মাও সুইয়ের নিজেকে সুপারিশ করার কাহিনী


       চীনের একটি কথায় বলা হয়েছে , সোনার জিনিস একদিন না একদিন তার উজ্জ্বল কিরণ দেখাবে । চীনের একটি প্রবাদ ‘ মাও সুই চি চিয়েন ’ এই ধরনের এক কাহিনীর কথা বলা হয়েছে । 
  প্রাচীন চীনের যুদ্ধমান রাজ্যসমুহের সময় শক্তিশালী ছিন রাজরাজ্যের বাহিনী ইউয়ে রাজ্যের রাজধানী হানতানঘেরাও করে , ইউয়ে রাজ্যের অবস্থা সংকটাপন্ন । 

  হান তানকে শত্রুর হাত থেকে উদ্ধার করার জন্য চাও রাজ্যের রাজা ছু রাজ্যের সঙ্গে মিলে ছিন রাজ্যের বিরুদ্ধে আক্রমন চালাতে চান । তিনি প্রিন্স পিন ইউয়েন চুনকে ছু রাজ্যের রাজার সঙ্গে আলাপ করার দায়িত্ব দিলেন । 

  পিন ইউয়েন চুন ২০জন সাহসী ও ধীশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তি বেছে নিয়ে তার সঙ্গে ছু রাজ্যে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন । কিন্তু তিনি শুধু ১৯জন যোগ্য ব্যক্তি বেছে নিলেন । ঠিক এই সময় একজন কর্মাকর্তা নিজেকে সুপারিশ করে ফিন ইউয়েন চুনের সঙ্গে ছু রাজ্যে যেতে চান , এই ব্যক্তির নাম মাও সুই । 

  ফিন ইউয়েন চুন মাও সুইকে আপাদমন্তক দেখে তাকে জিজ্ঞেস করেন , আপনি কে ? কি জন্য এখানে এসেছেন ? 

  মাও সুই বললেন , আমার নাম মাও সুই । আমি শুনেছি হান তান রক্ষার জন্য আপনি ছু রাজ্যে যাচ্ছেন , আমি আপনার সঙ্গে যেতে চাই । 

  ফিন ইউয়েন চুন আবার জিজ্ঞেস করেন , আপনিএখানে কতো বছর কাজ করেছেন ?  

  মাও সুই বললেন , তিন বছর হলো ।  

  ফিন ইউয়েন চুন বললেন , তিন বছরকম সময় নয় । কাপড়ের থলিতে সূচ যেমন শীঘ্রই তার তীক্ষ্ণ মাথা বের করবে , একজন লোকের কোনো বিশেষ দক্ষতা থাকলেশীঘ্রই প্রকাশিত হবে । আপনিএখানে দীর্ঘ তিন বছর কাজ করেছেন , কিন্তু আজ পর্যন্ত আমি জানি না আপনার কোনো বিশেষ দক্ষতা আছে । আমি এবারসাহায্য পাওয়ার জন্যছু রাজ্য যাচ্ছি । যাদের বিশেষ দক্ষতা নেই , তারা আমার সঙ্গে যেতে পারবেন না । তাই আপনিযেতে পারেন না । 

  ফিন ইউয়েন চুন খোলাখুলিভাবে তার মত প্রকাশ করলেন । কিন্তু মাও সুই ক্ষান্ত হন নি । তিনি নিজের দ্ক্ষতা বিশ্বাস করেন , তাই তিনি বললেন , আপনার কথা ঠিক নয় । আপনি আমাকে আমার দক্ষতা প্রকাশের সুযোগ দেন নি । যদি আপনি আমাকে কাপড়ের থলিতে রাখেন , তাহলে আমার দক্ষতা সুচের মতোপ্রকাশ করতে পারতাম । 

  মাও সুইয়ের কথা শুনেফিন ইউয়েন চুন মনে করেন মাও সুইয়ের কথা ঠিক , তাই তিনি মাও সুইকে সঙ্গে নিয়ে ছু রাজ্যে যেতে রাজি হলেন । ছু রাজ্য পৌছে ফিন ইউয়েন চুন ছু রাজ্যের রাজাকে মিলিতভাবে ছি রাজ্যের আক্রমণ প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে যথাশীঘ্র সৈন্য পাঠানোর অনুরোধ জানালেন । কিন্তু ছু রাজাতার কথা শুনে কোনো উত্তর দেন নি । তাদের আলোচনা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্তস্থায়ী হলেও কোনো ফল হয় নি। বাইরে অপেক্ষামান ফিন ইউয়েন চুনের বিশজন সহকারী এর জন্য উদ্বিগ্ন । 

  মাও সুই নিজেকে সুপারিশ করেছেন বলে অন্য ১৯জন সহকারী মাও সুইকে তুচ্ছ করেন । তারা মনে করেন মাও সুই আত্মপ্রশংসা করে তাদের সঙ্গে ছু রাজ্যে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন । অবশ্য তারা মাও সুয়ের আসল দক্ষতাও দেখতে চান । তাই তারা মাও সুইকে বললেন , মাও সাহেব , ভিতরে আলোচনার কোনো ফল হচ্ছে না, আপনি ভিতরে গিয়ে অবস্থা দেখে আসেন।  

