খবর পেয়ে স্থানীয় অফিসার আগে থেকেই রাস্তা পরিষ্কার করেরাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে তাকে স্বাগত জানায় । সু ছিনের বাবা-মাও ঘর থেকে বেরিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করেন । বাসায় ফিরে তার স্ত্রী পাশে দাড়িয়ে তাকে দেখার সাহস পান না , ভাবী তার সামনে দাড়িয়ে প্রনাম করেন । সু ছিন বললেন , ভাবি , আপনার ব্যবহারের বিরাট পরিবর্তন হয়েছে । অতীতে আপনি আমাকে তুচ্ছ করেন , আজ এতো বিনয়ী হচ্চেন কেন ? সু ছিনের ভাবী সু ছিনের কথা শুনে ভয়ে কাপঁতে লাগল । তিনি বলেছেন , আপনি এখন বড় লোক হয়েছেন , আমি আপনাকে আগের মতোব্যবহার করার সাহস পাই না । সু ছিন মনে মনে নিজেকে বললেন , গরীব হলে নিজের বাবা-মা পর্যন্ত আমাকে তুচ্ছ করেন , ধনী হওয়ার পর আত্মীয়সজনও আমাকে ভয় করেন । এই কারণেই বেশীর ভাগ লোক ধনসম্পদ ও ক্ষমতা পছন্দ করেন । 

  প্রবাদ ‘ ছিয়েন চু হৌ কো ’ হীন মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তির আচরণ , তারা গরীব স্বজনকে অবজ্ঞা করে , কিন্তু উচ্চ সামাজিক মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের তোষামদ করে ।