সাত পদক্ষেপের সময় কবিতা রচনার কাহিনী


       চীনের ইতিহাসে একটি বিখ্যাত পরিবার ছিলো । এই পরিবারে বাবা ছাও ছাও একজন সমরবিদ ও কবি ,তার দুটি ছেলে ছাও ফি ও ছাও জি সাহিত্যিক , ইতিহাসে তাদের তিনজনকে তিন ছাও বলা হয় । এদের মধ্যে ছাও ছাওয়ের মেজো ছেলে ছাও জির সাহিত্য রচনার দক্ষতা সবচেয়ে বেশী । 

  ছাও ছাও হলেন খৃষ্ট দ্বিতিয় শতাব্দীর তিন রাজ্য আমলে উই রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা । তিনি একজন বিখ্যাত সমরবিদ , অবসর সময় তিনি প্রচুর কবিতাও লিয়েছিলেন । তার মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে ছাও ফি রাজা হলেন । ছাও ফি একজন বিখ্যাত সাহিত্য সমালোচক ছিলেন , তার লেখা ‘ তিয়েন লুন—লুন ওয়েন ’ চীনের সাহিত্য সমালোচনার ইতিহাসের এক যুগান্তরকারী রচনা । ছাও ছাওয়ের মেজো ছেলে ছাও জি একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি , তিনি তখনকার সবচেয়ে বিখ্যাত কবি ছিলেন । 

  ছাও ফি রাজা হওয়ার পর ছোট ভাই ছাও জির ধী শক্তির ঈর্ষা করেন । একবার একটি ছোট ঘটনার জন্য ছাও ফি ছোট ভাই ছাও জিকে শাস্তি দিতে চেয়েছিলেন । তবে তিনি এ কথাও বলেছেন যে ছাও জি যদি সাত পদক্ষেপ হাটার সময়ে একটি ভালো কবিতা রচনা করতে পারেন , তাহলে তিনি শাস্তি থেকে মুক্তি পাবেন । ছাও জি জানেন বড় ভাই ইচ্ছা করে তাকে কষ্ট দিচ্ছেন , কিন্তু বড় ভাই হচ্ছেন রাজা , তার কথা অমান্য করা যায় না । নিজের আপন ভাইয়ের দেয়া কষ্ট ভোগ করার কথা ভেবে চাও জির মন খুব খারাপ হলো । তিনি সঙ্গে সঙ্গেই একটি কবিতা আবৃত্তি করলেন । তিনি তার কবিতায় এই বলে নিজের মনের কথা প্রকাশ করেছেন , আমরা আপন ভাই , বতর্মান সম্পর্কের জন্য কষ্ট বোধ করি । ভাই-ভাই সংঘাত অত্যন্ত দুঃখের ব্যাপার । রাজা ছাও ফি ভাইয়ের আবৃত্তিশুনে সংকোচ বোধ করেন ।তিনি নিজের ভাইয়ের উপর কষ্ট দেয়া বন্ধ করলেন । 

  ছাও জি প্রচুর সুন্দর সুন্দর কবিতা রচনা করেছিলেন । সেই আমলে তিন রাজ্যের মধ্যে প্রায়ই যুদ্ধ হয় , অধিবাসীদের জীবন খুব কষ্ট ।রাজপরিবারের সদস্য হলেওছাও জি তার কবিতায় গৃহহারা অধিবাসীদের প্রতি তার সহানুভুতি ও মনোযোগ প্রকাশ করেছেন । দেশের বিশৃঙ্খল অবস্থা তার দেশপ্রেমিকমনোভাব সঞ্চার করেছে , তিনি তার একটি কবিতায় লিখেছেন , দেশের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য নিজের প্রাণ বিসজর্ন বিসজর্ন পর্যন্ত তিনি কিছু দ্বিধা করবেন না । 

  সাহিত্যিক হলেও ছাও জিদেশের রাজনৈতিক অবস্থা পরিবর্তনে কিছু কাজ করতে চেয়েছিলেন । কিন্তু এতে তাকে রাজার অসন্তোষ ও অত্যাচার সহ্য করতে হয় । ছাও জি নিজের ইচ্ছামতো কাজ করতে পারেন না , তাই তিনি শুধু তার সাহিত্য রচনায় নিজের মনের কষ্ট প্রকাশ করতে পারেন । এই সব কথা তিনি তার কবিতা বা প্রবন্ধগুলো সোজাসুজিভাবে লিখেন না । তিনি তার সাহিত্য রচনায় অনেক সুন্দরী নারী চরিত্র সৃষ্টি করেছেন , যেমন ‘ মেইনুই ফিয়েন ’ ‘ নানকোন ইউচিয়ারেন ’ প্রভৃতি কবিতায়নারী চরিত্র শুধু সুন্দর ও বুদ্ধিমতী নয় , তারা নৈতিক বিশ্বাস ও উচ্চ আকাংখা পোষন করেন । ছাও জি এই সব সুন্দরী নারী চরিত্র সৃষ্টির মাধ্যমে নিজের আকাংখা প্রকাশ করেন । তার সবচেয়ের বিখ্যাত প্রবন্ধের নাম‘ লো সেন ফু’ । লোসুই হচ্ছে উই রাজ্যের রাজধানী লোইয়ানের নিকটবর্তী একটি নদী । ছাও জিলোসুইয়ের দেবতা মিফেইকেতার প্রবন্ধের প্রধান চরিত্র হিসেবে গ্রহণ করে এক সুন্দর ও মনময় নারী চরিত্র সৃষ্টি করেছেন । এতেছাও জি নিজের ভালোবাসাপ্রকাশ করেছেন । গত এক হাজার বছর ধরে ছাও জির এই প্রবন্ধ সাহিত্যিকদের প্রশংসা জয় করেছে । 

  কবি ছাও জি দীর্ঘজীবী হন নি , মৃত্যুকালে তার বয়স মাত্র ৪১ বছর । কিন্তু সাহিত্য ক্ষেত্রে তার প্রভাব বিরাট । এখন ‘ সাত পদক্ষেপে কবিতা রচনার ’ কাহিনী চীনের একটি প্রবাদে পরিণত হয়েছে ,একজন লোকের সাহিত্য রচনার দক্ষতার প্রশংসার সময় এই প্রবাদ ব্যবহার করা হয় ।