   মাও সুইসঙ্গে সঙ্গেই রাজী হলেন । তিনি কোমরে তরোয়ার বেঁধে ছু রাজার সামনে গিয়ে বললেন , মাননীয় রাজা , চাও রাজ্য ও ছু রাজ্য মিলিতভাবে ছিন রাজ্যের প্রতিরোধ করা একান্ত প্রয়োজন । এই ধরনের সহজ ব্যাপার দুটি কথা বলেই স্থির করা যায় । কিন্তুআপনারা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আলোচনা করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন নি , আমি এর কারণ জানতে চাই ।

  মাও সুইয়ের কথা শুনে ছু রাজার রাগ হলো । তিনি মাও সুইকেকোনো কথা না বলেফিন ইউয়েন চুনকে জিজ্ঞেস করেন , এই লোক কে ? 

  ফিন ইউয়েন চুন বললেন , সে আমার সহকারী । 

  ছু রাজা ক্ষেপে গিয়ে মাও সুইকে বকা দিয়ে বললেন , আমি তোমার প্রভুর সঙ্গে আলোচনা করছি , তুমি কে ? তোমার এখানেআমার সঙ্গে কথা বলার সাহস কোথায় পেলো ? 

  ছু রাজার কথা শুনে মাও সুই রেগে গিয়ে মোমরের তরোয়ার বের করে ছু রাজার সামনে গিয়ে জোরে বললেন , মাননীয় রাজা , আপনিমনে করেনছু রাজ্য একটি বড় রাজ্য , আপনার চার পাশে প্রচুর রক্ষী দাড়িয়ে আছে , তাই আপনি আজ সবার সামনে আমাকে বকেছেন । তবে আমি আপনাকে বলছিএখানে দশ পদক্ষেপের মধ্যে আপনার এই সব প্রাধান্যের কোনো কাজ হবে না। আপনার জীবন এখন আমার হাতে , আপনি চিত্কার করছেন কেন ? 

  মাও সুইয়ের কথা শুনে ছু রাজা ভয়ে চুপ করে বসে রইলো , তার মুখে ঘামও বের হলো ।

  মাও সুই আরো বললেন , ছু রাজ্য একটি বড় রাজ্য , গোটা চীন একত্রিত করারশক্তি ছু রাজ্যের আছে । কিন্তু আপনি ছিন রাজ্যকে ভয় করেন। ছিন রাজ্য একাধিকবার ছু রাজ্যে বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়ে ছু রাজ্যের অনেক ভূমি দখল করেছ । ছু রাজ্যের পক্ষে এটা বড় অপমানের ব্যাপার । এই সব কথা শুনে আমরা চাও রাজ্যের লোকেরাও লজ্জা মনে করি । এবার আমার প্রভুরাজধানী হানতান রক্ষার জন্য এখানে এসে মিলিতভাবে ছিন রাজ্যের প্রতিরোধ করার প্রস্তাব করেছেন । মিলিতভাবে ছিন রাজ্যের প্রতিরোধ করা ছু রাজ্যের প্রতি ছিন রাজ্যের দৌরাত্ম্যেরও প্রতিশোধ হবে । কিন্তু আপনি ছিন রাজ্যের ভয়ে এই প্রস্তাব গ্রহণ করতে দ্বিধা করছেন । আপনি কি রাজা হওয়ার যোগ্য ? আপনি এর জন্য লজ্জা বোধ করেন না ?

  মাও সুইয়ের কথা শুনে ছু রাজা লজ্জায় একটি কথাও বলেন নি । 

  মাও সুই আবার ছু রাজাকে জিজ্ঞেস করেন , মাননীয় রাজা , আপনি চাও রাজ্যের সঙ্গে মিলিতভাবে ছিন রাজ্যের বিরোধিতা করতে রাজী আছেন ? 

  ছু রাজাবললেন , আমি রাজি আছি ।

  ছু রাজ্যের সঙ্গে মিলিতভাবে ছিন রাজ্য প্রতিরোধের চুক্তি স্বাক্ষর করার পর ফিন ইউয়েন চুন ও তার বিশজন সহকারী রাজধানী হানতান ফিরে গিলেন।চাও রাজ্যের রাজাকে দেখে ফিন ইউয়েন চুন বললেন ,আমি ছু রাজ্যেরসাহায্য পাওয়ার দায়িত্ব নিয়ে ছু রাজ্য গিয়েছি । মাও সুইয়ের বক্তব্যের কল্যানেই আমাদের চাও রাজ্যের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হলো। তার বক্তব্য সত্যিই দশ লক্ষ সৈনিকের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । 

  তিন দিন পর মাও সুইয়ের নাম চাও রাজ্যের রাজধানী হানতানে ছড়িয়ে পড়লো । প্রবাদ ‘ মাও সুই চি চিয়েন ’ –এর অর্থহলোদক্ষ ব্যক্তির অন্য লোককে নিজেকে সুপারিশ করার সাহস আছে ।