লোইয়ানে কাগজের দাম বাড়ার কাহিনী


       প্রাচীন চীনে মুদ্রণ শিল্প অনুন্নত ছিল । ভালো ভালো কবিতা ও প্রবন্ধগুলো পাঠকদেরহাতে লিখেপ্রচলিত হতো । চীনের ইতিহাসেচুওসি নামে একজন সাহিত্যিক ছিলেন , তিনি একটি ভালো প্রবন্ধ লিখেছিলেন। প্রবন্ধটি পড়ার জন্য সমাজের অভিজাতও ধনী ব্যক্তিরা কাগজ কিনে প্রবন্ধটি হাতে লিখে পড়েন , ফলে বাজারে কাগজের দাম বেড়েছিলো । 

   এই ভালো প্রবন্ধের লেখকের নাম চোসি । খৃষ্টীয় ২৫০ সালে তার জন্ম।তিনি চীনের চিন রাজবংশের একজন সাহিত্যিক । চোসি দেখতে সুদর্শন নয় , তাকে বুদ্ধিমানও বলা যায় না । তিনি বাদ্যযন্ত্র ও হস্তাক্ষর শিখেছিলেন , কিন্তু ভালো ফল পান নি । পরে বাবার উত্সাহে চোসি অধ্যবসায়ের সঙ্গে প্রচুর বই পড়ে ভালো ভালো প্রবন্ধ লিখার দক্ষতা অর্জন করেন । 

  চোসির বয়স যখন ২০ বছর ,তার ছোট বোন চোফেন নির্বাচিত হয়ে রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করেন , এই কারণে চোসি ও তার পরিবার পরিজন রাজধানী লোইয়ানে স্থানান্তরিত হন । রাজধানীতে চোসি সমাজের বিখ্যাত পন্ডিত ও সাহিত্যিকদের সঙ্গে যোগাযোগের বেশি সুযোগ পান , এতে তার সাহিত্যিক রচনার মানের লক্ষনীয় উন্নতি হয় । এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে চোসি ‘ সান তু ফু ’ নামে একটি বিখ্যাত প্রবন্ধ লিখেছেন । 

  ‘ সান তু ফু ’ নামে প্রবন্ধটি লিখতে চোসির দশ বছর সময় লেগেছিলো। ত্রিশ বছর বয়সে চোসি এই প্রবন্ধ লেখার কাজ সম্পন্ন করেন । তখনকার বিখ্যাত সাহিত্যিক হুয়ান ফু মি এই প্রবন্ধের ভুমিকা আর সাহিত্যিক চান চাই প্রবন্ধের টিকা লিখেছেন । এই প্রবন্ধ প্রথমে সাহিত্য মহলে প্রচার হয় , পরে স্থানীয় অভিজাত ও ধনী ব্যক্তিরাও অনুসরণ করে এই প্রবন্ধ হাতে লিখে পড়তে শুরু করেন । ফলে রাজধানী লোইয়ানের কাগজ দোকানে কাগজের বিক্রিদ্রুত বাড়ে এবং কাগজের দামও অনবরত বেড়েছে । এটাই লোইয়ানের কাগজের দাম বাড়ার কাহিনী । 

  অনেকেই জানতে চায় বিখ্যাত প্রবন্ধ ‘ সান তু ফুর ’ বৈশিষ্ট্য কি ? ‘ ফু ’ হচ্ছে সেই আমলে প্রচলিত এক সাহিত্যিক রুপ । এই ধরনের সাহিত্যিকরচনায় বাক্যগুলো কবিতার মতো সংক্ষিপ্ত , ভাষা সুন্দর, এতে প্রচুর প্রবাদ ব্যবহার করা হয় । ‘ সান তুর ’ অর্থ চিন রাজবংশের আগের তিনটি ছোট রাজ্য সু , উ ও উয়ের রাজধানী । ‘ সান তু ফু ’ নামক এই প্রবন্ধে ‘ সু তু ফু ’ , ‘ উ তু ফু ’ আর ‘ ওয়েই তু ফু ’ তিনটি ভাগ আছে । এই তিন ভাগেই এই তিনটি রাজ্যের রাজনৈতিক ব্যবস্থা , প্রাকৃতিক সম্পদ ও সামাজিক অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে । এই প্রবন্ধ লেখার আগে চোসিঐতিহাসিক ঘটনাগুলোর সত্যতা প্রমানের জন্য তদন্ত চালিয়েছেন । তদন্তের কাজসময়সাপেক্ষ । তথ্য যোগাড়ের কাজ সম্পন্ন করার পর চোসি তার বাসার প্রতিটি ঘরে কাগজ ও কলম রাখেন , যাতে যে কোনো সময় এই প্রবন্ধ লিখতে পারেন। এই ভাবে চোসি দীর্ঘ দশ বছর সময় নিয়ে এই প্রবন্ধ লেখার কাজ সম্পন্ন করেন । 

  ‘ সান তু ফু ’ নামে প্রবন্ধে চীনের তিন রাজ্য আমলের সামাজিক অবস্থা বর্না করা হয়েছে এবং দেশের একত্রিকরণ সমস্যাসহসবার স্বার্থজড়িত সমস্যাগুলোব্যাখ্যা করা হয়েছে , তাই এই প্রবন্ধ ব্যাপক প্রশংসা পেয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো । 

  আসলে চোসি শুধুএকটি প্রবন্ধ লেখার জন্য বিখ্যাত হন নি । ‘ সান তু ফু ’ ছাড়া তিনি অনেক কবিতা ও প্রবন্ধ লিখেছিলেন । এ গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত কবিতার নাম ‘ইয়োন সি ’ । এই সব কবিতায় চো সিসহজভাষায়দেশের ভবিষ্যত আর জনগণের কষ্টকর জীবনের জন্য নিজের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ।