নান খে ই মুনের কাহিনী


       ‘ নান খে ই মুন ’ চীনা ভাষার একটি প্রবাদ । এই প্রবাদের অর্থ হলো স্বপ্নের দৃশ্য ও অবাস্তবচিন্তাভাবনা ।এই প্রবাদে খৃষ্টীয় নবম শতাব্দীর সময় চীনের থান রাজবংশের সময়কার সাহিত্যিক লি কোন চুও-এর লেখা উপন্যাস ‘ রাজপ্রাসাদের রক্ষী নান খের জীবনীর ’ কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে । 
  ছুন ইউ ফেন নামে একজন লোক ছিল । তিনি মদ খেতে পছন্দ করেন । তার বাসার উঠানে এক বড় চানিজ স্কলার গাছ আছে , গ্রীষ্মকালে রাতে এই বড় গাছের নীচেবসা বড়আরামের ব্যাপার । 

  ছুন ইউ ফেনের জন্ম দিনে তার আত্মীয়জসন ও বন্ধুরা অভিনন্দন করতে আসেন । সেদিন ছুন ইউ ফেন খুব খুশী , তাই বেশী মদ খেয়েছেন । সন্ধ্যার পর আত্মীয় ও বন্ধুরা বিদায় নিয়ে ত্যাগ করেন । ছুন ইউ ফেনের নেশা হলো । তিনি বড় গাছের নীচে বসে বিশ্রাম করতে করতে ঘুমে পড়েন । 

  স্বপ্নে ছুন ইউ ফেনদেখেছেন , দুজন দূতের আমন্ত্রনে তিনি একটি বড় গাছের গুহায় প্রবেশ করলেন । গুহার ভিতরের দৃশ্য ভারী সুন্দর , গুহার সামনে লেখা আছে চানীজ স্কলার রাজ্য ।তখন এই রাজ্যে রাজকীয় সরকারের কর্মকর্তার নির্বাচনী পরীক্ষা চলছিল । ছু ইউ ফেনও নিজের নাম দিলেন ।ছুন ইউ ফেন তিনটি বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন , তিনটি পরীক্ষায়ই তিনি ভালো উত্তর দিলেন । পরীক্ষা ফল প্রকাশের সময় তিনি দেখলেন তিনি প্রথম স্থান অজর্ন করেছেন । লিখিত পরীক্ষার পর ছুন ইউ ফেন রাজার সামনে দাড়িয়ে মৌখিক পরীক্ষায়অংশ নিলেন । রাজা দেখেছেন , ছুন ইউ ফেন পরীক্ষায় প্রশ্নগুলোর ভালো উত্তর দিলেন , দেখতেও সুন্দর , তাই তাকে পরীক্ষার শীর্ষস্থানের উপাধি ‘ চুয়ান ইউয়েন ’ তাকে দিলেন এবং নিজের মেয়েকে তার সঙ্গে বিয়ে করার অনুমতি দিলেন । ছুন ইউ ফেন এক সময় এই রাজ্যেরএকজন বিখ্যাত ব্যক্তি হলেন । 

  বিয়ের পর ছুন ইউ ফেনের জীবন সুখী । কিছু দিন পর রাজা তাকে নান খে নামে এক জায়গায় পাঠালেন , তিনি সেখানের প্রধান প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন । ছুন ইউ ফেন নান খেয়ের প্রধান শাসক হলেও তিনি প্রায়ই নিজে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বাস্তব অবস্থাদেখতে যান এবং কমর্চারীদের দুর্নীতি দূর করার চেষ্টা করেন । তাই স্থানীয় অধিবাসী ছুন ইউ ফেনকে ভালোবাসেন । ৩০ বছর পর ছুন ইউ ফানের পাঁচটি ছেলে ও দুটি মেয়ে হয়েছে । রাজা বেশ কয়েকবার তাকে রাজধানীতে কাজ করতে বলেন , কিন্তু স্থানীয় অধিবাসীরা ছুন ইউ ফেনকে ছাড়তে দেয় না । তারা ছুন ইউ ফেনের গাড়ী বাধা দিয়ে তাকে অব্যাহতভাবে নান খেতে কাজ করতে অনুরোধ জানান । রাজা কোনো উপায় না দেখে ছুন ইউ ফেনকে প্রচুর পরিমান সোনা ও রুপাপুরস্কারদিলেন ।  

  এক বছর সানলো রাজ্যের বাহিনী তাহুয়াই রাজ্যের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালায়। তাহুয়াই রাজ্যের কমান্ডাররা শত্রুর আক্রমণের মোকাবেলা করেন , কিন্তু বেশ কয়েকবারই পরাজিত হয় । খবর রাজধানীতে পৌছার পর রাজা খুবচিন্তিত । তিনি রাজ্যের পদস্থ কমর্কতার্দের সঙ্গে শত্রুপ্রতিরোধের উপায় আলোচনা করেন । মন্ত্রীরা যখন শুনেন শত্রুরারাজধানীর দিকে আসছে , তারা আতঙ্কে দিশেহারা হন , তারা পরস্পরের দিকে তাকিয়ে কোনো উপায় খুঁজে বের করতে পারেন না । 

  মন্ত্রীদের অবস্থা দেখে রাজা রাগ করে বললেন , আপনারা সব সময়ই আরামে জীবনযাপন করেন । এখন রাজ্য বিপদে পড়েছে , আপনারা একটি উপায়ও খুঁজে বের করতে পারছেন না । আপনাদের মতো মন্ত্রী কি যোগ্য মন্ত্রী ?

  এই সময় প্রধানমন্ত্রীর নানখেয়ে কর্মরত ছুন ইউ ফেনের কথা মনে পড়ে । তিনি রাজাকে ছুন ইউ ফেনকে শত্রুপ্রতিরোধের দায়িত্ব দেয়ার সুপারিশ করেন । রাজা সঙ্গে সঙ্গেই ছুন ইউ ফেনকে সৈন্য নিয়ে শত্রুর আক্রমণ প্রতিরোধের আদেশ জারি করলেন । 

  ছুন ইউ ফেন রাজার আদেশপত্র পেয়ে তত্ক্ষনাত সৈন্য নিয়ে রওয়ানা হলেন। কিন্তু তিনি রণকৌশলকিছুই জানেন না , তাই যুদ্ধ শুরু হওয়ার অল্পক্ষণ পরই পরাজিত হন , তিনি একটুর জন্য শত্রুর বন্দী হতেন । রাজা পরাজয়ের খবর পেয়ে হতাশ হয়ে ছুন ইউ ফেনের সব দায়িত্ব বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন । ছু ইউ ফেন সাধারণ অধিবাসী হিসেবে দেশে ফিরে যান । ছুন ইউ ফেন নিজের অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে লজ্জ্বা বোধ করেন । তিনি চিত্কার করতে করতেস্বপ্ন থেকে জেগে উঠলো । আসলে তিনিস্বপ্নে যে তাহুয়াই রাজ্যেগিয়েছিলেন , তা’ মাত্র বড় চানিজ স্কলার গাছের নীচের একটি পিপড়ার গর্ত মাত্র , অনেক পিপড়া সেই গর্তে থাকে । 

  কোনো কোনো সময় নান খে ই মেন— এই প্রবাদের অর্থ হলোমানুষের জীবন স্বপ্নের মতো , তাই সম্পদ ও ক্ষমতাও ক্ষণস্থায়ী জিনিস ।